মানব ইতিহাসের সর্ববৃহৎ সমাবেশটি ২০১৩ সালে ঘটেছিল – কুম্ভমেলা উৎসব যা প্রতি ১২ বছর পর একবার পালন করা হয়। ৫৫ দিনের এই উৎসব পালনের জন্য প্রায় ১০ কোটি মানুষ গঙ্গা নদীর তীরে এলাহাবাদ শহরে অবতরণ করেছিল, কেবল/শুধু উদ্বোধনের দিন ১ কোটি মানুষ গঙ্গায় স্নান করেছিল।
এন.ডি.টি.ভি অনুযায়ী আয়োজকগণ ১৫ই ফেব্রুয়ারী, ২০১৩ শেষ স্নান যাত্রার দিন ২ কোটি মানুষের স্নানের অনুমান করেছেন । এই কুম্ভ মেলার সংখ্যাগুলি মক্কায় যে প্র্তিবছর হ্জ তীর্থস্থানগুলি মুসলমানরা তৈরি করে তার – একটি `মাত্র’ 2-3 মিলিয়ন।
আমি এলাহাবাদ এসেছি আর কল্পনা করতে পারছি না কিভাবে এতো লক্ষ্যাধিক লোক একসাথে জড়ো হয়েছে অন্য কোন কার্য স্তব্ধ না হয়ে। বিবসি রিপোর্ট অনুযায়ী প্রত্যেক দিনের কার্যের জন্য যেমন টয়লেট ও ডাক্তার জোগাড়ের জন্য বিপুল পরিশ্রম করতে হয়েছে। এই কুম্ভ মেলা, মুসলিমদের বাত্সরিক মক্কাতে হজ যাত্রা ২০১২ সালে যা ছিল ৩.১ মিলিয়ন লোক তাকেও খর্ব করে দিয়েছে। তাহলে কেন ১০০ মিলিয়ন লোক ১২০ বিলিয়ন অর্থ খরচ করে এই গঙ্গা নদীতে স্নানের জন্য আসে? নেপাল থেকে আসা একজন ভক্ত বিবিসিকে বলেছে যে
“আমার পাপ ধোয়ার জন্য এসেছি”
রিউটার্স রিপোর্ট অনুযায়ী-
“এই জীবন ও গত জীবনে সমস্ত পাপ ধুয়েছি” ৭৭ বছরের উল্লঙ্গ ঠান্ডায় কাঁপতে থাকা ভবঘুরে তপস্বী স্বামী শংকরানন্দ সরস্বতী বলেছিলেন।
এনডিটিভি আমাদের বলে যে-
ভক্তরা, যারা বিশ্বাস করে যে পবিত্র জলে ডুব দিলে তাদের পাপ ক্ষমা হয়, বিগত ২০০১ সালের অনুষ্ঠানে আমি দেখেছিলাম তখন বিবিসি-র একটি সাক্ষাত্কারে মোহন শর্মা একজন তীর্থযাত্রী বলেছিলেন যে, “যে পাপ আমরা করেছি তা এখানে ধুয়ে যায়”।
সার্ব্বজনীনভাবে মানুষের “পাপের” ধারণা
অন্যভাবে, বহু লক্ষাধিক মানুষ অর্থ ব্যয় করেন, ভীড়ে ঠাসা ট্রেনে যাত্রা করেন, ঘিন্জি পরিবেশকে সহ্য করেন এবং নিজেদের পাপ ধৌত করার জন্য গঙ্গা নদীতে স্নান করেন। এই ভক্তরা কি করছেন তা দেখবার আগে, আসুন আমরা লক্ষ্য করি তারা তাদের জীবনের সমস্যা পাপ কে উপলদ্ধি করতে পারছেন।
শ্রী সত্য সাঁই বাবা এবং ‘সঠিক’ ও ‘ভুল’
আসুন হিন্দু গুরু শ্রী সত্য সাঁই বাবার শিক্ষা থেকে ইহা দেখি, যার উপদেশটি আমি মনে করেছিলাম প্রশংসনীয়। নিম্নে সেগুলি আমি অনুলিপি করছি। এগুলি পড়ার সময় নিজেকে প্রশ্ন করুন “এই উত্তম নৈতিক উপদেশগুলি কি বাঁচার জন্য? আমার কি এগুলি দ্বারা বাঁচা উচিত”?
“এবং ধর্ম (আমাদের নৈতিক দায়িত্ব) কী? আপনি যা প্রচার করেন তা অনুশীলন করা, আপনি যেমন বলছেন তা করতে হবে, অনুধাবন এবং অনুশীলনকে লাইনে রেখে। পুণ্য অর্জন করা, ধার্মিকভাবে আকাঙ্ক্ষা; ঈশ্বরের ভয়ে বেঁচে থাকা, ঈশ্বরের কাছে পৌঁছানোর জন্য বেঁচে থাকা: এটাই ধর্ম” সত্য সাঁই কথা ৪, পৃষ্ঠা ৩৩৯
“আপনার সঠিক দায়িত্ব কি?……
- প্রথমে আপনার পিতামাতাকে ভালবাসা এবং শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার সাথে স্নেহ/পরিচর্যা করা।
- দ্বিতীয়ত, সত্য কথা বলা এবং সদর্থক আচরণ করা।
- তৃতীয়্ত, যখনই আপনার কাছে কয়েক মুহুর্তের অবকাশ থাকবে, তখনই আপনার মনে প্রভুর নাম পুনরাবৃত্তি করা।
- চতুর্থতঃ, কখনও অন্যের সম্পর্কে খারাপ কথা না বলা অথবা অন্যের মধ্যে ত্রুটিগুলি আবিষ্কার/খোঁজার চেষ্টা না করা।
- এবং অবশেষে, অন্যকে কোনওভাবে ব্যথার কারণ হবেন না” সত্য সাঁই কথা ৪, পৃষ্ঠা ৩৪৮-৩৪৯
“যে ব্যক্তি নিজের অহংকারকে বশীভূত করে, তার স্বার্থপর আকাঙ্ক্ষাগুলি জয় করে, তার পাশবিক অনুভূতি এবং আবেগগুলি ধ্বংস করে এবং শরীরকে নিজের হিসাবে গণ্য করার প্রাকৃতিক প্রবণতা ছেড়ে দেয়, সে অবশ্যই ধর্মের পথে রয়েছে” ধর্ম ভীরু, পৃষ্ঠা ৪
আমি এইগুলি পড়ার সময় আমি দেখতে পেলাম যেগুলি আমার বেঁচে থাকার ধর্মানুশাসন ছিল – একটি সাধারণ নৈতিক দায়িত্ব হিসাবে। আপনি কি একমত নন? তবে আপনি কি সত্যই তাদের দ্বারা জীবনযাপন করছেন? আপনি (এবং আমি) পরিমাপ করেছেন? এবং যখন আমরা এইরকম ভাল শিক্ষাগুলি করতে ব্যর্থ হই বা না মেনে চলি তখন কী ঘটে? শ্রী সত্য সাঁইবাবা নিম্নলিখিত উপায়ে এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন।
“সাধারনতঃ আমি মিষ্টি কথা বলি, কিন্তু শৃঙ্খলার এই বিষয়ে, আমি কোনও ছাড় দেই না, আমি কঠোর আনুগত্যের জন্য জোর করি। আপনার স্তর অনুসারে আমি কঠোরতা হ্রাস করব না”। – সত্য সাই কথা ২, পৃষ্ঠা ১৮৬
কঠোরতার যে স্তর তা ঠিক থাকবে – যদি আপনি প্রয়োজনীয়তাগুলি পূরণ করতে পারেন। কিন্তু আপনি যদি প্রয়োজনীয়তাগুলি পূরণ করতে না পারেন? এখান থেকেই ‘পাপের’ ধারনা আসে। যখন আমি নৈতিক লক্ষ্যটি হারিয়ে ফেলি অথবা আমি জানি যে আমার যা করা উচিত তা করতে ব্যর্থ হলে আমি ‘পাপ’ করি এবং আমি একজন পাপী। কেউ পছন্দ করে না সেটা শুনতে যে তারা পাপী – এটি এমন কিছু যা আমাদেরকে অস্বস্তিকর এবং অপরাধী করে তোলে, এবং বাস্তবে আমরা সমস্ত কিছু চিন্তাভাবনা দূরে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে অনেক মানসিক শক্তি ব্যয় করি। সম্ভবত আমরা শ্রী সত্য সাই বাবাকে বাদ দিয়ে অন্য কোন শিক্ষকের কাছে গিয়ে দেখতে পারি, তবে তিনি যদি একজন ভাল শিক্ষক হন তবে তাঁর নৈতিক প্রজ্ঞাটি একই রকম এবং সমানভাবে কার্যকর হবে যা অনুশীলন করা উচিত।
বাইবেল (বেদ পুস্তকাম) বলে যে ধর্ম বা শিক্ষার স্তর নির্বিশেষে আমরা সকলেই পাপের এই বোধ অনুভব করি কারণ পাপের এই ধারণাটি আমাদের বিবেক থেকেই আসে। বেদ পুস্তকাম এভাবে প্রকাশ করেছেন।
প্রকৃতপক্ষে, পরজাতীয়রা (যেমন অ-ইহুদী), যাদের আইন নেই (বাইবেলের দশ আজ্ঞা) যখন আইন দ্বারা প্রয়োজনীয় প্রকৃতির জিনিসগুলি করে, আইন না থাকলেও তারা নিজেরাই একটি আইন। তারা দেখায় যে আইনটির প্রয়োজনীয়তাগুলি তাদের অন্তরে লেখা আছে, তাদের বিবেকগুলিও সাক্ষ্য দেয় এবং তাদের চিন্তাভাবনাগুলি কখনও কখনও তাদেরকে দোষী করে এবং অন্যান্য সময়ে এমনকি তাদের রক্ষাও করে।
রোমীয় ২:১৪-১৫
এইজন্য লক্ষ লক্ষ তীর্থযাত্রী তাদের পাপ অনুভব করে। এটি ঠিক যেমন বেদ পুস্তকে (বাইবেল) বলে। সকলেই পাপ করেছে এবং ঈশ্বরের গৌরব বিহীন হয়েছে
রোমীয় ৩:২৩
প্রতাশন মন্ত্রে পাপ প্রকাশ করেছেন
এই ধারণাটি প্রসিদ্ধ প্রাতস্নানা (বা প্রতাশন) মন্ত্রে প্রকাশিত হয়েছে যা আমি নীচে পুনরুউক্তি করেছি
আমি একজন পাপী। আমি পাপের ফলস্বরুপ। আমি পাপে জন্মগ্রহন করেছি। আমার আত্মা পাপের অধীনে। হে ঈশ্বর যাহার সুন্দর চোখ রয়েছে, আমায় রক্ষা করুন, হে বলিদানের ঈশ্বর।
আপনি কি এই প্রার্থনাটির বিবৃতি এবং অনুরোধের সাথে পরিচিত না?
ঈশ্বরের বাক্য/ সুসমাচার ‘আমাদের পাপকে ধৌত করে’
সুসমাচার একই সমস্যার সমাধান করে কুম্ভমেলার তীর্থযাত্রী এবং প্রাতস্নানা ভক্ত তাদের পাপ ধুয়ে ফেলতে চান। যারা তাদের ‘পোশাক’ ধুয়ে ফেলেন (নৈতিক ক্রিয়া) তাদের জন্য একটি আশীর্বাদের প্রতিশ্রুতি দেয়। আশীর্বাদ স্বর্গে এক অমরত্ব (জীবনের বৃক্ষ) (‘শহর’)।
ধন্য তারা, যারা তাদের পোশাক ধুয়ে ফেলে, যেন তারা জীবনবৃক্ষের অধিকারী হতে পারে এবং দ্বার দিয়ে শহরে প্রবেশ করতে পারে।
প্রকাশিত বাক্য ২২:১৪
কুম্ভমেলা উত্সব আমাদের পাপের বাস্তবতার “খারাপ সংবাদ” প্রদর্শন করে, এবং এভাবে আমাদের শুচি হওয়ার জন্য আমাদেরকে জাগ্রত করে । এমনকি যদি সুসমাচার থেকে এই প্রতিশ্রুতিটি সত্যই থাকে তবে কেবলমাত্র একটি দূরবর্তী সম্ভাবনা উপস্থিত আছে তবে এটি এত গুরুত্বপুর্ণ যে, অবশ্যই এটিকে আরও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করা সার্থক। এই ওয়েবসাইটটির উদ্দেশ্য হল এটি যেন অনুসন্ধান করতে পারেন।
আপনি যদি অনন্তজীবনে আগ্রহী হন, যদি আপনি পাপ থেকে মুক্তি চান তবে যে প্রজাপতি ঈশ্বর বিশ্বকে সৃষ্টি করেছেন এবং আমাদের জন্য কিভাবে যোগান দিয়েছিলেন সে সম্পর্কে কি প্রকাশিত হয়েছে তা পর্যবেক্ষণ করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে এবং আমরা স্বর্গ অর্জন করতে পারি। এবং বেদ আমাদের এই শিক্ষা দেয়। রিগ বেদে পুরুষসুক্ত রয়েছে যা প্রজাপতির অবতার এবং তিনি আমাদের জন্য যে আত্ম্ত্যাগ স্বীকার করেছেন তা বর্ণনা করে। বাইবেল (বেদ পুস্তকাম) আরও অনেক বিস্তারিত ভাবে বর্ণনা করেছে যে কীভাবে এই পরিকল্পনাটি মানব ইতিহাসে অবতীর্ণ হয়েছিল, প্রভু যীশু সত্সংয়ের জীবনও মৃত্যুর মধ্য দিয়ে (যীশুখ্রীষ্ট)। আপনার পাপ ধুয়ে ফেলতে পারেন, তা দেখার জন্য এই পরিকল্পনাটি তদন্ত করতে এবং বুঝতে কেন আপনি সময় নিচ্ছেন না।