বিভিন্ন রচনা সমূহ দক্ষ যজ্ঞের কাহিনীর বিবরণ দেয় তবে এর সারাংশ হ’ল যে শিব আদি পরাশক্তির এক অবতার দক্ষয়ানা/সতীকে বিবাহ করেছিলেন, যাঁকে শক্তির শ্রদ্ধালুদের দ্বারা বিশুদ্ধ আদ্য শক্তি রূপে বিবেচনা করা হয় I (আদি পরাশক্তিকে আবারও পরম শক্তি, আদি শক্তি, মহাশক্তি, মহাদেবী, মহাগৌরী, মহাকালী, বা সত্যম শক্তি হিসাবে জানা যায়) I
দক্ষয়ানার পিতা, দক্ষ শিবের অত্যধিক তপস্যার কারণে শিবের সঙ্গে তার বিবাহকে অপচ্ছন্দ করেছিলেন I তাই দক্ষ যখন একটি যজ্ঞ রীতির অনুষ্ঠান করলেন তিনি কেবল তার কন্যা সতী এবং শিবকে ছাড়া সমগ্র পরিবারকে আমন্ত্রণ করলেন I তবে সতী, যজ্ঞ অনুষ্ঠানের কথা শুনে যেভাবেই হোক গেলেন I তার উপস্থিতির কারণে তার পিতা রাগান্বিত হলেন এবং ক্রমাগত তার উপরে চীৎকার করে চলে যেতে বললেন I ফলস্বরূপ এটি সতীকে ক্রুদ্ধ করল যাতে তিনি তার আদি পরাশক্তি রূপে ফিরে এলেন এবং তার নশ্বর দেহ রূপ সতীকে যজ্ঞের আগুনে জ্বালিয়ে দিলেন এবং এটি জ্বলন্ত শিখায় মেঝেতে ধ্বসে পড়ল I
দক্ষ যজ্ঞে ‘ক্ষতির’ অন্বেষণ
সতীর আত্মাহুতি শিবকে শোকে আঘাত করল I তিনি তার প্রিয় সতীকে হারালেন I তাই শিব এক ভয়ংকর “তান্ডব” লীলা করলেন, বা বিনাশের নৃত্য, এবং যত শিব নৃত্য করলেন তত বেশি বিনাশ ঘটল I তার তান্ডব পরবর্তী দিনগুলোতে ব্যাপক ধ্বংস এবং মৃত্যু ঘটাল I তার দুঃখ এবং ক্রোধে, শিব সতীর দেহকে বহন করলেন এবং এটিকে নিয়ে বিশ্বব্রহ্মান্ডের চতুর্দিকে ঘুরে বেড়ালেন I বিষ্ণু দেহটিকে ৫১টি শরীরের অংশে কাটলেন যা শক্তিপীঠের পবিত্র স্থলে পরিণত হতে পৃথিবীতে পড়ল I এই ৫১টি পবিত্র স্থানগুলোকে আজকের দিনে বিভিন্ন শক্তি মন্দির রূপে স্মরণ করা হয়, সতীকে হারিয়ে শিব যে ক্ষতি অনুভব করেছিলেন I
দক্ষ যজ্ঞে যখন তারা একে অপরকে মৃত্যুর কাছে হারায় আমরা দেব দেবীদের ক্ষতির প্রতি কৃতজ্ঞতা বোধ করি I তবে আমরা সকলে মৃত্যুর কাছে এক প্রিয়জনের হারানোর মধ্য দিয়ে যাই I আপনি তখন কি করেন যখন আপনার ভালবাসার কাউকে হারান? আপনি কি হতাশায় হাল ছেড়ে দেন? ক্রোধে ফেটে পড়েন? তাদেরকে কি ফিরে পেতে চেষ্টা করেন?
ঈশ্বরের সম্বন্ধে কি? তিনি কি যত্ন নেন বা এমনকি লক্ষ্য করেন যখন আমাদের মধ্যে কেউ তাঁর রাজ্যে হারিয়ে যায়?
যীশু ‘হারানোর’ চশমার মাধ্যমে শিক্ষা দেন
যীশু বিভিন্ন দৃষ্টান্ত বলেছিলেন আমাদের দেখাতে কিভাবে ঈশ্বর অনুভব করেন এবং তিনি কি করেন যখন তিনি আমাদের মধ্যে এমনকি একজনকেও হারান I
তাঁর শিক্ষার শক্তিকে অনুভব করতে আমাদের অবশ্যই স্মরণ করতে হবে যে পবিত্র লোকেরা প্রায়শই তাদের থেকে একদা থাকেন যারা পবিত্র নয় যাতে তারা অশুচি না হয়ে যায় I যীশুর সময়ে ধর্ম ব্যবস্থার শিক্ষার এটাই সত্য ছিল I তবে যীশু শিক্ষা দিয়েছিলেন যে আমাদের পবিত্রতা এবং পরিচ্ছনতা আমাদের অন্তরের একটি প্রধান বিষয়, এবং সক্রিয়ভাবে তাদের সঙ্গে থাকতে চেয়েছিলেন যারা রীতিগতভাবে শুদ্ধ ছিল না I এখানে সুসমাচার সেইভাবে যারা অশুচি এবং ধর্মীয় শিক্ষকদের প্রতিক্রিয়া উভয়ের সাথে তার সম্পর্ককে লিপিবদ্ধ করে I
লুক ১৫:১-২১ আর কর আদায়কারী ও পাপী লোকেরা সবাই যীশুর কথা শোনার জন্য তাঁর কাছে আসছিল।
২ তাতে ফরীশী ও ধর্মশিক্ষকেরা অভিযোগ করে বলতে লাগল, “এ ব্যক্তি পাপীদের গ্রহণ করে, ও তাদের সাথে খাওয়া দাওয়া ও মেলামেশা করে।”
কেন যীশু পাপীদের স্বাগত জানান এবং তাদের সঙ্গে ভোজন করেন? তিনি কি পাপ উপভোগ করতেন? যীশু তার সমালোচকদের তিনটি দৃষ্টান্ত বলে উত্তর দিয়েছিলেন I
হারানো মেষের দৃষ্টান্ত
হয়৷লুক ১৫:৩-৭৩ তখন তিনি তাদের এই উপমা বললেন।
৪ “তোমাদের মধ্যে কোনো এক ব্যক্তি যার একশো মেষ আছে, ও তার মধ্যে থেকে একটি হারিয়ে যায়, তবে সে কি অন্য নিরানব্বইটাকে ছেড়ে দিয়ে সেই একটাকে খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত তার খোঁজ করতে যায় না?
৫ আর সেটিকে খুঁজে পেলে সে খুশী হয়ে তাকে কাঁধে তুলে নেয়।
৬ পরে ঘরে এসে বন্ধু বান্ধব ও প্রতিবেশীদের ডেকে বলে, আমার সঙ্গে আনন্দ কর, কারণ আমার যে মেষটি হারিয়ে গিয়েছিল, তা আমি খুঁজে পেয়েছি।”
৭ আমি তোমাদের বলছি, “ঠিক সেইভাবে একজন পাপী মন ফেরালে স্বর্গে আনন্দ হবে; যারা পাপ থেকে মন ফেরান দরকার বলে মনে করে না, এমন নিরানব্বই জন ধার্ম্মিকের জন্য তত আনন্দ হবে না।”
এই গল্পের মধ্যে যীশু আমাদের মেষপালক হিসাবে তার সাথে মেষের তুলনা করেছেন I যে কোনো মেষপালকের তার হারানো মেষ খোঁজার মতন, তিনি হারানো লোকদের খুজতে স্বয়ং বার হন I হয়ত কোনো পাপ – এমনকি গোপন একটি – আপনাকে ফাঁদে ফেলেছে, আপনাকে হারানো অনুভব করাচ্ছে I বা হয়ত আপনার জীবন, এর সমস্ত সমস্যার সাথে, এতটাই বিভ্রান্তিকর যে আপনি হারিয়ে যাওয়া অনুভব করছেন I এ গল্প আশা দেয় কারণ আপনি জানতে পারেন যে যীশু আপনাকে পেতে অন্বেষণ করছেন I হানি আপনাকে ধ্বংস করার আগেই তিনি আপনাকে উদ্ধার করতে চান I তিনি এইরকম করেন কারণ তিনি ক্ষতি অনুভব করেন যখন আপনি হারিয়ে যান I
তারপরে তিনি একটি দ্বিতীয় গল্প বললেন:
হারানো মুদ্রার দৃষ্টান্ত
লুক ১৫:৮-১০৮ অথবা কোনো এক স্ত্রীলোক, যার দশটি সিকি আছে, সে যদি একটি হারিয়ে ফেলে, তবে প্রদীপ জ্বালিয়ে ঘর ঝাঁট দিয়ে যে পর্যন্ত তা না পায়, ভালো করে খুঁজে দেখে না?
৯ আর সেটি খুঁজে পেলে পর সে বন্ধু বান্ধব ও প্রতিবেশীদের ডেকে বলে, আমার সঙ্গে আনন্দ কর, কারণ আমি যে সিকিটি হারিয়ে ফেলেছিলাম, তা খুঁজে পেয়েছি।
১০ ঠিক সেইভাবে, আমি তোমাদের বলছি, “একজন পাপী মন ফেরালে ঈশ্বরের দূতদের উপস্থিতিতে আনন্দ হয়।
এই গল্পের মধ্যে আমরা মূল্যবান তবে হারানো মুদ্রা আর তিনি এমন একজন যিনি এটি খুঁজছেন I যদিও মুদ্রা হারিয়ে গেছে সে ‘জানে’ না যে সে হারিয়ে গেছে I এ হারানোকে অনুভব করে না I এটি স্ত্রী লোকটি যে হারানোর জ্ঞানকে অনুভব করে আর তাই সে সমস্ত কিছুর নিচে এবং পেছনে দেখে অত্যন্ত সতর্কভাবে বাড়িটিতে ঝাড়ু দেয়, যতক্ষণ না মূল্যবান মুদ্রাটিকে খুঁজে পায় সে সন্তুষ্ট হয় না I হয়ত আপনি ‘হারানো’ অনুভব করেন না I কিতু সত্য হ’ল যে আমরা সবাই, আমরা অনুভব করি কিম্বা না করি I যীশুর দৃষ্টিতে আপনি মূল্যবান তবে হারানো মুদ্রা এবং তিনি হারানো অনুভব করেন আর তাই তিনি খোঁজেন এবং আপনাকে পেতে কার্য করেন I
তার তৃতীয় গল্প সর্বাধিক সুপরিচিতI
হারানো পুত্রের দৃষ্টান্ত
লুক ১৫:১১-৩২১১ আর তিনি বললেন, “এক ব্যক্তির দুটি ছেলে ছিল;”
১২ ছোটো ছেলেটি তার বাবাকে বলল, বাবা, টাকা ও সম্পত্তির যে অংশ আমার ভাগে পড়ে, তা আমাকে দিয়ে দাও। তাতে তিনি তাদের মধ্যে সম্পত্তি ও টাকা ভাগ করে দিলেন।
১৩ কিছুদিন পরে ছোটো ছেলেটি সব কিছু নিয়ে দূর দেশে চলে গেল, আর সেখানে সে বেনিয়মে জীবন কাটিয়ে নিজের সব টাকা পয়সা উড়িয়ে দিল।
১৪ সে সব কিছু খরচ করে ফেললে পর সেই দেশে ভীষণ দূর্ভিক্ষ হল, তাতে সে কষ্টে পড়তে লাগল।
১৫ তখন সে সেই দেশের একজন লোকের কাজ নিল; আর সে তাকে শূকর চরানোর জন্য নিজের জমিতে পাঠিয়ে দিল;
১৬ তখন, শূকরে যে শুঁটি খেত, সেই শুঁটি সে খেতে ইচ্ছা করলো, কারণ কেউই তাকে খাবার খেতে দেওয়ার মত ছিল না।
১৭ কিন্তু সে নিজের ভুল বুঝতে পেরে বলল, আমার বাবার কত চাকরেরা অনেক অনেক খাবার পাচ্ছে, কিন্তু আমি এখানে খিদেতে মরে যাচ্ছি।
১৮ আমি উঠে আমার বাবার কাছে গিয়ে বলব, বাবা, আমি তোমার ও স্বর্গের বিরুদ্ধে পাপ করেছি;
১৯ আমি আর তোমার ছেলে নামের যোগ্য নই; তোমার একজন চাকরের মত আমাকে রাখ।
২০ পরে সে উঠে তার বাবার কাছে আসল। সে দূরে থাকতেই তাকে দেখেই তার বাবার খুব করুণা হল, আর দৌড়িয়ে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে চুমু দিতে থাকলেন।
২১ তখন ছেলেটি বলল, বাবা, আমি তোমার ও স্বর্গরাজ্যের বিরুদ্ধে পাপ করেছি, আমি আর তোমার ছেলে নামের যোগ্য নই।
২২ কিন্তু তার বাবা নিজের চাকরদেরকে বললেন, তাড়াতাড়ি করে সবচেয়ে ভাল জামাটি নিয়ে এস, আর একে পরিয়ে দাও এবং এর হাতে আংটি ও পায়ে জুতো দাও;
২৩ আর মোটাসোটা বাছুরটি এনে মার; আমরা খাওয়া দাওয়া করে আনন্দ করি;
২৪ কারণ আমার এই ছেলেটি মারা গিয়েছিল, কিন্তু এখন বাঁচলো; সে হারিয়ে গিয়েছিল, কিন্তু এখন পাওয়া গেল। তাতে তারা আমোদ প্রমোদ করতে লাগল।
২৫ তখন তাঁর বড় ছেলেটি মাঠে ছিল; পরে সে আসতে আসতে যখন বাড়ির কাছে পৌঁছালো, তখন বাজনা ও নাচের শব্দ শুনতে পেল।
২৬ আর সে একজন চাকরকে কাছে ডেকে জিজ্ঞাসা করল, এ সব কি?
২৭ সে তাকে বলল, তোমার ভাই এসেছে এবং তোমার বাবা মোটাসোটা বাছুরটি মেরেছেন, কারণ তিনি তাকে সুস্থ অবস্থায় ফিরে পেয়েছেন।
২৮ তাতে সে রেগে গেল, ভিতরে যেতে চাইল না; তখন তার বাবা বাইরে এসে সাধাসাধি করতে লাগলেন।
২৯ কিন্তু সে তার বাবাকে বলল, দেখ, এত বছর ধরে আমি তোমার সেবাযত্ন করে আসছি, কখনও তোমার আদেশ অমান্য করিনি, তবুও আমার বন্ধুদের সাথে আমোদ প্রমোদ করবার জন্য তুমি কখনও একটি ছাগলের বাচ্চাও দাওনি;
৩০ কিন্তু তোমার এই ছেলে যে, বেশ্যাদের সঙ্গে তোমার টাকা পয়সা নষ্ট করেছে, সে যখন আসল, তারই জন্য মোটাসোটা বাছুরটি মারলে।
৩১ তিনি তাকে বললেন, “বাবা, তুমি সবদিন আমার সঙ্গে আছ, আর যা কিছু আমার, সবই তোমার।
৩২ কিন্তু আমাদের আমোদ প্রমোদ ও আনন্দ করা উচিত, কারণ তোমার এই ভাই মারা গিয়েছিল এবং এখন বাঁচলো; হারিয়ে গিয়েছিল, এখন পাওয়া গেল।”
এই গল্পের মধ্যে হয় আমরা জ্যেষ্ঠ, ধার্মিক পুত্র, বা কনিষ্ঠ পুত্র যে অনেক দুরে চলে যায় I যদিও জ্যেষ্ঠ পুত্র সমস্ত ধর্মীয় পূজা পাঠ পালন করে তবুও সে কখনও তার পিতার প্রেমময় হৃদয়কে বুঝতে পারে না I কনিষ্ঠ পুত্র ভাবল সে বাড়ি ছেড়ে স্বাধীনতা লাভ করছে তবে নিজেকে উপবাস এবং অপমানের মধ্যে পরিবেষ্টিত দেখল I তখন ‘তার জ্ঞান ফিরে এলো’, উপলব্ধি করে সে তার বাড়ি ফিরে যেতে পারত I ফিরে যাওয়া প্রকাশ করবে যে তার প্রথম স্থানটি ছাড়া ভুল হয়েছিল, এবং এটি স্বীকার করতে নম্রতার প্রয়োজন হবে I এটি চিত্রিত করে ‘অনুতাপ’ বলতে কি বোঝায় যাকে স্বামী যোহন শিখিয়েছিলেন I
যখন সে তার অহংকার গলাধকরণ করল এবং তার পিতার কাছে ফিরে এল সে তার প্রেম এবং তার কল্পনাতীত অনেক অধিক স্বীকৃতি দেখল I স্যান্ডেল, পোশাক, আংটি, ভোজ, আশির্বাদ, এবং গ্রহণযোগ্যতা – এই সমস্তই ভালবাসার স্বাগত জানানোর কথা বলে I এটি আমাদের বুঝতে সাহায্য করে যে ঈশ্বর আমাদের ভালবাসেন ততটা, আমাদের চান তার কাছে ফিরে যাই I এর জন্য প্রয়োজন ‘অনুতাপ’ তবে আমরা যখন করি আমরা তাকে আমাদের গ্রহণ করতে প্রস্তুত দেখব I
মৃত্যু – দুর্গম ক্ষতি
দক্ষ যজ্ঞে আমরা দেখি যে এমনকি শিব এবং আদি পরাশক্তির শক্তি মৃত্যুর বিচ্ছিনতাকে পরাস্ত করতে পারে নি I সতীর ৫১ বিক্ষিপ্ত শরীরের অংশ এই ঘটনার স্বাক্ষ্য দেয় এমনকি আমাদের সময়েও I এটি চূড়ান্ত ‘হারানোকে’ চিত্রিত করে I এটি এই প্রকারের ‘হারানো’ যার থেকে যীশু আমাদের উদ্ধার করতে এসেছিলেন I আমরা এটিকে দেখি যেমন তিনি সেই চূড়ান্ত শত্রুর সম্মুখীন হলেন – মৃত্যু নিজেই I