যীশু, যেশু সৎসংগ, দেখালেন কিভাবে স্বর্গের নাগরিকদের একে অপরের সঙ্গে আচরণ করতে হয় I এছাড়াও তিনি লোকেদের অসুস্থতা এবং মন্দ আত্মা থেকে সুস্থ করার দ্বারা ‘স্বর্গ রাজ্যের’ এক পূর্বস্বাদ দিলেন I তাঁর রাজ্যের প্রকৃতিকে দেখাতে বাক্যের দ্বারা এই প্রকৃতিকে তিনি আজ্ঞা দিলেন I
এই রাজ্যকে সনাক্ত করতে আমরা বিভিন্ন পরিভাষা ব্যবহার করি I সম্ভবত খুব সাধারনভাবে স্বর্গ বা স্বর্গালোক I অন্যান্য পরিভাষাগুলো হ’ল বৈকুন্ঠ, দেবলোক , ব্রহ্মলোক, সত্যলোক, কৈলাশ, ব্রহ্মপুর, সত্যবাগিচা, বৈকুন্ঠলোক, বিষ্ণুলোক, পরমাম পদম, নিত্য বিভূতি, তিরুপ্পারামাপাধাম বা বৈকুন্ঠ সাগর I নানান ঐতিহ্যগুলো বিভিন্ন পরিভাষা ব্যবহার করে, বিভিন্ন দেবতাদের সঙ্গে সম্পর্কের উপরে জোর দিয়ে, তবে এই পার্থক্যগুলো মৌলিক নয় I তবে মূল কথাটি হল স্বর্গ একটি সুখী এবং শান্ত জায়গা যা এখানে জীবনের সাধারণ কষ্টভোগ এবং অজ্ঞতা থেকে মুক্ত রয়েছে, এবং যেখানে ঈশ্বরের সাথে একটি সম্পর্ককে উপলব্ধি করা হয় I বাইবেল স্বর্গের এই মৌলিক বিষয়গুলোকে এইভাবে সংক্ষিপ্তসার করে I
৪ আর তিনি তাহাদের সমস্ত নেত্রজল মুছাইয়া দিবেন; এবং মৃত্যু আর হইবে না; শোক বা আর্ত্তনাদ বা ব্যথাও আর হইবে না; কারণ প্রথম বিষয় সকল লুপ্ত হইল।
প্রকাশিত বাক্য ২১:৪
যীশু নিজেও স্বর্গের জন্য বিভিন্ন পরিভাষাকে ব্যবহার করেছেন I তিনি প্রায়শই স্বর্গকে ‘রাজ্যের’ সাথে সূচনা করেছেন (‘লোকের’ চেয়ে ‘রাজের’ কাছাকাছি)I এছাড়াও তিনি স্বর্গরাজ্যের সমার্থক শব্দে ‘স্বর্গ’ এবং ‘ঈশ্বরের রাজ্য’ ব্যবহার করেছিলেন I তবে অধিক গুরুত্ত্বপূর্ণরূপে, এছাড়াও স্বর্গের সম্বন্ধে আমাদের উপলব্ধি বাড়াতে তিনি সাধারণ, দৈনন্দিন গল্পগুলো ব্যবহার করতেন I স্বর্গকে ব্যাখ্যা করার জন্য তিনি মহা ভোজ বা পার্টির এক অনন্য দৃষ্টান্তকে ব্যবহার করেছিলেন I তার গল্পের মধ্যে সুপরিচিত বাক্যাংশ “অতিথি ঈশ্বর”(অতিথি দেব ভব) থেকে ‘আমরা ঈশ্বরের অতিথি’ বলে তিনি সংশোধন করেছেন I
স্বর্গের মহা ভোজের গল্প
স্বর্গে প্রবেশের আমন্ত্রণটি কতটা প্রশস্ত এবং কতদূর প্রশস্ত করে তা বোঝানোর জন্য যীশু এক মহা ভোজের (এক ভোজ উৎসব) শিক্ষা দিয়েছিলেন I তবে গল্পটি আমাদের অপেক্ষা অনুসারে এগোয় না I সুসমাচার বর্ণনা করে:
১৫ এই সকল কথা শুনিয়া, যাহারা বসিয়াছিল, তাহাদের মধ্যে এক ব্যক্তি তাঁহাকে কহিল, ধন্য সেই ব্যক্তি, যে ঈশ্বরের রাজ্যে ভোজন করিবে।
১৬ তিনি তাহাকে কহিলেন, কোন ব্যক্তি বড় এক ভোজ প্রস্তুত করিয়া অনেককে নিমন্ত্রণ করিলেন।
১৭পরে ভোজনের সময়ে আপন দাস দ্বারা নিমন্ত্রিতদিগকে বলিয়া পাঠাইলেন, আইস, এখন সকলই প্রস্তুত।
১৮ তখন তাহারা সকলেই একমত হইয়া ক্ষমা ভিক্ষা করিতে লাগিল। প্রথম জন তাহাকে কহিল, আমি একখানি ক্ষেত্র ক্রয় করিলাম, তাহা দেখিতে না গেলে নয়; বিনতি করি, আমাকে ছাড়িয়া দিতে হইবে।
১৯ আর এক জন কহিল, আমি পাঁচ যোড়া বলদ কিনিলাম, তাহাদের পরীক্ষা করিতে যাইতেছি; বিনতি করি, আমাকে ছাড়িয়া দিতে হইবে।
২০ আর এক জন কহিল, আমি বিবাহ করিলাম, এই জন্য যাইতে পারিতেছি না।
২১ পরে সে দাস আসিয়া তাহার প্রভুকে এই সমস্ত বৃত্তান্ত জানাইল। তখন সেই গৃহকর্ত্তা ক্রুদ্ধ হইয়া আপন দাসকে কহিলেন, শীঘ্র বাহির হইয়া নগরের পথে পথে ও গলিতে গলিতে যাও, দরিদ্র, নুলা, খঞ্জ ও অন্ধদিগকে এখানে আন।
২২ পরে সে দাস কহিল, প্রভু, আপনি যাহা আজ্ঞা করিয়াছিলেন, তাহা করা গেল, আর এখনও স্থান আছে।
২৩ তখন প্রভু দাসকে কহিলেন, বাহির হইয়া রাজপথে রাজপথে ও বেড়ায় বেড়ায় যাও, এবং আসিবার জন্য লোকদিগকে পীড়াপীড়ি কর, যেন আমার গৃহ পরিপূর্ণ হয়।
২৪কেননা আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, ঐ নিমন্ত্রিত ব্যক্তিদের মধ্যে এক জনও আমার ভোজের আস্বাদ পাইবে না।
লুক ১৪:১৫-২৪
আমাদের স্বীকৃত উপলব্ধি সমূহ উল্টোপাল্টা হয়ে যায় – অনেক সময় – এই গল্পের মধ্যে I প্রথমত, আমরা ধরে নিতে পারি, যে ঈশ্বর লোকেদের স্বর্গে (ভোজ) আমন্ত্রণ করেন না কেননা তিনি কেবল যোগ্য লোকদের আমন্ত্রণ করেন, কিন্ত সেটি ভুল I ভোজে আসার আমন্ত্রণ অনেক, অনেক লোকেদের কাছে যায় I প্রভু (ঈশ্বর) চান ভোজসভা পরিপূর্ণ হোক I
তবে সেখানে একট আশাতীত মোচড় আছে I আমন্ত্রিত অতিথি সমূহের মধ্যে অনেক কম আসতে চায় I পরিবর্তে তারা অজুহাত দেয় যাতে তাদের না আসতে হয়! আর চিন্তা করুন অজুহাতগুলো কতটা অযৌক্তিক I বলদ কেনার আগে প্রথমে তাদের চেষ্টা না করে কে তাদের কিনবে? ক্ষেত্রটি প্রথমে আগে থেকে না দেখে কে কিনবে? না, এই অজুহাতগুলো আমন্ত্রিত অতিথিদের হৃদয়ের প্রকৃত উদ্দেশ্যগুলো প্রকাশ করে – তারা স্বর্গের জন্য উৎসহিত ছিল না, পরিবর্তে অন্য উদ্দেশ্য ছিল I
ঠিক যখন আমরা ভাবি যে হয়ত প্রভু ভোজে এত কম আসার জন্য হতাশ হবেন সেখানে আর একটি মোচড় I এখন ‘অসম্ভব’ লোকেরা যাদের আমরা নিজস্ব উৎসবে আমন্ত্রণ জানাই না, যারা “রাস্তা এবং গলি” এবং দূরবর্তী ‘রাস্তা এবং পল্লীর গলিতে’ বাস করে, যারা “দরিদ্র, পঙ্গু, অন্ধ এবং খঞ্জ” – যাদের থেকে আমরা প্রায়শই দুরে থাকি – তারা ভোজে আমন্ত্রণ পায় I এই ভোজের আমন্ত্রণ আরও দুরে যায়, এবং আপনার আমার কল্পনার বাইরে আরও অধিক লোকেদের আবৃত করে I প্রভু তাঁর ভোজে লোকেদের চান এবং তাদের আমন্ত্রণ জানান যাদেরকে আমরা আমাদের নিজস্ব গৃহে আমন্ত্রণ জানাই না I
আর এই লোকেরা এলো! ভোজে আসার জন্য তাদের প্রেম থেকে বিপথগামী করতে ক্ষেত্র বা বলদের মতন তাদের কাছে আর কোনো প্রতিযোগিতামূলক আগ্রহ নেই I স্বর্গ পরিপূর্ণ আর প্রভুর ইচ্ছা সম্পন্ন হয়!
আমাদেরকে একটি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে যীশু এই গল্পটি বললেন: “আমি যদি স্বর্গের কাছে একটি আমন্ত্রণ পেয়ে থাকি তবে আমি কি তা গ্রহণ করব? বা একটি প্রতিযোগিতামূলক আগ্রহ বা ভালবাসা আপনাকে কোন অজুহাত তৈরী করতে এবং আমন্ত্রণটি প্রত্যাখ্যান করতে বাধ্য করবে I সত্য হ’ল যে স্বর্গে এই ভোজে আপনি আমন্ত্রিত, তবে বাস্তবতা হ’ল যে আমাদের মধ্যে অধিকাংশ একটি বা অন্য কারণের জন্য আমন্ত্রণকে অস্বীকার করবে I আমরা সরাসরিভাবে ‘না’ কখনই বলব না তাই আমাদের প্রত্যাখ্যানকে লুকোতে আমরা অজুহাত দেব I গভীরভাবে আমাদের ভিতর আরও কিছু ‘প্রেম’ রয়েছে যা আমাদের প্রত্যাখ্যানের মূল I এই গল্পের মধ্যে প্রত্যাখ্যানের মূল হ’ল অন্য জিনিস সমূহের প্রতি প্রেম I প্রথমে আমন্ত্রিত ব্যক্তিরা স্বর্গ এবং ঈশ্বরের চেয়ে এই জগতের অস্থায়ী জিনিসগুলোকে অধিক প্রেম করেছিল I (‘ক্ষেত’, ‘বলদ’ এবং ‘বিবাহের’ দ্বারা উপস্থাপিত)I
অন্যায্য আচার্যের গল্প
আমাদের মধ্যে কতিপয় স্বর্গের চেয়ে বেশি এই জগতের জিনিসগুলোর প্রতি প্রেম করি আর তাই আমরা এই আমন্ত্রণকে প্রত্যাখ্যান করব I আমাদের মধ্যে অন্যরা আমাদের নিজস্ব যোগ্যতাকে প্রেম বা বিশ্বাস করি I যীশু এছাড়াও একজন শ্রদ্ধেয় নেতাকে একটি উদাহরণস্বরূপ ব্যবহার করে এই সম্বন্ধে আর একটি গল্পে শিক্ষা দিয়েছিলেন:
হবে৷’লুক ১৮ :৯-১৪৯ যাহারা আপনাদের উপরে বিশ্বাস রাখিত, মনে করিত যে, তাহারাই ধার্ম্মিক, এবং অন্য সকলকে হেয়জ্ঞান করিত, এমন কএক জনকে তিনি এই দৃষ্টান্ত কহিলেন।
১০ দুই ব্যক্তি প্রার্থনা করিবার জন্য ধর্ম্মধামে গেল; এক জন ফরীশী, আর এক জন করগ্রাহী।
১১ ফরীশী দাঁড়াইয়া আপনা আপনি এইরূপ প্রার্থনা করিল, হে ঈশ্বর, আমি তোমার ধন্যবাদ করি যে, আমি অন্য সকল লোকের—উপদ্রবী, অন্যায়ী ও ব্যভিচারীদের —মত কিম্বা ঐ করগ্রাহীর মত নহি;
১২ আমি সপ্তাহের মধ্যে দুই বার উপবাস করি, সমস্ত আয়ের দশমাংশ দান করি;
১৩ কিন্তু করগ্রাহী দূরে দাঁড়াইয়া স্বর্গের দিকে চক্ষু তুলিতেও সাহস পাইল না, বরং সে বক্ষে করাঘাত করিতে করিতে কহিল, হে ঈশ্বর, আমার প্রতি, এই পাপীর প্রতি দয়া কর।
১৪ আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, এই ব্যক্তি ধার্ম্মিক গণিত হইয়া নিজ গৃহে নামিয়া গেল, ঐ ব্যক্তি নয়; কেননা যে কেহ আপনাকে উচ্চ করে, তাহাকে নত করা যাইবে; কিন্তু যে আপনাকে নত করে, তাহাকে উচ্চ করা যাইবে।
এখানে একজন ফারিশীকে (আচার্যের মতন একজন ধর্মীয় নেতা) তার ধর্মীয় প্রচেষ্টা এবং যোগ্যতায় তাকে একজন খাঁটি বলে মনে হত I তার উপবাস এবং পূজা সমূহ খাঁটি ছিল এবং এমনকি প্রয়োজনের তুলনায় অধিক ছিল I তবে এই আচার্য তার নিজস্ব যোগ্যতার উপরে আস্থা রেখেছিল I এটি তা ছিল না যা আব্রাহাম বহু পূর্বে দেখিয়েছিলেন যখন তিনি শুধুমাত্র ঈশ্বরের উপরে বিনীত বিশ্বাসের দ্বারা ধার্মিকতা পেয়েছিলেন I আসলে, একজন কর সংগ্রহকারী (সেই সংস্কৃতিতে একটি অনৈতিক পেশা) বিনীতভাবে করুণা যাচনা করলেন এবং বিশ্বাস করলেন যে তাকে করুণা দেওয়া হয়েছে ‘ন্যায়সঙ্গত’ হয়ে তিনি বাড়ি গেলেন – ঈশ্বরের সাথে সঠিক – অথচ ফারিশী (আচার্য) যাকে আমরা ধরে নিই যে তিনি পর্যাপ্ত যোগ্যতা অর্জন করেছেন অথচ তার বিরুদ্ধে তখনও তার পাপ সমূহ গণনা করা হ’ল I
অতএব যীশু আপনাকে এবং আমাকে জিজ্ঞাসা করছেন আমরা কি সত্যই স্বর্গরাজ্যের ইচ্ছা করি নাকি অন্যান্য অনেক আগ্রহ সমূহের মধ্যে এটি কেবলমাত্র একটি আগ্রহ I এছাড়াও তিনি আমাদের জিজ্ঞাসা করছেন কার উপরে আমরা বিশ্বাস করছি – আমাদের যোগ্যতা নাকি ঈশ্বরের করুণা এবং প্রেম I
আমাদের নিজেদেরকে এই প্রশ্নগুলো সৎভাবে জিজ্ঞাসা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কেননা অন্যথায় আমরা তাঁর পরবর্তী শিক্ষাকে বুঝতে পারব না – যে আমাদের অভ্যন্তরীণ শুদ্ধতা প্রয়োজন I