বটবৃক্ষ, বরগদ বা বট গাছ দক্ষিণ এশিয়ার আধ্যাত্মিকতার কেন্দ্রস্থল এবং ভারতবর্ষের জাতীয় বৃক্ষ I এটি মৃত্যুর ঈশ্বর যমের সাথে সংযুক্ত, তাই প্রায়শই স্মশানের পাশে রোপন করা হয় I পুনরায় অঙ্কুরিত হওয়ার দক্ষতার কারণে এর কাছে দীর্ঘাযুতা রয়েছে এবং এটি অমরত্বের প্রতীক I এই বটবৃক্ষের দ্বারাই সাবিত্রী যমের সাথে দর কষাকষি করেছিলেন তার মৃত স্বামী এবং রাজা সত্যবানকে ফেরৎ দেবার জন্য যাতে করে তিনি এক পুত্রকে পেতে পারেন – যাকে বট পূর্নিমা এবং বট সাবিত্রীর বাৎসরিক উৎসবে স্মরণ করা হয় I
একটি অনুরূপ বিবরণকে হিব্রু বেদের (বাইবেল) মধ্যে দেখা যায় I সেখানে একটি মৃত বৃক্ষ আছে … জীবনে ফিরে আসছে … রাজাদের এক মৃত বংশের থেকে এক নতুন পুত্রের প্রতিনিধিত্ব করছে I বড় পার্থক্যটি হ’ল যে এই বিবরণটিকে এক ভবিষ্যত-দ্রষ্টা ভাববাণী এবং বিভিন্ন ভাববাদীদের (ঋষিদের) দ্বারা শত শত বছরের সময় কালের মধ্যে গড়ে তোলা হয়েছিল I তাদের সম্মিলিত গল্পটি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল যে কেউ আসছেন I যিশাইয় (750 খ্রীষ্টপূর্বাব্দ) এই গল্পটির আরম্ভ করেছিলেন যেটিকে ঋষি-ভাববাদীরা আরও উন্নত করেছিলেন – মৃত বৃক্ষ থেকে উৎপন্ন শাখাতে I
যিশাইয় এবং শাখাটি
ঐতিহাসিকভাবে যাচাই করা সময়ে যিশাইয় বাস করতেন, যিহূদিদের ইতিহাস থেকে নেওয়া কালপঞ্জির মধ্যে দেখা যায় I
যিশাইয় লিখলেন যখন রাজা দায়ূদের রাজবংশ (১০০০-৬০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দ) যিরূশালেম থেকে শাসন করছিল I যিশাইয়র সময়ে (৭৫০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দ) রাজ বংশ এবং শাসন দুর্নীতিগ্রস্ত হয়েছিল I ঈশ্বরের কাছে এবং মশির দশ আজ্ঞা সমূহের অভ্যাসের কাছে ফিরে আসতে যিশাইয় রাজাদের কাছে মিনতি করলেন I তবে যিশাইয় জানতেন যে ইস্রায়েল অনুতাপ করবে না এবং রাজ্যটি ধ্বংস হয়ে যাবে এবং রাজাদের শাসন শেষ হবে I
একটি বৃহৎ বটবৃক্ষের ছবির মতন, তিনি রাজকীয় রাজবংশের জন্য একটি চিত্র ব্যবহার করলেন I এই বৃক্ষটির গোড়ায় রাজা দায়ূদের পিতা যিশয় ছিলেন I যিশয়ের উপরে রাজাদের রাজবংশ দায়ূদকে দিয়ে আরম্ভ হয়েছিল, এবং তার উত্তরাধিকারী, রাজা শলোমনের সঙ্গে চলতে থেকেছিল I যেমন নিচে চিত্রিত করা হয়েছে, রাজবংশের পরবর্তী পুত্রের শাসনের সাথে সাথে বৃক্ষটি বাড়তে এবং উন্নত হতে থাকল I
প্রথমে একটি বৃক্ষ – পরে একটি গুড়ি … তারপরে একটি শাখা
যিশাইয় সতর্ক করলেন যে এই ‘বৃক্ষ’ বংশটিকে শীঘ্র কেটে ফেলা হবে, এটিকে একটি মৃত গুড়িতে পরিণত করা হবে I এখানে তিনি কিভাবে গুড়ি এবং শাখার ধাঁধা হিসাবে এই দৈববাণীকে লিখেছিলেন:
১ আর যিশয়ের গুঁড়ি হইতে এক পল্লব নির্গত হইবেন, ও তাহার মূল হইতে উৎপন্ন এক চারা ফল প্রদান করিবেন।
যিশাইয় ১১:১-২
২ আর সদাপ্রভুর আত্মা—প্রজ্ঞার ও বিবেচনার আত্মা, মন্ত্রণার ও পরাক্রমের আত্মা, জ্ঞানের ও সদাপ্রভুভয়ের আত্মা—তাঁহাতে অধিষ্ঠান করিবেন; আর তিনি সদাপ্রভুর-ভয়ে আমোদিত হইবেন
প্রায় ৬৫০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দের আশেপাশে যিশাইয়র ১৫০ বছর পরে এই ‘বৃক্ষটিকে’ কেটে ফেলা হয়েছিল, যখন বাবিলোনিয়রা যিরূশালেমকে জয় করেছিল, রাজাদের –রাজবংশকে ছিনভিন্ন করেছিল এবং ইস্রায়েলীযদের বাবিলের নির্বাসনে টেনে নিয়ে গিয়েছিল (কালপঞ্জির মধ্য লাল যুগ) I এটি যিহূদিদের প্রথম নির্বাসন ছিল – যাদের মধ্যে কিছু ভারতবর্ষে বসবাস করতে চলে এসেছিল I সাবিত্রী এবং সত্যবানের গল্পের মধ্যে একটি মৃত রাজার পুত্র ছিল – সত্যবান I গুড়ির ভাববাণীতে রাজাদের সমগ্র বংশ সমাপ্ত হয়ে যাবে এবং বংশটি স্বয়ং মারা যাবে I
শাখাটি: দায়ূদের থেকে আসা একজন ‘তাঁকে’ যিনি প্রজ্ঞার অধিকারী
তবে ভাববাণীটি এছাড়াও কেবল রাজাদের কেটে ফেলার চেয়েও ভবিষ্যতের মধ্যে আরও আগে দেখেছিল I বটবৃক্ষের একটি সাধারণ বৈশিষ্টকে ব্যবহার করে এটি এরকম করেছিল I যখন বটবৃক্ষের বীজ অঙ্কুরিত হয় তারা প্রায়শই অন্য গাছের কাণ্ডের উপরেও এইরকম করে I অঙ্কুরোদ্গম বট বৃক্ষের কাছে গুড়ি একটি নিমন্ত্রণকর্তা I বট বৃক্ষের চারা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলে এটি নিমন্ত্রণকর্তা গুড়িকে ছাড়িয়ে যাবে এবং বেঁচে থাকবে I এই অঙ্কুরটিকে যিশাইয় পূর্বেই দেখেছিলেন যে এটি একটি বটবৃক্ষের মতন হবে যেহেতু নতুন অঙ্কুর এর শিকড় থেকে উপরে উঠবে – একটি শাখা তৈরী করতে I
যিশাইয় এই চিত্রটিকে ব্যবহার করেছিলেন এবং ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে একদিন অদূর ভবিষ্যতে একটি অঙ্কুর, শাখা হিসাবে পরিচিত মৃত গুড়ি থেকে বেরিয়ে আসবে, ঠিক যেমন বটবৃক্ষের অঙ্কুর বৃক্ষের গুড়ি থেকে অঙ্কুরিত হয় I যিশাইয় অঙ্কুর হিসাবে ‘তাঁকে’ বোঝায় তাই যিশাইয় একজন নির্দিষ্ট মানুষের সম্বন্ধে কথা বলছেন, যিনি রাজবংশের পতনের পরে দায়ূদের বংশ থেকে আসছেন I এই মানুষটির মধ্যে প্রজ্ঞা, শক্তি, এবং জ্ঞানের এই ধরণের গুণ সমূহ থাকবে এটি এরকম হবে যেন ঈশ্বরের বিশেষ আত্মা তার উপরে হবে I
অনেক রচনা সমূহ পুরাণের মধ্যে বটবৃক্ষকে অমরত্বের একটি প্রতীকী রূপে উল্লেখ করে I এর বায়বীয় শিকড়গুলো মাটির নীচে বাড়তে থাকে অতিরিক্ত গুড়ি তৈরী করে I এটি দীর্ঘায়ুটির প্রতীক ঐশ্বরিক স্রষ্টাকে প্রতিনিধিত্ব করে I ৭৫০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে যিশাইয় এই শাখাটিকে পূর্বেই দেখেছিলেন যার মধ্যে অনেক অনুরূপ স্বর্গীয় বৈশিষ্ট সমূহ থাকবে, এবং রাজবংশের ‘গুড়ি’ অন্তর্নিহিত হয়ে যাওয়ার পরেও দীর্ঘ স্থায়ী হবে I
যিরমিয় এবং শাখাটি
ঋষি-ভাববাদী যিশাইয় একটি পথনির্দেশক স্তম্ভ খাড়া করলেন যাতে লোকেরা ভবিষ্যতের ঘটনাগুলোকে উদঘাটন করতে বুঝতে পারে I তবে যিশাইয়র 150 বছর পরে, 600 খ্রীষ্টপুর্বাব্দে তার বিভিন্ন চিহ্নগুলোর মধ্যে কেবলমাত্র প্রথম ছিল যখন তার বিশেষ চোখের সামনে দায়ূদের বংশকে কাটা হচ্ছিল, যিরমিয় লিখলেন:
৫ সদাপ্রভু কহেন, দেখ, এমন সময় আসিতেছে, যে সময়ে আমি দায়ূদের বংশে এক ধার্ম্মিক পল্লব উৎপন্ন করিব; তিনি রাজা হইয়া রাজত্ব করিবেন, বুদ্ধিপূর্ব্বক চলিবেন, এবং দেশে ন্যায়বিচার ও ধার্ম্মিকতার অনুষ্ঠান করিবেন।
যিরমিয় ২৩:৫-৬
৬ তাঁহার সময়ে যিহূদা পরিত্রাণ পাইবে, ও ইস্রায়েল নির্ভয়ে বাস করিবে, আর তিনি এই নামে আখ্যাত হইবেন, “সদাপ্রভু আমাদের ধার্ম্মিকতা।
যিরমিয় দায়ূদের রাজবংশের যিশাইয়র শাখা চিত্রের উপরে বিস্তৃত করলেন I শাখাটি আবারও একজন রাজা হবে I তবে দায়ূদের পূরবর্তী রাজাদের মতন এক রাজা নয় যাদেরকে মৃত গুড়িতে নামিয়ে আনা হয়েছিল I
শাখাটি: প্রভু আমাদের ধার্মিকতা
শাখাটির সাথে পার্থক্যকে তার নামের মধ্যে দেখা যায় I তিনি ঈশ্বরের বিশেষ নাম বহন করবেন (‘প্রভু’) – ঈশ্বরের জন্য হিব্রু নাম), অতএব একটি বটবৃক্ষের মতন এই শাখাটি স্বর্গীয় এক প্রতিমূর্তি হবে I এছাড়াও তিনি ‘আমাদের’ (আমাদের মানবজাতির) ধার্মিকতা হবেন I
সাবিত্রী যখন তার স্বামী সত্যবানের দেহ নিয়ে যমের সাথে বিতর্ক করলেন, এটি তার ধার্মিকতা ছিল যা তাকে মৃত্যুর (যম) সম্মুখীন হতে শক্তি যুগিয়েছিল I কুম্ভ মেলা সম্পর্কে যেমন উল্লিখিত করা হয়, আমাদের সমস্যা হ’ল আমাদের দুর্নীতি বা পাপ, এবং তাই আমরা ‘ধার্মিকতার’ অভাব বোধ করি I বাইবেল আমাদের বলে যে সেইজন্য মৃত্যুর সম্মুখীন হতে আমাদের কাছে ক্ষমতা নেই I প্রকৃতপক্ষে এটি বলে এর বিরুদ্ধে আমরা অসহায়:
১৪ ভাল, সেই সন্তানগণ যখন রক্তমাংসের ভাগী, তখন তিনি আপনিও তদ্রূপ তাহার ভাগী হইলেন, যেন মৃত্যু দ্বারা মৃত্যুর কর্ত্তৃত্ববিশিষ্ট ব্যক্তিকে অর্থাৎ দিয়াবলকে শক্তিহীন করেন,
ইব্রীয় ২:১৪-১৫
১৫ এবং যাহারা মৃত্যুর ভয়ে যাবজ্জীবন দাসত্বের অধীন ছিল, তাহাদিগকে উদ্ধার করেন।
বাইবেলের মধ্যে শয়তান যমের মতন হয় যেহেতু সে আমাদের বিরুদ্ধে মৃত্যুর ক্ষমতাকে ধারণ করে I প্রকৃতপক্ষে, সত্যবানের দেহকে নিয়ে যমের বিতর্কের মতন বাইবেল অন্য সময়ে একটি দেহকে নিয়ে শয়তানের বিতর্ককে লিপিবদ্ধ করে, যখন
৯ কিন্তু প্রধান স্বর্গদূত মীখায়েল যখন মোশির দেহের বিষয়ে দিয়াবলের সহিত বাদানুবাদ করিলেন, তখন নিন্দাযুক্ত নিষ্পত্তি করিতে সাহস করিলেন না, কিন্তু কহিলেন, প্রভু তোমাকে ভর্ৎসনা করুন।
যিহূদা ১:৯
সাবিত্রী ও সত্যবানের গল্পে যমের মতন যেহেতু শয়তানের মশির মতন একজন মহৎ ভাববাদীর দেহকে নিয়ে বিতর্ক করার ক্ষমতা আছে, সেইহেতু নিশ্চিতভাবে আমাদের উপরে মৃত্যুর মধ্যে তার ক্ষমতা আছে – আমাদের পাপ এবং দুর্নীতির কারণে I এমনকি দেবদূতরাও জানতে পারে যে কেবলমাত্র প্রভুর কাছে – সৃষ্টিকারী ঈশ্বরের কাছে – মৃত্যুর মধ্যে শয়তানকে তিরষ্কার করার ক্ষমতা আছে I
এখানে, শাখাটির মধ্যে একটি প্রতিশ্রুতি রয়েছে যে ভবিষ্যতে প্রভু আমাদেরকে ‘ধার্মিকতা’ দেবেন যাতে মৃত্যুর উপরে আমরা বিজয় পেতে পারি I
কিভাবে?
এই থিমটিকে তার গড়ে তোলার সাথে সাথে সখরিয় আরও বিবরণে পরিপূর্ণ করেন, এমনকি আসন্ন শাখার নামটিকে বিস্তৃতভাবে ভবিষ্যদ্বাণী করেন যা মৃত্যুকে (যম) অমান্যকারী সাবিত্রী ও সত্যবানের গল্পের সমান্তরাল হয়, যেটাকে আমরা পরে দেখব I