ভাগবদগীতা মহাভারত মহাকাব্যটির জ্ঞানের কেন্দ্রবিন্দু I যদিও গীতা (গান) হিসাবে লেখা হয় এটিকে আজ সাধারণতঃ পড়া হয় I কুরুক্ষেত্রের মহান যুদ্ধের আরম্ভের ঠিক পূর্বে প্রভু কৃষ্ণ এবং রাজকীয় যোদ্ধা অর্জুনের মধ্যে কথোপকথনকে গীতা বর্ণনা করে – রাজকীয় পরিবারের দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ I এই আসন্ন যুদ্ধে একে অপরের বিরোধিতা করা যোদ্ধাদের এবং প্রাচীন রাজকীয় রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা রাজা কুরুর দুই রাজবংশের শাসকদের দুই শাখাদের সাজানো হয়েছিল I রাজ বংশের কোন পক্ষের শাসনের অধিকার ছিল – পান্ডব রাজা যুধিষ্টির বা কৌরব রাজ দুর্যোধন, সেই বিষয় নিয়ে পান্ডব এবং কৌরবদের ভাইয়েরা যুদ্ধে যাচ্ছিল I যুধিষ্টিরের কাছ থেকে দুর্যোধন সিংহাসন দখল করেছিলেন তাই যুধিষ্টির এবং তার পান্ডব সহযোগীরা একে ফিরে পেতে যুদ্ধে যাচ্ছিলেন I পান্ডব যোদ্ধা অর্জুন এবং প্রভু কৃষ্ণের মধ্যে ভাগবদগীতার কথোকথপন কঠিন পরিস্থিতিতে প্রকৃত প্রজ্ঞার উপরে ফোকাস করে যা আত্মিক স্বন্তন্ত্রতা এবং আশীর্বাদ উৎপন্ন করে I
গীতসংহিতা হিব্রু বাইবেল বেদা পুস্তকম মহাকাব্যের জ্ঞান সাহিত্যের কেন্দ্রবিন্দু I যদিও গীতা (গান) হিসাবে লেখা হয় এটিকে আজ সাধারণতঃ পড়া হয় I দুই বিপরীত শক্তির এক মহান যুদ্ধের ঠিক পূর্বে গীত সংহিতা 2 সর্বোচ্চ প্রভু এবং তার অভিষিক্ত (=শাসকের)
মধ্যে একটি কথোপকথনকে বর্ণনা করে I এর আসন্ন যুদ্ধের দুই দিকে মহান যোদ্ধা এবং শাসকরা সজ্জিত হয় I একদিকে একজন রাজা যিনি প্রাচীন রাজকীয় রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা রাজকীয় রাজা দায়ূদের বংশধর I দুই পক্ষ যুদ্ধে যাচ্ছিল কোন পক্ষ কার উপরে শাসন করবে I প্রভু এবং তার শাসকের মধ্যে গীতসংহিতার কথোপকথন স্বতন্ত্রতা, প্রজ্ঞা এবং আশীর্বাদকে স্পর্শ করে I
আপনার কি একইরকম বলে মনে হয় না?
যেহেতু ভাগবদগীতা সংস্কৃত বেদের জ্ঞানকে বোঝার পোর্টাল, গীত সংহিতা তেমনি হিব্রু বেদের (বাইবেল) জ্ঞানকে বোঝার পোর্টাল I সেই জ্ঞান লাভ করার জন্য আমাদের গীতসংহিতা এবং এর প্রধান রচয়িতা, রাজা দায়ূদের সম্পর্কে কিছুটা পটভূমি তথ্যের প্রয়োজন I
রাজা দায়ূদ কে ছিলেন এবং গীতসংহিতা কি?
ঐতিহাসিক কালপঞ্জির মধ্যে রাজা দায়ূদ, গীতসংহিতা এবং অন্যান্য ভাববাদী ও রচনা সমূহ
ইস্রায়েলীয়দের ইতিহাস থেকে নেওয়া কালপঞ্জি থেকে আপনি দেখতে পারেন, যে দায়ূদ প্রায় ১০০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে বাস করতেন, ভাববাদী আব্রাহামের ১০০০ বছর এবং ভাববাদী মুসার ৫০০ বছর [পরে] I দাউদ তার পরিবারের ভেড়া চড়িয়ে এক মেষপালক রূপে জীবনযাত্রা শুরু করেছিলেন I এক দুর্দান্ত শত্রু, এবং এক মানুষের দানব, নাম গলিয়াথ ইস্রায়েলীয়দের পরাজিত করতে এক সৈন্যবাহিনীর নেতৃত্ব দিল, এবং তাই ইস্রায়েলীয়রা নিরুৎসাহ হয়ে পরাজয় স্বীকার করল I দায়ূদ গলিয়াথকে চ্যালেঞ্জ করল এবং তাকে যুদ্ধে নিহত করল I এক মহান যোদ্ধার উপরে একজন বালক মেষপালক রাখালের উল্লেখযোগ্য বিজয় দায়ূদকে প্রখ্যাত করে তুলল I
যাইহোক, তিনি কেবল দীর্ঘ এবং কঠিন অভিজ্ঞতা সমূহের পরে রাজা হলেন কারণ বিদেশে এবং ইস্রায়েলীয়দের উভয়ের মধ্যে তার অনেক শত্রু ছিল, যারা তার বিরোধিতা করেছিল I দায়ূদ তার সমস্ত শত্রুদের উপরে চূড়ান্তভাবে বিজয় লাভ করলেন কারণ তিনি ঈশ্বরের উপরে ভরসা করেছিলেন আর ঈশ্বর তাকে সাহায্য করলেন I হিব্রু বেদার বিভিন্ন বইগুলো অর্থাৎ বাইবেল দায়ূদের এই সংগ্রাম এবং বিজয়গুলো সম্পর্কে বর্ণনা করে I
এছাড়াও দায়ূদ একজন সঙ্গীতজ্ঞ হিসাবে বিখ্যাত ছিলেন যিনি ঈশ্বরের নিকট সুন্দর গীত এবং কবিতা সমূহের রচনা করেছিলেন I এই গীত এবং কবিতাগুলো ঈশ্বরের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিল এবং বেদা পুস্তকমের মধ্যে গীতসংহিতার বই গঠন করেছিল I
গীতসংহিতার মধ্যে ‘খ্রীষ্টের’ ভবিষ্যদ্বাণী সমূহ
যদিও একজন মহান রাজা এবং যোদ্ধা ছিলেন, দায়ূদ গীতসংহিতার মধ্যে লিখেছিলেন একজন ‘খ্রীষ্ট’ তার রাজকীয় বংশের থেকে আসছেন যিনি তাকে শক্তি ও কর্তৃত্বের মধ্যে নিষ্প্রভ করবেন I এখানে হিব্রু বেদার (বাইবেল) গীতসংহিতার মধ্যে খ্রীষ্টকে যেভাবে প্রবর্তন করা হল তা ভাগবদ গীতার অনুরূপ রাজকীয় যুদ্ধের দৃশ্যের অবতারণা I
১ জাতিগণ কেন কলহ করে? লোকবৃন্দ কেন অনর্থক বিষয় ধ্যান করে?
গীতসংহিতা ২
২ পৃথিবীর রাজগণ দণ্ডায়মান হয়, নায়কগণ একসঙ্গে মন্ত্রণা করে, সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে এবং তাঁহার ‘অভিষিক্ত’ ব্যক্তির বিরুদ্ধে;
৩ [বলে,] ‘আইস, আমরা উহাদের বন্ধন ছিঁড়িয়া ফেলি, আপনাদের হইতে উহাদের রজ্জু খুলিয়া ফেলি।’
৪ যিনি স্বর্গে উপবিষ্ট, তিনি হাস্য করিবেন; প্রভু তাহাদিগকে বিদ্রূপ করিবেন।
৫ তখন তিনি ক্রোধে তাহাদের কাছে কথা কহিবেন, কোপে তাহাদিগকে বিহ্বল করিবেন।
৬ আমিই আমার ‘রাজাকে’ স্থাপন করিয়াছি আমার পবিত্র সিয়োন-পর্ব্বতে।
৭ আমি সেই বিধির বৃত্তান্ত প্রচার করিব; সদাপ্রভু আমাকে কহিলেন, তুমি আমার পুত্র, অদ্য আমি তোমাকে জন্ম দিয়াছি।
৮ আমার নিকটে যাচ্ঞা কর, আমি জাতিগণকে তোমার দায়াংশ করিব, পৃথিবীর প্রান্ত সকল তোমার অধিকারে আনিয়া দিব।
৯ তুমি লৌহদণ্ড দ্বারা তাহাদিগকে ভাঙ্গিবে, কুম্ভকারের পাত্রের ন্যায় খণ্ড বিখণ্ড করিবে।
১০ অতএব এখন, রাজগণ! বিবেচক হও; পৃথিবীর বিচারকগণ! শাসন গ্রাহ্য কর।
১১ তোমার সভয়ে সদাপ্রভুর আরাধনা কর, সকম্পে উল্লাস কর।
১২ পুত্রকে চুম্বন কর, পাছে তিনি ক্রুদ্ধ হন ও তোমরা পথে বিনষ্ট হও, কারণ ক্ষণমাত্রে তাঁহার ক্রোধ প্রজ্বলিত হইবে। ধন্য তাহারা সকলে, যাহারা তাঁহার শরণাপন্ন।
এখানে সেই একই অনুচ্ছেদ কিন্তু গ্রীক থেকে যেমনটি পূর্বে ব্যাখ্যা করা হয়েছে I
ন্যান্য জাতিগুলোর লোকজন এত ক্রুদ্ধ কেন? কেন তারা বোকার মত পরিকল্পনা করছে?
গীতসংহিতা ২:১-২ – হিব্রু এবং গ্রীকের মূল ভাষায় (LXX)
2 তাদের রাজারা এবং নেতারা, প্রভু এবং তাঁর মনোনীত রাজার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য একত্রিত হচ্ছে|
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের পরিণাম
যেমন আপনি দেখতে পারেন, গীতসংহিতা ২ এর মধ্যে ‘খ্রীষ্টের’/’অভিষিক্তের’ প্রসঙ্গ ভাগবদগীতার কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের অনুরূপ I তবে কিছু পার্থক্যের উদ্ভব হয় যখন আমরা অনেক আগের কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের পরিণাম সম্পর্কে চিন্তা করি I
অর্জুন এবং পান্ডব যুদ্ধে জয়লাভ করলেন, এবং তাই যুধিষ্ঠিরকে ন্যায়সঙ্গত রাজা হিসাবে দখলকারী কৌরবদের হাত থেকে পান্ডবদের হাতে ক্ষমতার এবং শাসনের পরিবর্তন হ’ল I 18 দিনের যুদ্ধে সমস্ত পান্ডব ভাইগণ এবং কৃষ্ণ জীবিত রইলেন তবে মুষ্টিমেয় কয়েকজন জীবিত রইল বাকি প্রত্যেকে নিহত হ’ল I তবে যুদ্ধের পরে 36 বছর ধরে শাসনের পরে যুধিষ্টির সিংহাসন ত্যাগ করেছিলেন এবং উপাধিটি অর্জুনের নাতি পরীক্ষিতকে দিয়েছিলেন I তিনি তারপরে দ্রৌপদী এবং তার ভাইদের সঙ্গে হিমালয়ে প্রস্থান করলেন I দ্রৌপদী এবং চার ভাই – ভীম, অর্জুন, নকুল এবং সহদেবের যাত্রার সময়ে মৃত্যু হ’ল I যুধিষ্ঠিরকে স্বয়ং স্বর্গে প্রবেশের অনুমোদন দেওয়া হ’ল I কৌরবদের মা গান্ধারী কৃষ্ণের উপর যুদ্ধ না থামাবার জন্য ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন এবং তাই তিনি তাকে অভিশাপ দিলেন এবং যুদ্ধের 36 বছর পরে তিনি নিহত হলেন যখন আন্ত:জাতির লড়াইয়ের কারণে দুর্ঘটনাক্রমে একটি তীর তাকে আঘাত করল I কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ এবং পরবর্তীকালে কৃষ্ণের হত্যাকান্ড বিশ্বকে কলিযুগে নিয়ে গেল I
সুতরাং কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের থেকে আমাদের কাছে কি লাভ এসেছে?
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের থেকে আমাদের কাছে ফল
আমাদের জন্যে হাজার বছর পরে বাস করা আমরা আমাদের আরও বেশি প্রয়োজনের মধ্যে খুঁজে পাই I আমরা সংসারের মধ্যে বাস করি, অবিরতভাবে যন্ত্রণা, ব্যাধি, বৃদ্ধাবস্থা এবং মৃত্যুর ছায়ায় বসবাস করি I আমরা এমন সরকারের অধীনে বাস করি যারা সাধারণতঃ দুর্নীতিগ্রস্ত হয় এবং শাসকদের ধনী ও ব্যক্তিগত বন্ধুদের সাহায্য করে I আমরা বিভিন্ন দিক দিয়ে কলি যুগের প্রভাব সমূহকে অনুভব করি I
আমরা এমন একটি সরকারের জন্য আকুল হয়ে আকাঙ্খা করি যা দুর্নীতি পোষণ করবে না এমন একটি সমাজের জন্য যা কলি যুগের অধীনে নয় এবং সংসারের অনন্তকালীন পাপ ও মৃত্যু থেকে ব্যক্তিগত মুক্তি পাওয়ার জন্য I
গীতসংহিতার ২ এর আসন্ন ‘খ্রীষ্টের’ থেকে আমাদের জন্য ফল
হিব্রু ভাববাদীরা ব্যাখ্যা করেন গীতসংহিতা ২ এর মধ্যে প্রবর্তিত ‘খ্রীষ্ট’ কিভাবে আমাদের এই চাহিদাগুলো পূরণ করবেন I এই চাহিদাগুলো পূরণের জন্য এক যুদ্ধের প্রয়োজন হবে, তবে কুরুক্ষেত্রের থেকে একটি ভিন্ন যুদ্ধ এবং এমনকি গীতসংহিতা ২ এর মধ্যে চিত্রিত যুদ্ধের থেকেও ভিন্ন I এটি এমন এক যুদ্ধ যাকে কেবলমাত্র ‘খ্রীষ্ট’ই শুরু করতে পারেন I এই ভাববাদীরা দেখায় যে ক্ষমতা এবং শক্তির দ্বারা শুরু করার পরিবর্তে, পাপ এবং মৃত্যু থেকে মুক্তি পাবার জন্য আমাদের প্রয়োজনে খ্রীষ্ট সেবা করার দ্বারা শুরু করেন I তারা দেখায় কিভাবে গীতসংহিতার দিকে পথে একদিন পৌঁছানো যাবে, অন্য এক দখলকারীকে পরাস্ত করার জন্য প্রথমে অন্য যুদ্ধের দীর্ঘ পথ অবলম্বন করা দরকার, সামরিক শক্তির দ্বারা নয় বরং তাদের জন্য প্রেম ও ত্যাগের দ্বারা যারা সংসারে বন্দী আছে I আমরা দায়ূদের রাজকীয় বৃক্ষের মৃত গুঁড়ির থেকে অঙ্কুর দিয়ে এই যাত্রা শুরু করি I