মহা শিবরাত্রি (শিবের মহান রাত্রি) উদযাপন ফাল্গুনের (ফেব্রুয়ারী/মার্চ) ১৩ তারিখের সন্ধ্যায় শুরু হয়ে, ১৪ তারিখ পর্যন্ত চলে I অন্যান্য উৎসবগুলোর থেকে আলাদা, এটি সূর্যাস্তের পরে আরম্ভ হয় এবং সারা রাতের মধ্য দিয়ে গিয়ে পরের দিন পর্যন্ত যায় I অন্যান্য উৎসবগুলির আনন্দময় মজা উপভোগ করার পরিবর্তে উপবাস, অন্তর্দৃষ্টি এবং সজাগতা এর উদযাপনগুলিকে চিহ্নিত করে I মহা শিবরাত্রি জীবন এবং বিশ্বের “অন্ধকার ও অজ্ঞতা” কাটিয়ে ওঠার এক গম্ভীর স্মৃতিকে চিহ্নিত করে I উৎসাহী ভক্তরা সারা-রাত জেগে থাকে I
মহা শিবরাত্রি এবং মহাসাগরের মন্থন
পুরাণ মহা শিবরাত্রির জন্য বিভিন্ন কারণ দেয় I কেউ বলে যে এই নির্দিষ্ট দিনে সমুদ্র মন্থনের (মহাসাগরের মন্থন) সময়ে উৎপন্ন হলাহল বিষকে গলায় ধারণ করে ভগবান শিব গলাধঃকরণ করেছিলেন I এটি আঘাতে বিবর্ণ করল এবং তাঁর গলাকে নীল করে তুলে তাঁকে নীলকন্ঠ নাম দিল I ভাগবত পুরাণ, মহাভারত এবং বিষ্ণু পুরাণ এই কাহিনীটি বর্ণনা করেছে এবং অমরত্বের পানীয়, অমৃতের জন্মও বাখ্যা করেছে I মহাসাগর মন্থনের জন্য তারা মন্দোরা পর্বতকে মন্থনের একটি ডান্ডা হিসাবে ব্যবহার করেছিল I তারা শিবের ঘাড়ে বসবাসকারী একটি নাগরাজ সর্প বাসুকীকে মন্থনের দড়ি হিসাবে ব্যবহার করেছিল I
মহাসাগরের মন্থনের আগে পিছনে, সর্প বাসুকী এমন একটি শক্তিশালী মারাত্মক বিষ ছাড়ল যাতে এটি শুধুমাত্র মহাসাগরের মন্থনকেই ধ্বংস করত না, বরং পাশাপাশি সমগ্র পৃথিবীকেও I তাদেরকে বাঁচাতে শিব বিষকে তাঁর গলায় ধারণ করলেন এবং তা তার গলাকে নীল রঙে পরিবর্তন করল I কয়েকটি সংস্করণে, ভগবান শিব বিষকে গলাধঃকরণ করেছিলেন এবং এটি তাঁর শরীরে প্রবেশ করার সাথে সাথে তীব্র যন্ত্রণা ভোগ করেছিলেন I এই কারণেই ভক্তরা উপলক্ষটিকে উপবাস রেখে, বিষন্ন এবং অন্তর্মুখী উপায়ে পালন করে I
সমুদ্র মন্থনের গল্প এবং মহা শিবরাত্রি যা এটি উদযাপন করে, আবেগী সপ্তাহের ষষ্ঠ দিনে যীশু যা করেছিলেন তার প্রসঙ্গ দেয়, যাতে আমরা এর অর্থকে উপলব্ধি করতে পারি I
যীশু এবং মহাসাগরের রূপক মন্থন
যীশু যখন প্রথম দিনে যিরূশালেমে প্রবেশ করলেন তিনি মোরিয়া পর্বতের উপরে দাঁড়ালেন, যেখানে 2000 বছর পূর্বে আব্রাহাম ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে এক মহান বলিদান দেওয়া ‘হবে’ (ভবিষ্যত কাল) I তখন যীশু ঘোষণা করলেন:
৩১ এখন এই জগতের বিচার হবে: এখন এই জগতের শাসনকর্ত্তা বিতাড়িত হবে।
যোহন ১২:৩১
তাঁর এবং প্রায়শই এক সর্প রূপে চিত্রিত ‘পৃথিবীর রাজকুমার’ শয়তানের মধ্যে, সেই পর্বতের উপরে আসন্ন সংঘটিত লড়াইয়ের চারিদিকে ‘পৃথিবী’ ঘুরে বেড়াত I রূপক ভাবে বলতে গেলে, মোরিয়া পর্বত ছিল ঘুর্নায়মান ডাণ্ডা, মন্দোরা পর্বত, যা পরবর্তী যুদ্ধে সমগ্র পৃথিবীকে মন্থন করবে I
সর্প (নাগরাজ) শয়তান খ্রীষ্টকে আঘাত করতে পঞ্চম দিনে যুদাসের মধ্যে প্রবেশ করল I বাসুকী যেমন একটি ঘুর্নায়মান দড়ি হ’ল, শয়তান, রূপকভাবে বলতে গেলে মোরিয়া পর্বতের চারিদিকে মন্থনের দড়ি হয়ে উঠলো কারণ এই দুজনের মধ্যে যুদ্ধের চূড়ান্ততা নিকটবর্তী হয়ে উঠেছিল I
শেষ নৈশ ভোজ
পরের সন্ধ্যায় যীশু তাঁর শেষ নৈশ ভোজে শিষ্যদের সাথে ভাগ নিল I এটি মহা শিবরাত্রির ত্রয়োদশ সন্ধ্যা ছিল. যেমন মহা শিব রাত্রি ত্রয়োদশ তারিখে শুরু হয় I সেই ভোজে যীশু যে ‘কাপটি’ পান করতে চলেছিলেন, সে সম্পর্কে ভাগ করে নিয়েছিলেন, শিবের মতই বাসুকীর বিষ পান করেছিলেন I এখানে সেই বক্তৃতাটি রয়েছে I
২৭ পরে তিনি পানপাত্র নিয়ে ধন্যবাদ দিয়ে তাঁদের দিয়ে বললেন, “তোমরা সবাই এর থেকে পান কর,
মথি ২৬:২৭-২৮
২৮ কারণ এটা আমার রক্ত, নতুন নিয়মের রক্ত, যা অনেকের জন্য, পাপ ক্ষমার জন্য ঝরবে।”
তখন তিনি উদাহরণ এবং শিক্ষার মাধ্যমে কিভাবে পরস্পরকে ভালবাসতে হয় এবং আমাদের জন্য ঈশ্বরের মহান প্রেমকে ব্যাখ্যা করলেন, যাকে সুসমাচার থেকে এখানে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে I পরে, তিনি সমস্ত বিশ্বাসীদের জন্য প্রার্থনা করলেন (এখানে পড়ুন)
গেৎসিমনের বাগানে
তারপরে, মহা শিবরাত্রির মতন, তিনি বাগানে সারা-রাত ধরে তাঁর সজাগতা আরম্ভ করলেন I
৩৬ তখন যীশু তাঁদের সঙ্গে গেৎশিমানী নামে এক জায়গায় গেলেন, আর তাঁর শিষ্যদের বললেন, “আমি যতক্ষণ ওখানে গিয়ে প্রার্থনা করি, ততক্ষণ তোমরা এখানে বসে থাক।”
মথি: ২৬:৩৬-৪৬
৩৭ পরে তিনি পিতরকে ও সিবদিয়ের দুই ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে গেলেন, আর দুঃখার্ত্ত ও ব্যাকুল হতে লাগলেন।
৩৮ তখন তিনি তাঁদের বললেন, “আমার প্রাণ মরণ পর্যন্ত দুঃখার্ত্ত হয়েছে, তোমরা এখানে থাক, আমার সঙ্গে জেগে থাক।”
৩৯ পরে তিনি একটু আগে গিয়ে উপুড় হয়ে পড়ে প্রার্থনা করে বললেন, “হে আমার পিতা, যদি এটা সম্ভব হয়, তবে এই দুঃখের পানপাত্র আমার কাছে থেকে দূরে যাক, আমার ইচ্ছামত না হোক, কিন্তু তোমার ইচ্ছামত হোক।”
৪০ পরে তিনি সেই শিষ্যদের কাছে গিয়ে দেখলেন, তাঁরা ঘুমিয়ে পড়েছেন, আর তিনি পিতরকে বললেন, “একি? এক ঘন্টাও কি আমার সঙ্গে জেগে থাকতে তোমাদের শক্তি হল না?”
৪১ জেগে থাক ও প্রার্থনা কর, যেন পরীক্ষায় না পড়, আত্মা ইচ্ছুক, কিন্তু শরীর দুর্বল
৪২ আবার তিনি দ্বিতীয়বার গিয়ে এই প্রার্থনা করলেন, “হে আমার পিতা, আমি পান না করলে যদি এই দুঃখকা পানপাত্র দূরে যেতে না পারে, তবে তোমার ইচ্ছা পূর্ণ হোক।”
৪৩ পরে তিনি আবার এসে দেখলেন, তাঁরা ঘুমিয়ে পড়েছেন, কারণ তাঁদের চোখ ঘুমে ভারী হয়ে পড়েছিল।
৪৪ আর তিনি আবার তাঁদের ছেড়ে তৃতীয় বার আগের মতো কথা বলে প্রার্থনা করলেন।
৪৫ তখন তিনি শিষ্যদের কাছে এসে বললেন, “এখনও কি তোমরা ঘুমাচ্ছ এবং বিশ্রাম করছ?, দেখ, দিন উপস্থিত, মনুষ্যপুত্রকে পাপীদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।”
৪৬ উঠ, আমরা যাই, এই দেখ, যে ব্যক্তি আমাকে সমর্পণ করবে, সে কাছে এসেছে।
শিষ্যরা জেগে থাকতে পারল না এবং সজাগতা সবেমাত্র আরম্ভ হয়েছিল! সুসমাচার তারপরে বর্ণনা করে কিভাবে যুদাস তাকে বিশ্বাসঘাতকতা করল I
বাগানের মধ্যে গ্রেফতার
২ এখন যিহূদা, যে তাঁর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল, সেও জায়গাটা চিনত, কারণ যীশু প্রায়ই তাঁর শিষ্যদের নিয়ে সেখানে যেতেন।
যোহন ১৮:২-১৩
৩ তারপর যিহূদা একদল সৈন্য এবং প্রধান যাজকদের কাছ থেকে আধিকারিক গ্রহণ করেছিল এবং ফরীশীরা লন্ঠন, মশাল এবং তরোয়াল নিয়ে সেখানে এসেছিল।
৪ তারপর যীশু, যিনি সব কিছু জানতেন যে তাঁর উপর কি ঘটবে, সামনের দিকে গেলেন এবং তাদের জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তোমরা কাকে খুঁজছো?’
৫ তারা তাঁকে উত্তর দিল, “নাসরতের যীশুর।” যীশু তাদের উত্তর দিল, “আমি সে।” যিহূদা, যে তাঁর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল, সেও সৈন্যদের সঙ্গে দাঁড়িয়েছিল।
৬ সুতরাং যখন তিনি তাদের বললেন, “আমি হই,” তারা পিছিয়ে গেল এবং মাটিতে পড়ে গেল।
৭ তারপরে তিনি তাদের আবার জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমরা কার খোঁজ করছ?” তারা আবার বলল, “নাসরতের যীশুর।”
৮ যীশু উত্তর করলেন, “আমি তোমাদের বললাম যে, আমিই তিনি; সুতরাং তোমরা যদি আমাকে খোঁজ, তবে অন্যদের যেতে দাও।”
৯ এই ঘটনা ঘটল যেন তিনি যে কথা বলেছিলেন সে কথা পূর্ণ হয়। তিনি বলেছিলেন, “তুমি যাদের আমাকে দিয়েছিলে, আমি তাদের একজনকেও হারাই নি।”
১০ তখন শিমোন পিতর, যার একটা তরোয়াল ছিল, সেটা টানলেন এবং মহাযাজকদের দাসকে আঘাত করেছিলেন এবং তার ডান কান কেটে ফেললেন। সেই দাসের নাম ছিল মল্ক।
১১ যীশু পিতরকে বললেন, “তরোয়ালটা খাপের মধ্যে রাখ। আমার পিতা আমাকে যে দুঃখের পানপাত্র দিয়েছেন, আমি কি এটাতে পান করব না?”
১২ সুতরাং একদল সৈন্য এবং দলপতি ও ইহূদিদের আধিকারিকরা যীশুকে ধরল এবং তাঁকে বাঁধলো।
১৩ তারা প্রথমে তাঁকে হাননের কাছে নিয়ে গেল, কারণ তিনি কায়াফার শ্বশুর ছিলেন, যিনি ওই বছরে মহাযাজক ছিলেন।
যীশু বাগানে প্রার্থনা করতে গিয়েছিলেন I সেখানে যুদাস তাকে গ্রেফতার করতে সৈন্যদের নিয়ে এলেন I গ্রেফতার যদি আমাদের ভয়ভীত করে তবে আমরা লড়াই করতে, পালাতে বা লুকোতে পারি I কিন্তু এগুলোর মধ্যে যীশু কোনটাই করলেন না I তিনি স্বীকার করলেন যে তিনিই সেই ব্যক্তি যাকে তারা খুঁজছে I তাঁর স্পষ্ট স্বীকারোক্তি (“আমিই সে”) সৈন্যদের হতচকিত করল তাই তাঁর শিষ্যরা পলায়ন করল I যীশু গ্রেফতারের কাছে সমর্পণ করলেন এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যাওয়া হ’ল I
প্রথম জিজ্ঞাসাবাদ
সুসমাচার লিপিবদ্ধ করে কিভাবে তারা তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করল:
১৯ তারপর মহাযাজক যীশুকে তাঁর শিষ্যদের এবং তাঁর শিক্ষার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলেন।
যোহন ১৮:১৯-২৪
২০ যীশু তাঁকে উত্তর দিলেন, “আমি জগতের কাছে খোলাখুলি ভাবে কথা বলেছি; আমি সবদিন সমাজঘরের মধ্যে এবং মন্দিরের মধ্যে শিক্ষা দিয়েছি যেখানে সব ইহূদিরা একসঙ্গে আসত। আমি গোপনে কিছু বলিনি।
২১ কেন আপনি আমাকে জিজ্ঞাসা করছেন? আমি কি বলেছি সে বিষয়ে যারা শুনেছে তাদের জিজ্ঞাসা করুন। আমি কি বলেছি সে বিষয়ে এই লোকেরা জানে।”
২২ যখন যীশু এই কথা বললেন, তখন পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একজন আধিকারিক যীশুকে হাত দিয়ে আঘাত করে বললেন, “মহাযাজকদের সাথে কি এই ভাবে কথা বলা উচিত?”
২৩ যীশু তাহাকে উত্তর দিলেন, “আমি যদি কোনো কিছু খারাপ বলে থাকি, সেই খারাপের সাক্ষ্য দাও। যদি আমি ঠিক উত্তর দিয়ে থাকি, কেন তোমরা আমাকে মারছ?”
২৪ তারপরে বাঁধা অবস্থায় আন্না তাঁকে কায়াফা মহাযাজকদের কাছে পাঠিয়ে দিলেন।
অতএব তারা একটি দ্বিতীয় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মহা যাজকের কাছে যীশুকে পাঠাল I
দ্বিতীয় জিজ্ঞাসাবাদ
তারা সেখানে তাঁকে সমস্ত নেতাদের সামনে জিজ্ঞাসাবাদ করল I সুসমাচার এই দ্বিতীয় জিজ্ঞাসাবাদ লিপিবদ্ধ করেছিল:
৫৩ পরে তারা যীশুকে মহাযাজকের কাছে নিয়ে গেল; তাঁর সঙ্গে প্রধান যাজকরা, প্রাচীনরা ও ব্যবস্থার শিক্ষকেরা জড়ো হল।
মার্ক ১৪:৫৩-৬৫
৫৪ আর পিতর দূরে দূরে থেকে তাঁর পেছন পেছন ভিতরে, মহাযাজকের উঠোন পর্যন্ত গেলেন এবং পাহারাদারদের সঙ্গে বসে আগুন পোহাতে লাগলো।
৫৫ তখন প্রধান যাজকরা এবং সমস্ত মহাসভা যীশুকে বধ করার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রমাণ খুঁজতে লাগল,
৫৬ কিন্তু অনেকে তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যাসাক্ষী এসে জুটলেও তাদের সাক্ষ্য মিললো না।
৫৭ পরে একজন দাঁড়িয়ে তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যাসাক্ষ্য দিয়ে বলল,
৫৮ আমরা ওনাকে এই কথা বলতে শুনেছি, আমি এই হাতে তৈরী উপাসনার ঘর ভেঙে ফেলবো, আর তিন দিনের ভেতরে হাতে তৈরী নয় আর এক উপাসনার ঘর তৈরী করব।
৫৯ এতে ও তাদের সাক্ষ্য মিললো না।
৬০ তখন মহাযাজক মাঝখানে দাঁড়িয়ে যীশুকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি কিছুই উত্তর দেবে না? তোমার বিরুদ্ধে এরা কিসব বলছে?’
৬১ কিন্তু তিনি চুপচাপ থাকলেন, কোন উত্তর দিলেন না। আবার মহাযাজক তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি সেই খ্রীষ্ট, সেই মহিমার পুত্র?
৬২ যীশু বললেন, “আমি সেই; আর এখন থেকে তোমরা মনুষ্যপুত্রকে পরাক্রমের (সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের) ডান পাশে বসে থাকতে এবং আকাশের মেঘরথে আসতে দেখবে।”
৬৩ তখন মহাযাজক নিজের কাপড় ছিঁড়ে বললেন, আর সাক্ষীতে আমাদের কি দরকার?
৬৪ তোমরা ত ঈশ্বরনিন্দা শুনলে তোমাদের মতামত কি? তারা সবাই তাঁকে দোষী করে বলল, একে মেরে ফেলা উচিত।
৬৫ তখন কেউ কেউ তাঁর গায়ে থুথু দিতে লাগলো এবং তাঁর মুখ ঢেকে তাঁকে ঘুষি মারতে লাগলো, আর বলতে লাগলো, ঈশ্বরের বাক্য বল না? পরে পাহারাদাররা মারতে মারতে তাঁকে নিয়ে গেলো।
যিহূদি নেতারা যীশুকে মৃত্যুদণ্ড দিলেন I তবে যেহেতু রোমীয় রাজ্যপাল তাদের শাসন করত, কেবলমাত্র রোমীয় রাজ্যপালই একটি মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন করতে পারত I সুতরাং তারা যীশুকে রোমীয় রাজ্যপাল পন্তিয়াস পীলাতের কাছে নিয়ে গেল I সুসমাচার আরও লিপিবদ্ধ করে যীশুর বিশ্বাসঘাতক যুদাস ইস্করিয়োতের সাথে কি ঘটেছিল I
বিশ্বাসঘাতক যুদাসের সাথে কি ঘটল?
১ সকাল হলে প্রধান যাজকেরা ও প্রাচীনেরা সবাই যীশুকে বধ করার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করল
মথি ২৭:১-৫
২ আর তাঁকে বেঁধে নিয়ে গিয়ে দেশাধ্যক্ষ পীলাতের কাছে সমর্পণ করল।
৩ তখন যিহূদা, যে তাঁকে সমর্পণ করেছিল, সে যখন বুঝতে পারল যে, যীশুকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে, তখন অনুশোচনা করে সেই ত্রিশটা রূপার মুদ্রা প্রধান যাজক ও প্রাচীনদের কাছে ফিরিয়ে দিল।
৪ আর বলল, “আমি নির্দোষ ব্যক্তির রক্তমাংসের বিরুদ্ধে পাপ করেছি।” তারা বলল, “আমাদের কি? তা তুমি বুঝবে।”
৫ তখন সে ঐ সমস্ত মুদ্রা মন্দিরের মধ্যে ফেলে দিয়ে চলে গেল এবং গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করল।
যীশুকে রোমীয় রাজ্যপালের দ্বারা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল
১১ ইতিমধ্যে যীশুকে শাসনকর্ত্তার কাছে দাঁড় কারণ হল। শাসনকর্ত্তা তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কি ইহূদিদের রাজা?” যীশু তাঁকে বললেন, “তুমিই বললে।
মথি ২৭:১১-২৬
১২ কিন্তু প্রধান যাজকেরা ও প্রাচীনেরা তাঁর উপরে মিথ্যা দোষ দিতে লাগল, তিনি সে বিষয়ে কোনো প্রতিবাদ করলেন না।
১৩ তখন পীলাত তাঁকে বললেন, “তুমি কি শুনছ না, ওরা তোমার বিরুদ্ধে কত বিষয়ে সাক্ষ দিচ্ছে?”’
১৪ তিনি তাঁকে একটি কথারও উত্তর দিলেন না, তাই দেখে শাসনকর্ত্তা খুবই আশ্চর্য্য হলেন।
১৫ আর শাসনকর্ত্তার এই রীতি ছিল, পর্বের দিনের তিনি লোকদের জন্য এমন একজন বন্দিকে মুক্ত করতেন, যাকে লোকেরা নির্বাচন করত।
১৬ সেই দিনের তাদের একজন কুখ্যাত বন্দী ছিল, তার নাম বারাব্বা।
১৭ তাই তারা একত্র হলে পীলাত তাদের বললেন, “তোমাদের ইচ্ছা কি, আমি তোমাদের জন্য কাকে মুক্ত করব? বারাব্বাকে, না যীশুকে, যাকে খ্রীষ্ট বলে?”
১৮ রণ তিনি জানতেন, তারা হিংসার জন্যই তাঁকে সমর্পণ করেছিল।
১৯ তিনি বিচারাসনে বসে আছেন, এমন দিনের তাঁর স্ত্রী তাঁকে বলে পাঠালেন, “সেই ধার্ম্মিকের প্রতি তুমি কিছুই কোর না, কারণ আমি আজ স্বপ্নে তাঁর জন্য অনেক দুঃখ পেয়েছি।”
২০ আর প্রধান যাজকেরা ও প্রাচীনেরা লোকদেরকে বোঝাতে লাগল, যেন তারা বারাব্বাকে নির্বাচন করে ও যীশুকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়।
২১ তখন শাসনকর্ত্তা তাদের বললেন, “তোমাদের ইচ্ছা কি? সেই দুইজনের মধ্যে কাকে মুক্ত করব?” তারা বলল, “বারাব্বাকে।”
২২পীলাত তাদের বললেন, “তবে যীশু, যাকে খ্রীষ্ট বলে, তাকে কি করব?” তারা সবাই বলল, “ওকে ক্রুশে দাও”
২৩ তিনি বললেন, “কেন? সে কি অপরাধ করেছে?” কিন্তু তারা আরও চেঁচিয়ে বলল, “ওকে ক্রুশে দাও।”
২৪ পীলাত যখন দেখলেন যে, তাঁর চেষ্টা বিফল, বরং আরও গন্ডগোল বাড়ছে, তখন জল নিয়ে লোকদের সামনে হাত ধুয়ে বললেন, “এই ধার্মিক ব্যক্তির রক্তপাতের সম্বন্ধে আমি নির্দোষ, তোমরাই তা বুঝবে।”
২৫ তাতে সমস্ত লোক এর উত্তরে বলল, “ওর রক্তের জন্য আমারা ও আমাদের সন্তানেরা দায়ী থাকব।”
২৬ তখন তিনি তাদের জন্য বারাব্বাকে ছেড়ে দিলেন এবং যীশুকে কোড়া (চাবুক) মেরে ক্রুশে দেবার জন্য জনসাধারণের হাতে সমর্পণ করলেন।যীশুর ক্রুশারোপন, মৃত্যু এবং সমাধি
সুসমাচার তখন যীশুর ক্রুশারোপণের বিস্তৃত বর্ননা লিপিবদ্ধ করে I
২৭ তখন শাসনকর্ত্তার সেনারা যীশুকে রাজবাড়িতে নিয়ে গিয়ে তাঁর কাছে সমস্ত সেনাদের একত্র করল।
মথি ২৭:২৭-৫৪
২৮ আর তারা তাঁর বস্ত্র খুলে নিয়ে তাঁকে একটি লাল পোশাক পরিয়ে দিল।
২৯ আর কাঁটার মুকুট গেঁথে তাঁর মাথায় সেটা পরিয়ে দিল ও তাঁর হাতে একটি লাঠি দিল, পরে তাঁর সামনে হাঁটু পেতে বসে, তাঁকে ঠাট্টা করে বলল, “ইহূদি রাজ, নমস্কার!”
৩০ আর তারা তাঁর গায়ে থুথু দিল ও সেই লাঠি নিয়ে, তাঁর মাথায় আঘাত করতে থাকলো।
৩১ আর তাঁকে ঠাট্টা করার পর পোশাকটি খুলে নিল ও তারা আবার তাঁকে তাঁর নিজের পোশাক পরিয়ে দিল এবং তাঁকে ক্রুশে দেবার জন্য তাঁকে বাইরে নিয়ে গেল।
৩২ আর যখন তারা বাইরে এলো, তারা শিমোন নামে একজন কুরীনীয় লোকের দেখা পেল, তারা তাকেই, তাঁর ক্রুশ বহন করার জন্য বাধ্য করল।
৩৩ পরে গলগথা নামে এক জায়গায়, অর্থাৎ যাকে “মাথার খুলি” বলা হয়,
৩৪ সেখানে উপস্থিত হয়ে তারা তাঁকে পিত্তমিশ্রিত তেতো আঙ্গুরের রস পান করতে দিল, তিনি তা একটু পান করেই আর পান করতে চাইলেন না।
৩৫ পরে তারা তাঁকে ক্রুশে দিয়ে তাঁর পোশাক নিয়ে, গুটি চেলে ভাগ করে নিল,
৩৬ আর সেখানে বসে তাঁকে পাহারা দিতে লাগল।
৩৭ আর তারা তাঁর মাথার উপরে তাঁর বিরুদ্ধে এই দোষের কথা লিখে লাগিয়ে দিল, এ ব্যক্তি যীশু, ইহূদিদের রাজা।
৩৮ তখন দুই জন দস্যুকেও তাঁর সঙ্গে ক্রুশে বিদ্ধ করা হল, একজন ডান পাশে আর একজন বাঁপাশে।
৩৯ তখন যারা সেই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করছিল, তারা মাথা নেড়ে নেড়ে খ্রীষ্টকে নিন্দা করে বলল,
৪০ “এই যে, তুমি না মন্দির ভেঙে ফেল, আর তিন দিনের র মধ্যে তা গাঁথবে! নিজেকে রক্ষা কর, যদি ঈশ্বরের পুত্র হও, ক্রুশ থেকে নেমে এস।”
৪১ আর একইভাবে প্রধান যাজকেরা, ব্যবস্থার শিক্ষকেরা ও প্রাচীনেরা একসঙ্গে ঠাট্টা করে বলল,
৪২ “ঐ ব্যক্তি অন্য অন্য লোককে রক্ষা করত, আর নিজেকে রক্ষা করতে পারে না ও তো ইস্রায়েলের রাজা! এখন ক্রুশ থেকে নেমে আসুক, তাহলে আমরা ওর উপরে বিশ্বাস করব,
৪৩ ও ঈশ্বরে বিশ্বাস রাখে, এখন তিনি ওকে বাঁচান, যদি ওকে রক্ষা করতে চান, কারণ ও তো বলেছে, আমি ঈশ্বরের পুত্র।”
৪৪ আর যে দুই জন দস্যু তাঁর সঙ্গে ক্রুশে বিদ্ধ হয়েছিল, তারাও তেমন ভাবে তাঁকে ঠাট্টা করল।
৪৫ পরে বেলা বারোটা থেকে বিকাল তিনটে পর্যন্ত সমস্ত দেশ অন্ধকার হয়ে থাকল।
৪৬ আর বিকাল তিনটের দিন যীশু উঁচুস্বরে চীৎকার করে বললেন, “এলী এলী লামা শবক্তানী, অর্থাৎ ঈশ্বর আমার, ঈশ্বর আমার, তুমি কেন আমায় পরিত্যাগ করেছ?”
৪৭ তাতে যারা সেখানে দাঁড়িয়েছিল, তাদের মধ্যে কেউ কেউ সেই কথা শুনে বলল, “এ ব্যক্তি এলিয়কে ডাকছে।”
৪৮ আর তাদের একজন অমনি দৌড়ে গেল, একটি স্পঞ্জ নিয়ে সিরকায় ডুবিয়ে নিয়ে এলো এবং একটা লাঠিতে লাগিয়ে তাঁকে পান করতে দিল।
৪৯ কিন্তু অন্য সবাই বলল, “থাক, দেখি এলিয় ওকে রক্ষা করতে আসেন কি না।”
৫০ পরে যীশু আবার উঁচুস্বরে চীৎকার করে নিজের আত্মাকে সমর্পণ করলেন।
৫১ আর তখনি, মন্দিরের তিরস্করিনী (পর্দা) উপর থেকে নীচ পর্যন্ত চিরে দুভাগ হল, ভূমিকম্প হল ও পাথরের চাঁই ফেটে গেল,
৫২ আর অনেক কবর খুলে গেল ও অনেক পবিত্র লোকের মৃতদেহ জীবিত হল,
৫৩ আর তাঁর পুনরুত্থানের পর তাঁরা কবর থেকে বের হয়ে পবিত্র শহরে প্রবেশ করলেন, আর অনেক লোককে তাঁরা দেখা দিলেন।
৫৪ শতপতি এবং যারা তাঁর সঙ্গে যীশুকে পাহারা দিচ্ছিল, তারা ভূমিকম্প ও আর যা যা ঘটছিল, তা দেখে খুবই ভয় পেয়ে বলল, “সত্যই, ইনি ঈশ্বরের পুত্র ছিলেন।”
তাঁর পাঁজরে ‘ছিদ্র’ করা হয়
যোহনের সুসমাচার ক্রুশারোপণের এক আকর্ষণীয় বর্ণনা লিপিবদ্ধ করে I এটি বলে:
যোহন ১৯:৩১-৩৫৩১ এটাই ছিল আয়োজনের দিন এবং আদেশ ছিল যে বিশ্রামবারে সেই মৃতদেহগুলো ক্রুশের ওপরে থাকবে না (কারণ বিশ্রামবার ছিল একটা বিশেষ দিন), ইহুদীরা পীলাতকে জিজ্ঞাসা করলেন যে লোকদের পা গুলি ভেঙে ফেলে এবং তাদের দেহগুলো নিচে নামানো হবে।
৩২ তারপর সৈন্যরা এসেছিল এবং প্রথম লোকটী পা গুলি ভাঙলো এবং দ্বিতীয় লোকটিরও যাদের যীশুর সঙ্গে ক্রুশে বিদ্ধ করা হয়েছিল।
৩৩ তখন যারা যীশুর কাছে এসেছিল, তারা দেখল যে তিনি মারা গেছেন, সুতরাং তারা তাঁর পা গুলি ভাঙলো না।৩৪ তা সত্বেও সৈন্যদের মধ্যে একজন বল্লম দিয়ে তাঁর পাঁজরে খোঁচা দিল এবং তখনই রক্ত এবং জল বেরিয়ে এল।৩৫ একজন যে দেখেছিল সে প্রত্যক্ষ সাক্ষ্য দিয়েছে এবং তার সাক্ষ্য সত্য; তিনি জানতেন যে তিনি যা বলছেন সত্য যেন তোমরাও বিশ্বাস করতে পার।
যোহন রোমীয় সৈন্যদের দ্বারা যীশুকে একটি বর্শা দিয়ে ছিদ্র করতে দেখেছিল I রক্ত এবং জল আলাদাভাবে বেরিয়া আসা, সংকেত দেয় যে হৃদয় যন্ত্র ব্যর্থ হওয়ায় তাঁর মৃত্যু ঘটেছিল I
অনেকে আবার মহা শিবরাত্রিকে উদযাপন করে কারণ সেই দিন শিব পার্বতীকে বিবাহ করেছিলেন বলে তারা এটিকে বিবেচনা করে I শুভ শুক্রবারের সমান্তরাল মহা শিবরাত্রির সেই দিনে যীশু তাঁর রহস্যময় কনেও জিতেছিলেন, তাঁর পাঁজরে বর্শা দ্বারা ছাপ মেরে, এখানে আরও বাখ্যা করা হয়েছে I
যীশুর সমাধি
সুসমাচার সেই দিনের চূড়ান্ত ঘটনা লিপিবদ্ধ করে – তাঁর সমাধি I
৫৭ পরে সন্ধ্যা হলে অরিমাথিয়ার একজন ধনী ব্যক্তি এলো, তাঁর নাম যোষেফ, তিনি নিজেও যীশুর শিষ্য হয়েছিলেন।
মথি ২৭:৫৭-৬১
৫৮ তিনি পীলাতের কাছে গিয়ে যীশুর মৃতদেহ চাইলেন। তখন পীলাত তাঁকে তা নিয়ে যেতে আদেশ দিলেন।
৫৯ তাতে যোষেফ মৃতদেহটি নিয়ে পরিষ্কার কমল কাপড়ে জড়ালেন,
৬০ এবং তাঁর নতুন কবরে রাখলেন, যেই কবর তিনি পাহাড় কেটে বানিয়ে ছিলেন, আর সেই কবরের মুখে একটি বড় পাথর গড়িয়ে দিয়ে চলে গেলেন।
৬১ মগ্দলীনী মরিয়ম ও অন্য মরিয়ম সেখানে ছিলেন, তাঁরা কবরের সামনে বসে থাকলেন।
৬ষ্ঠ দিন – শুভ শুক্রবার
প্রত্যেক দিন যিহূদি ক্যালেন্ডার সূর্যাস্তে আরম্ভ হয় I সুতরাং দিন 6 শিষ্যদের সঙ্গে শেষ নৈশ ভোজে ভাগ নেওয়ার সাথে আরম্ভ হ’ল I সেই দিনের শেষে তাঁকে গ্রেফতার করা হ’ল, সারা রাত ধরে অনেকবার বিচারে রাখা হ’ল, ক্রুশবিদ্ধ করা হ’ল, একটি বর্শা দিয়ে ছিদ্র করা হ’ল, এবং সমাধিস্থ করা হ’ল I এটি প্রকৃতপক্ষে যীশুর ‘এক মহা রাত্রি’ ছিল I যন্ত্রণা, দুখ, অপমান, এবং মৃত্যু এই দিনটিকে চিহ্নিত করেছিল এবং তাই লোকেরা মহা শিবরাত্রির মতই উদ্বিগ্ন চিন্তায় এটি স্মরণ করে I কিন্তু এই দিনটিকে ‘শুভ শুক্রবার’ বলা হয় I তবে কিভাবে বিশ্বাসঘাতকতা, অত্যাচার এবং মৃত্যুর একটি দিনকে কখনও ‘ভাল’ বলা হয়?
কেন শুভ শুক্রবার এবং ‘খারাপ শুক্রবার’ নয়?
যেভাবে শিব সাপের বিষ গলাধ:করণ করে পৃথিবীকে রক্ষা করেছিল, সেইভাবে যীশু তাঁর কাপ পান করে বিশ্বকে রক্ষা করেছিল I এটি নীসনের ১৪ তারিখে, পড়েছিল, সেই একই নিস্তারপর্বের দিন যখন ১৫০০ বছর পূর্বে, বলি দেওয়া মেষ শাবক মৃত্যু থেকে রক্ষা করেছিল যা দেখায় এটিকে পরিকল্পনা করা হয়েছিল I
মানুষের বৃত্তান্ত তাদের মৃত্যুর সাথে শেষ হয়ে যায়, কিন্তু যীশুর নয় I পরে এসেছিল সাবাথ – দিন 7