Skip to content

জীবন্ত জল: গঙ্গা তীর্থের চশমার মাধ্যমে

  • by

এক প্রভাবশালী তীর্থ প্রয়োজনীয় হয় যদি কেউ ঈশ্বরের সাক্ষাত্কার আশা করে I তীর্থ (সংস্কৃত तीर्थ) যার অর্থ হ’ল “পার করার স্থান, নদী”, এবং যে কোনো পবিত্র স্থান, পাঠ্য বা ব্যক্তিকে বোঝায় I তীর্থ বাক্যগুলোর মধ্যে একটি পবিত্র স্পর্শকারী সংযোগ স্থল এবং তবুও একে অপরের থেকে  আলাদা I বৈদিক গ্রন্থ সমূহের মধ্যে, তীর্থ (বা ক্ষেত্র, গোপিথা এবং মহালয়া) এক পবিত্র ব্যক্তি বা পবিত্র গ্রন্থকে বোঝায়, যা এক অস্তিত্বের থেকে অন্য অবস্থায় রূপান্তর করতে পারে I       

তীর্থ-যাত্রা তীর্থের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত যাত্রা

আমরা আমাদের অভ্যন্তরীণ সত্তা সমূহকে পুনরুজ্জীবিত ও পবিত্র করতে তীর্থ-যাত্রা করি, এবং ভ্রমণের মধ্যে আধ্যাত্মিক যোগত্যার কারণে, বৈদিক গ্রন্থ সমূহের মধ্যে একটি থিম নিশ্চিত হয় I তারা দৃঢ়ভাবে বলে যে তীর্থ-যাত্রা পাপ থেকে মুক্তি দিতে পারে I তীর্থ=যাত্রা অভ্যন্তরীণ ধ্যান যাত্রা থেকে শুরু করে শারীরিকভাবে বিখ্যাত মন্দির ভ্রমন করতে পারে বা গঙ্গার মতন নদীতে স্নান, সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তীর্থ স্থল I ভারতীয় পরম্পরায় জল সবচেয়ে পবিত্র প্রতীক I গঙ্গার জল দিয়ে বিশেষত তাই I গঙ্গা নদীর দেবীকে গঙ্গা মাতা বলে শ্রদ্ধা করা হয় I       

তীর্থ হিসাবে গঙ্গার জল

গঙ্গা এর পুরো দৈর্ঘ্য জুড়ে পবিত্র I প্রতি দিনের আচার অনুষ্ঠান, পৌরানিক কাহিনী, উপাসনা পদ্ধতি এবং দেবী গঙ্গার শক্তি এবং তার জীবন্ত জলের প্রতি বিশ্বাস আজও ভক্তির কেন্দ্রবিন্দু I অনেক মৃত্যুর আচার অনুষ্ঠানে গঙ্গা জলের প্রয়োজন হয় I এইভাবে গঙ্গা জীবিত এবং মৃতদের মধ্যে তীর্থে পরিণত হয় I বলা হয় গঙ্গা তিনটি বিশ্বে প্রবাহিত: স্বর্গ, পৃথিবী, এবং ভূতল যাকে ত্রিলোক-পথ-গামিনী রূপে উল্লেখ করা হয় I এইভাবে এটি গঙ্গার ত্রিশালিতে (“তিনটি স্থান সমূহ”) যেখানে শ্রদ্ধা এবং বিসর্জন সাধারনত অনুষ্ঠিত হয় I অনেকে চায় তাদের ভষ্ম গঙ্গা নদীতে রাখা হোক I    

পর্বতের মধ্যে গঙ্গা নদী

গঙ্গার পুরাণশাস্ত্র  

শিব, গঙ্গাধারা বা “গঙ্গার বাহক”, যাঁকে গঙ্গার সঙ্গী বলা হয় I বৈদিক গ্রন্থে গঙ্গার অবতরণে শিবের ভূমিকা সম্পর্কে বলা হয়েছে I যখন গঙ্গা পৃথিবীতে অবতরণ করল, শিব তার মাথায় তাকে ধরার প্রতিশ্রুতি দিল যাতে পতন পৃথিবীকে টুকরো টুকরো না করে I গঙ্গা যখন শিবের মাথায় পড়ল, শিবের কেশ তার পতনকে ভেঙ্গে গঙ্গাকে সাতটি ধারায় ভগ্ন করল, প্রতিটি ভারতের বিভিন্ন অংশে প্রবাহিত হল I সুতরাং কেউ যদি গঙ্গা নদীর যাত্রা না করতে পারে তবে একটি যাত্রা এই অন্য পবিত্র ধারাগুলোতে করতে পারা যায়, যেগুলোকে বিশ্বাস করা হয় গঙ্গার মতন একই পবিত্রতা ধারণ করে: যমুনা, গোদাবরী সরস্বতী, নর্মদা, সিন্ধু এবং কাবেরী I      

গঙ্গার অবতরণ অবিরাম বলে বিবেচনা করা হয়; গঙ্গার প্রত্যেকটি ঢেউ পৃথিবীকে স্পর্শ করার পূর্বে শিবের মাথাকে স্পর্শ করে I গঙ্গা শিবের শক্তি বা বলের তরল রূপ I একটি তরল শক্তি হওয়ায় গঙ্গা ঈশ্বরের অবতার I গঙ্গার ঐশ্বরিক অবতরণ, সকলের জন্য মুক্তভাবে প্রবাহিত হচ্ছে I তার অবতরণের  পরে গঙ্গা শিবের বাহনে পরিণত হয়েছিল, তার বাহনের (গাড়ি) শীর্ষে কুমীর (মকর) যখন তার হাতে একটি কুম্ভ (প্রচুর পরিমানে ফুলদানি) চিত্রিত  হয়েছে I    

গঙ্গা দশহরা

প্রতি বছর একটি উৎসব গঙ্গা দশহরা, গঙ্গার প্রতি উৎসর্গীকৃত করে এই পৌরাণিক অনুষ্ঠানগুলো উদযাপন করে I উৎসবটি মে এবং জুনের মধ্যে দশ দিন ধরে চলে, জৈষ্ঠ মাসের দশম দিনে শেষ হয় I এই দিনে, স্বর্গ থেকে মর্ত্যে গঙ্গার অবতরণকে (অবতারণা) উদযাপন করা হয় I সেই দিনে গঙ্গার জলে বা অন্য পবিত্র ধারায় একটি দ্রুত অবগাহনকে দশটি পাপ (দশহারা) বা জীবনকালের পাপগুলো থেকে মুক্তি পাবে বলে ভাবা হয় I       

যীশু: তীর্থ আপনাকে জীবন্ত জল দেয়

যীশু নিজেকে বর্ণনা করতে এই একই বিশেষ ধারণাগুলোকে ব্যবহার   করেছিলেন I তিনি ঘোষণা করলেন তিনি হলেন অনন্ত জীবন প্রদানকারী ‘জীবন্ত জল’ I এটি তিনি একজন স্ত্রীকে বললেন যে পাপের মধ্যে আটকে পড়েছিল  এবং যার ফলে আমাদের মধ্যে সকলে যারা একই অবস্থায় আছে I বাস্তবে তিনি বলছিলেন তিনি তীর্থ এবং আমরা সবথেকে গুরুত্ত্বপূর্ণ তীর্থযাত্রা করতে পারি  তাঁর কাছে এসে I এই স্ত্রীটি দেখতে পেল যে তার সমস্ত পাপ সমূহ, কেবল দশটি নয়, চিরকালের নিমিত্ত শুদ্ধ হয়েছিল I আপনি যদি গঙ্গার জল পেতে দুরে যাত্রা করেন এর শুদ্ধ করার ক্ষমতার জন্য, তাহলে যীশুর দ্বারা প্রস্তাবিত ‘জীবন্ত জল’ কে বুঝে দেখুন I এই জলে আপনার শারীরিক যাত্রা করার দরকার নেই বরং স্ত্রীটি যেমন আবিষ্কার করল, আপনাকে অভ্যন্তরীণ শুদ্ধতার মধ্যে আত্ম-উপলব্ধিতায় যাত্রা করতে হবে তাঁর জল আপনাকে পবিত্র করার আগে I    

সুসমাচারটি এই সাক্ষাত্কারটি লিপিবদ্ধ করে:

যীশু এক শমরিয় স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন

১ প্রভু যখন জানতে পারলেন যে, ফরীশীরা শুনেছে, যীশু যোহনের চেয়ে অনেক বেশি শিষ্য করেন এবং বাপ্তিষ্ম দেন 

২ যদিও যীশু নিজে বাপ্তিষ্ম দিতেন না কিন্তু তাঁর শিষ্যরাই দিতেন, 

৩ তখন তিনি যিহূদিয়া ছাড়লেন এবং আবার গালীলে চলে গেলেন। 

৪ আর গালীলে যাবার দিন শমরিয়ার মধ্য দিয়ে তাঁকে যেতে হল। 

৫ তখন তিনি শুখর নামক শমরিয়ার এক শহরের কাছে আসলেন; যাকোব তাঁর পুত্র যোষেফকে যে জমি দান করেছিলেন এই শহর তার কাছে। 

৬আর সেই জায়গায় যাকোবের কূপ ছিল। তখন যীশু হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে পড়লে সেই কূপের পাশে বসলেন। তখন অনুমানে দুপুর বেলা ছিল। 

৭ শমরিয়ার একজন স্ত্রীলোক জল তুলতে এসেছিলেন এবং যীশু তাকে বললেন, “আমাকে পান করবার জন্য একটু জল দাও।”

৮ কারণ তাঁর শিষ্যেরা খাবার কেনার জন্য শহরে গিয়েছিলেন। 

৯ তখন শমরীয় স্ত্রীলোকটী তাঁকে বললেন, আপনি ইহূদি হয়ে কেমন করে আমার কাছে পান করবার জন্য জল চাইছেন? আমি ত একজন শমরীয় স্ত্রীলোক। কারণ শমরীয়দের সঙ্গে ইহূদিদের কোনো আদান প্রদান নেই। 

১০ যীশু উত্তরে তাকে বললেন, তুমি যদি জানতে, ঈশ্বরের দান কি, আর কে তোমাকে বলছেন, আমাকে পান করবার জল দাও, তবে তাঁরই কাছে তুমি চাইতে এবং তিনি হয়তো তোমাকে জীবনদায়ী জল দিতেন।

১১ স্ত্রীলোকটী তাঁকে বলল, মহাশয়, জল তোলার জন্য আপনার কাছে বালতি নেই এবং কূপটীও গভীর; তবে সেই জীবন জল আপনি কোথা থেকে পেলেন? 

১২ আমাদের পিতৃপুরুষ যাকোব থেকে কি আপনি মহান? যিনি আমাদেরকে এই কূপ দিয়েছেন, আর এই কূপের জল তিনি নিজে ও তাঁর পুত্রেরা পান করতেন ও তার পশুর পালও পান করত। 

১৩ যীশু উত্তর দিয়ে তাকে বললেন, যে কেউ এই জল পান করে, তার আবার পিপাসা পাবে;

১৪ কিন্তু আমি যে জল দেব তা যে কেউ পান করবে তার আর কখনও পিপাসা পাবে না; বরং আমি তাকে যে জল দেব তা তার অন্তরে এমন জলের ফোয়ারার মত হবে যা অনন্ত জীবন পর্যন্ত উথলিয়ে উঠবে।

১৫ স্ত্রীলোকটী তাঁকে বলল, মহাশয়, সেই জল আমাকে দিন যেন আমার পিপাসা না পায় এবং জল তোলার জন্য এখানে না আসতে হয়। 

১৬ যীশু তাকে বললেন, যাও আর তোমার স্বামীকে এখানে ডেকে নিয়ে এসো।

১৭ স্ত্রীলোকটী উত্তরে তাঁকে বললেন, আমার স্বামী নেই। যীশু তাকে উত্তরে বললেন, তুমি ভালই বলেছ যে, আমার স্বামী নেই;

১৮ কারণ তোমার পাঁচটি স্বামী ছিল এবং এখন তোমার সঙ্গে যে আছে সে তোমার স্বামী নয়; এটা তুমি সত্য কথা বলেছ।

১৯ স্ত্রীলোকটী তাঁকে বলল, মহাশয়, আমি দেখছি যে আপনি একজন ভবিষ্যৎ বক্তা। 

২০ আমাদের পূর্বপুরুষেরা এই পর্বতের উপর উপাসনা করতেন কিন্তু আপনারা বলে থাকেন যে, যিরূশালেমই হলো সেই জায়গা যে জায়গায় মানুষের উপাসনা করা উচিত। 

২১ যীশু তাকে উত্তর দিয়ে বললেন, হে নারী, আমাকে বিশ্বাস কর; একটা দিন আসছে যখন তোমরা না এই পর্বতে না যিরূশালেমে পিতার উপাসনা করবে।

২২ তোমরা যাকে জান না তাকে উপাসনা করছ; আমরা যাকে জানি তারই উপাসনা করি, কারণ ইহূদিদের মধ্য থেকেই পরিত্রান আসবে।

২৩ যদিও এমন দিন আসছে বরং এখনই সেই দিন, যখন প্রকৃত উপাসনাকারীরা আত্মায় ও সত্যে পিতার উপাসনা করবে; কারণ বাস্তবিক পিতা এই রকম উপাসনাকারী কে খোঁজ করেন।

২৪ ঈশ্বর আত্মা; এবং যারা তাঁকে উপাসনা করে, তাদেরকে আত্মায় ও সত্যে উপাসনা করতে হবে।

২৫ স্ত্রীলোকটী তাঁকে বলল, আমি জানি যে মশীহ আসছেন, যাকে খ্রীষ্ট বলে, তিনি যখন আসবেন তখন আমাদেরকে সব কিছু জানাবেন। 

২৬ যীশু তাকে বললেন, আমি, যে তোমার সঙ্গে কথা বলছি, আমিই সেই।

২৭ ঠিক সেই দিনের তাঁর শিষ্যরা ফিরে আসলেন। আর তারা আশ্চর্য্য হলেন যে তিনি কেন একটি স্ত্রীলোকের সঙ্গে কথা বলছেন, যদিও কেউ বলেননি, আপনি কি চান? অথবা কি জন্য তার সঙ্গে কথা বলছেন? 

২৮ তখন সেই স্ত্রীলোকটী নিজের কলসী ফেলে রেখে শহরে ফিরে গেল এবং লোকদের বলল, 

২৯ এস, দেখো একজন মানুষ আমি যা কিছু আজ পর্যন্ত করেছি তিনি সব কিছুই আমাকে বলে দিলেন; তিনি কি সেই খ্রীষ্ট নন? 

৩০ তারা শহর থেকে বের হয়ে তাঁর কাছে আসলেন। 

৩১ এর মধ্যে শিষ্যরা তাঁকে আবেদন করে বললেন, রব্বি, কিছু খেয়ে নিন। 

৩২ কিন্তু তিনি তাঁদের বললেন, আমার কাছে খাবার জন্য খাদ্য আছে যার সম্পর্কে তোমরা জান না।

৩৩ সেইজন্য শিষ্যেরা একে অপরকে বলতে লাগলেন, কেউ তো ওনার খাবার জন্য কিছু আনেনি, এনেছে কি? 

৩৪ যীশু তাঁদের বললেন, আমার খাদ্য এই যে যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন যেন তাঁর ইচ্ছা পালন করি এবং তাঁর কাজ সম্পূর্ণ করি।

৩৫ তোমরা কি বল না, “এখনো চার মাস বাকি তারপরে শস্য কাটবার দিন আসবে? আমি তোমাদেরকে বলছি, চোখ তুলে শস্য ক্ষেতের দিকে তাকাও, শস্য পেকে গেছে, কাটার দিন হয়েছে।”

৩৬ যে ফসল কাটে সে বেতন পায় এবং অনন্ত জীবনের জন্য ফল জড়ো করে রাখে; সুতরাং যে বীজ বোনে ও যে ফসল কাটে সবাই একসঙ্গে আনন্দ করে।

৩৭ কারণ এই কথা সত্য যে, একজন বোনে অন্য একজন কাটে।

৩৮ আমি তোমাদের ফসল কাটতে পাঠালাম, যার জন্য তোমরা কোনো কাজ করনি; অন্য লোক পরিশ্রম করেছে এবং তোমরা তাদের পরিশ্রম করা ক্ষেতে ঢুকেছ।

৩৯ সেই শহরের শমরীয়েরা অনেকে তাঁতে বিশ্বাস করল কারণ সেই স্ত্রীলোকটী সাক্ষ্য দিয়েছিল যে, আমি যা কিছু আজ পর্যন্ত করেছি তিনি আমাকে সব কিছুই বলে দিয়েছেন। 

৪০ সুতরাং সেই শমরীয়েরা যখন তাঁর কাছে আসল, তারা তখন তাঁকে অনুরোধ করল যেন তিনি তাদের সঙ্গে থাকেন এবং তাতে তিনি দুই দিন সেখানে ছিলেন। 

৪১ এবং আরও অনেক লোক তাঁর কথা শুনে বিশ্বাস করল; 

৪২ তারা সেই স্ত্রীলোককে বলতে লাগল, আমরা যে বিশ্বাস করছি সে শুধুমাত্র তোমার কথা শুনে নয়, কারণ আমরা নিজেরা শুনেছি ও এখন জানতে পেরেছি যে, ইনি হলেন প্রকৃত জগতের ত্রাণকর্ত্তা।

যোহন ৪:১-৪২

যীশু দুটি কারণের জন্য জল চাইলেন I প্রথমত, তিনি তৃষ্ণার্ত ছিলেন I তবে তিনি (একজন ঋষি হওয়ায়) জানতেন যে সে এছাড়াও এক সম্পূর্ণ ভিন্ন উপায়ে তৃষ্ণার্ত ছিল I সে তার জীবনে সন্তুষ্টির জন্য তৃষ্ণার্ত ছিল I সে ভাবল পুরুষদের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন করে সে তার তৃষ্ণাকে সন্তুষ্ট করতে   পারে I তার কাছে কয়েকজন পতি ছিল এবং এমনকি সে যীশুকে বলছিল যে সে যে পুরুষটির সংগে থাকছে সেও তার পতি ছিল না I তার প্রতিবেশীরা তাকে অনৈতিক হিসাবে দেখত I এই জন্যই সম্ভবত সে দুপুরবেলায় একা জল আনতে গিয়েছিল যেহেতু গ্রামের অন্যান্য মহিলারা তাকে সঙ্গে নিতে চাইত না যখন তারা সকালের ঠান্ডায় কুয়োতে জল আনতে যেত I স্ত্রীটির অনেক পুরুষ ছিল, এবং এটি তাকে গ্রামের অনান্য মহিলাদের থেকে পৃথক করেছিল I      

যীশু তৃষ্ণার সেই একই থিমটি ব্যবহার করেছিলেন যাতে সে উপলব্ধি করতে পারে যে তার পাপের মূল ছিল তার জীবনে এক গভীর তৃষ্ণা – এমন একটি তৃষ্ণা যাকে নিবারণ করতে হয়েছিল I তিনি তার (এবং আমাদের কাছে) কাছে আরও ঘোষণা করছিলেন যে কেবলমাত্র তিনিই চূড়ান্তভাবে আমাদের অভ্যন্তরীণ তৃষ্ণা মেটাতে পারেন যা আমাদের সহজে পাপের মধ্যে নিয়ে যায় I 

বিশ্বাস করা – সত্যের মধ্যে স্বীকারোক্তি

তবে ‘জীবন্ত জলের’ এই প্রস্তাব স্ত্রীটিকে একটি সংকটের মধ্যে ফেলল I যীশু যখন তাকে তার পতিকে নিয়ে আসতে বললেন তিনি উদ্দেশ্যমূলকভাবে তাকে তার পাপকে স্বীকৃতি দিতে এবং স্বীকার করতে বাধ্য করছিলেন – এটি স্বীকার করার জন্য I আমরা যে কোনো মূল্যে এটিকে এড়িয়ে যাই! আমরা আমাদের পাপ লুকোতে পছন্দ করি। বা আমরা আমরা পাপের অজুহাত তৈরী করে যুক্তিযুক্ত করি I তবে আমরা যদি ‘অনন্ত জীবন’ গামী ঈশ্বরের বাস্তবতার অভিজ্ঞতা লাভ করি তাহলে আমাদের অবশ্যই সৎ হতে হবে এবং আমাদের পাপ স্বীকার করতে হবে, কারণ সুসমাচার তাই প্রতিশ্রুতি দেয়:

৮ যদি আমরা বলি আমাদের পাপ নেই তবে আমরা নিজেদেরকে ভুলাই এবং সত্য আমাদের মধ্যে নেই।
৯ কিন্তু যদি আমরা নিজের নিজের পাপ স্বীকার করি, তিনি বিশ্বস্ত ও ধার্মিক, তিনি আমাদের সব পাপ ক্ষমা করেন এবং আমাদের সব অধার্মিকতা থেকে শুচি করেন।

১ যোহন ১:৮-৯

এই কারণে, যীশু যখন শমরিয় স্ত্রীটিকে বললেন যে

২৪ ঈশ্বর আত্মা; এবং যারা তাঁকে উপাসনা করে, তাদেরকে আত্মায় ও সত্যে উপাসনা করতে হবে।

যোহন ৪:২৪

সত্য দ্বারা তিনি আমাদের নিজেদের সম্পর্কে সত্যবাদী হওয়া বোঝাতে চেয়েছিলেন, আমাদের ভুলকে আড়াল বা অজুহাত দেখানোর চেষ্টা করছেন না I আশ্চর্যজনক সংবাদ হ’ল যে ঈশ্বর ‘চান’ এবং আরাধনাকারীদের থেকে মুখ ফেরাবেন না যারা এই ভাবে সততার সাথে আসে – এতে কিছু এসে যায় না তারা কতটা অশুদ্ধ হয়েছে I 

তবে তার পাপকে স্বীকার করা তার পক্ষে অত্যন্ত কঠিন ছিল I লুকোনোর একটি সুবিধাজনক উপায় হ’ল আমাদের পাপের থেকে বিষয়টিকে ধর্মীয় দ্বন্দে পরিণত করা I পৃথিবীতে অনেক ধর্মীয় দ্বন্দ আছে I তখনকার দিনে শমরিয় এবং যিহূদিদের মধ্যে আরাধনার উপযুক্ত স্থান সম্বন্ধে এক ধর্মীয় দ্বন্দ ছিল I যিহূদিরা বলত আরাধনা যিরূশালেমে হওয়া উচিত আর শমরিয়রা ধরে ছিল এটি অন্য কোনো পর্বতে হওয়া উচিত I এই ধর্মীয় দ্বন্দের দিকে ফিরে সে কথাবার্তাটিকে তার পাপের থেকে সরিয়ে বিপথে নিয়ে যেতে আশা করছিল I সে এখন তার পাপকে তার ধর্মের পেছনে লুকোতে পারত I      

কত সহজ এবং স্বাভাবিকভাবে ভাবে আমরা একই জিনিস করি – বিশেষত আমরা যদি ধার্মিক হই I তখন আমরা বিচার করতে পারি অন্যরা কতটা ভুল আর আমরা কতটা সঠিক – যখন আমরা আমাদের পাপ স্বীকার করার প্রয়োজনকে উপেক্ষা করি I 

যীশু তার সঙ্গে এই দ্বন্দকে অনুসরণ করেন নি I তিনি জোর দিলেন যে আরাধনার স্থান অত বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়, তবে আরাধনার মধ্যে তার নিজের সততা বেশি মানে রাখে I সে ঈশ্বরের সামনে যে কোনো জায়গায় আসতে পারে (যেহেতু তিনি আত্মা), তবে এই ‘জীবন্ত জল’ গ্রহণ করতে পারার আগে তার সৎ আত্ম-উপলব্ধির প্রয়োজন I     

আমাদের সকলকে অবশ্যই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে

সুতরাং তাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ছিল I সে একটি ধর্মীয় দ্বন্দের পেছনে লুকিয়ে থাকা চালিয়ে যেতে বা হয়ত কেবল তাকে ছেড়ে দিতে পারত I তবে সে অবশেষে তার পাপ স্বীকার করতে পচ্ছন্দ করল – স্বীকার করতে – এত দূর পর্যন্ত যে সে অন্যদের বলতে গ্রামে ফিরে গেল কিভাবে এই ঋষি তাকে জানতেন এবং এবং তিনি কি করেছেন I সে আর লুকিয়ে থাকলো না I এইরকম করে সে একজন ‘বিশ্বাসী’ হয়ে গেল I সে আগে পূজা এবং ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান করত, কিন্তু এখন সে – এবং তার গ্রামের তারা – ‘বিশ্বাসী’ হয়ে গেল I   

একজন বিশ্বাসী হতে গেলে শুধুমাত্র মানসিকভাবে সঠিক শিক্ষার সঙ্গে একমত হওয়া নয় – যদিও সেটি গুরুত্বপূর্ণ। এটি হ’ল বিশ্বাস করার সম্বন্ধে যে তাঁর করুণার প্রতিশ্রুতির উপরে ভরসা করা যেতে পারে, আর তাই আপনার পাপকে আর ঢেকে রাখা উচিত নয় I এটাই দীর্ঘ সময় আগে আমাদের জন্য আব্রাহাম  নমুনা করেছিলেন – তিনি একটি প্রতিশ্রুতিতে ভরসা করেছিলেন I

আপনি কি আপনার পাপের অজুহাত করেন বা লুকিয়ে রাখেন? আপনি কি এটিকে ভক্তিপূর্ণ ধর্মীয় অনুশীলন বা ধর্মীয় দ্বন্দের সঙ্গে লুকিয়ে রাখেন? বা আপনি কি আপনার পাপ স্বীকার করেন? কেন আমাদের সৃষ্টিকর্তার সামনে এসে  সৎভাবে অপরাধ এবং লজ্জা সৃষ্টিকারী পাপকে স্বীকার করেন না? তখন আনন্দ করুন যে তিনি আপনার আরাধনা ‘চান’ এবং সমস্ত অধার্মিকতা থেকে আপনাকে পবিত্র করবেন I 

স্ত্রীটির তার প্রয়োজন সম্পর্কে সৎ গ্রহণযোগ্যতা তাকে খ্রীষ্টকে ‘মসীহ’ হিসাবে বোঝার জন্য পরিচালিত করেছিল এবং যীশুর দুদিন অবস্থান করার পরে তারা তাঁকে ‘জগতের উদ্ধারকর্তা’ হিসাবে বুঝতে পারল I হয়ত আমরা এটিকে এখনও পুরোপুরি বুঝি না I তবে স্বামী যোহন যেভাবে লোকেদের তাদের পাপ এবং প্রয়োজন স্বীকার করে বোঝার জন্য প্রস্তুত করেছিলেন, এটি আমাদের কিভাবে আমরা হারিয়ে গেছি তা সনাক্ত করতে এবং তাঁর কাছ থেকে জীবন্ত জল পান করতে প্রস্তুত করবে I 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *