Skip to content

শয়তানের দ্বারা যীশু প্রলোভিত হন – সেই প্রাচীন অসুর সর্প

  • by

হিন্দু পুরাণ সময়ের বিবরণ দেয় যখন কৃষ্ণ শত্রু অসুরদের সঙ্গে লড়াই করে পরাজিত করল, বিশেষত অসুর রাক্ষসরা কৃষ্ণকে সর্প রূপে ভয় দেখাচ্ছিল I ভাগবদ পুরাণ (শ্রীমদ্ভগবদ) গল্পটির বিবরণ দেয় যখন কংসের যে কৃষ্ণের জন্ম থেকে তাকে হত্যা করতে চেষ্টা করছিল এক মিত্র অঘাসুর এমন এক বৃহৎ সর্পের রূপ ধারণ করত যে যখন সে মুখ খুলত তখন এটি এক গুহার সাদৃশ্য হত I অঘাসুর পুতানার (যাকে কৃষ্ণ শিশু হয়ে তার থেকে বিষ চোষার সময়ে হত্যা করেছিল) ভাই এবং বকাসুর (যাকে কৃষ্ণ আবারও তার চঞ্চু ভেঙ্গে হত্যা করেছিল) আর এইরূপে প্রতিশোধ চেয়েছিল I অঘাসুর মুখ খুলল আর গোপী রাখাল বালকরা এটিকে জঙ্গলের মধ্যে এক গুহা ভেবে এর মধ্যে প্রবেশ করল I কৃষ্ণও এর মধ্যে গেলেন তবে এটিকে বকাসুর উপলব্ধি করে তিনি যতক্ষণ বকাসুর শ্বাস রুদ্ধ হয়ে মারা না যায় ততক্ষণ অবধি তার শরীর প্রসারিত করে রাখলেন I আর একটি ঘটনায়, জনপ্রিয় প্রদর্শনী শ্রী কৃষ্ণতে শক্তিশালী অসুর সর্প কালিয়ানাগকে নদীর মধ্যে তার সঙ্গে লড়াইয়ের সময়ে তার মাথার উপরে নৃত্য করে পরাজিত করলেন I           

পুরাণ আবারও অশুর নেতা এবং শক্তিশালী সর্প/রাক্ষস বৃত্রের বর্ণনা করে I ঋক বেদ ব্যাখ্যা করে যে দেবতা ইন্দ্র এক প্রচন্ড যুদ্ধে বৃত্রের সম্মুখীন হয়েছিল এবং তার বজ্রের (বজ্রযুদ্ধ) সাহায্যে তাকে হত্যা করেছিল, যা বৃত্রের চোয়াল ভেঙ্গে দিয়েছিল I ভাগবদ পুরাণের সংস্করণ ব্যাখ্যা করে যে বৃত্র এমন ধরণের এক বৃহৎ সর্প/রাক্ষস ছিল যে সে সমস্তকিছুকে ঢেকে ফেলত, এমনকি গ্রহ  এবং নক্ষত্রদের বিপদে ফেলত যাতে প্রত্যেকে তাকে ভয় পেত I বৃত্র দেবতাদের সঙ্গে যুদ্ধে আধিপত্য লাভ করেছিল I ইন্দ্র শক্তিতে তাকে পরাজিত করতে পারে নি, তবে ঋষি দধীচির হাড় চাওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল I দধীচি তার হাড়কে বজ্রযুদ্ধে পরিনত করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন যা ইন্দ্রকে অবশেষে  বিশাল সর্প বৃত্রকে পরাজিত এবং হত্যা করতে অনুমতি দিল I

হিব্রু বেদের শয়তান: সুন্দর আত্মা মারাত্মক সর্পে পরিনত হয়  

হিব্রু বেদ আবারও লিপিবদ্ধ করে যে একটি শক্তিশালী আত্মা আছে যে নিজেকে সর্বোচ্চ ঈশ্বরের এক প্রতিদ্বন্দী (শয়তান মানে ‘প্রতিদ্বন্দী’) রূপে স্থাপন করেছে I হিব্রু বেদ তাকে সুন্দর এবং বুদ্ধিমান হিসাবে বর্ণনা করেছে, প্রারম্ভে তাকে এক দেবতা রূপে সৃষ্টি করা হয়েছিল I এই বর্ণনাটিকে দেওয়া হয়েছে:   

১২ হে মনুষ্য-সন্তান, তুমি সোরের রাজার জন্য বিলাপ কর, ও তাহাকে বল, প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তুমি পরিমাণের মুদ্রাঙ্ক, তুমি পূর্ণজ্ঞান, তুমি সৌন্দর্য্যে সিদ্ধ; 

১৩ তুমি ঈশ্বরের উদ্যান এদনে ছিলে; সর্ব্বপ্রকার বহুমূল্য প্রস্তর, চূণি, পীতমণি, হীরক, বৈদূর্য্যমণি, গোমেদক, সূর্য্যকান্ত, নীলকান্ত, হরিণ্মণি ও মরকত, এবং স্বর্ণ তোমার আচ্ছাদন ছিল, তোমার ঢাকের ও বাঁশীর কারুকার্য্য তোমার মধ্যে ছিল; তোমার সৃষ্টিদিনে এ সকল প্রস্তুত হইয়াছিল। 

১৪ তুমি অভিষিক্ত আচ্ছাদক করূব ছিলে, আমি তোমাকে স্থাপন করিয়াছিলাম, তুমি ঈশ্বরের পবিত্র পর্ব্বতে ছিলে; তুমি অগ্নিময় প্রস্তর সকলের মধ্যে গমনাগমন করিতে। 

১৫ তোমার সৃষ্টি দিন অবধি তুমি আপন আচারে সিদ্ধ ছিলে; শেষে তোমার মধ্যে অন্যায় পাওয়া গেল। 

যিহিষ্কেল ২৮:১২-১৫ 

কেন এই শক্তিশালী দেবতার মধ্যে দুষ্টতা দেখা গিয়েছিল? হিব্রু বেদ ব্যাখ্যা কর

১৭ তোমার চিত্ত তোমার সৌন্দর্য্যে গর্ব্বিত হইয়াছিল; তুমি নিজ দীপ্তি হেতু আপন জ্ঞান নষ্ট করিয়াছ; আমি তোমাকে ভূমিতে নিক্ষেপ করিলাম, রাজগণের সম্মুখে রাখিলাম, যেন তাহারা তোমাকে দেখিতে পায়। 

যিহিষ্কেল ২৮:১৭

এই দেবতার পতন আরও বর্ণনা করা হয়:

১২ হে প্রভাতি-তারা! ঊষা-নন্দন! তুমি ত স্বর্গভ্রষ্ট হইয়াছ! হে জাতিগণের নিপাতনকারী, তুমি ছিন্ন ও ভূপাতিত হইয়াছ! 

১৩ তুমি মনে মনে বলিয়াছিলে, ‘আমি স্বর্গারোহণ করিব, ঈশ্বরের নক্ষত্রগণের ঊর্দ্ধে আমার সিংহাসন উন্নত করিব; সমাগম-পর্ব্বতে, উত্তরদিকের প্রান্তে, উপবিষ্ট হইব; 

১৪ আমি মেঘরূপ উচ্চস্থলীর উপরে উঠিব, আমি পরাৎপরের তুল্য হইব।’ 

যিশাইয় ১৪উইউহ৮৭৭৮:১২-১৪

শয়তান এখন

এই শক্তিশালী আত্মাকে এখন শয়তান (মানে ‘ফরিয়াদী’) বা ডেভিল  বলা হয় তবে প্রথম থেকে তাকে লুসিফার বলা হত – ‘ঊষার পুত্র’ i হিব্রু বেদ বলে সে একটি আত্মা, এক মন্দ অসুর, তবে অঘাসুর এবং বৃত্রের মতন তাকে এক সর্প বা রাক্ষসের রূপ ধারণকারী হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে I এইভাবেই পৃথিবীতে তার নিক্ষেপ ঘটেছিল:   

৭ আর স্বর্গে যুদ্ধ হইল; মীখায়েল ও তাঁহার দূতগণ ঐ নাগের সহিত যুদ্ধ করিতে লাগিলেন। তাহাতে সেই নাগ ও তাহার দূতগণও যুদ্ধ করিল, 

৮ কিন্তু জয়ী হইল না, এবং স্বর্গে তাহাদের স্থান আর পাওয়া গেল না। 

৯ আর সেই মহানাগ নিক্ষিপ্ত হইল; এ সেই পুরাতন সর্প, যাহাকে দিয়াবল [অপবাদক] এবং শয়তান [বিপক্ষ] বলা যায়, সে সমস্ত নরলোকের ভ্রান্তি জন্মায়; সে পৃথিবীতে নিক্ষিপ্ত হইল, এবং তাহার দূতগণও তাহার সঙ্গে নিক্ষিপ্ত হইল।

প্রকাশিত বাক্য ১২:৭-৯

শয়তান এখন প্রধান অশুর যে পুরো পৃথিবীকে বিপথে চালিত করে’ I আসলে, এক সর্পের রূপে, যে প্রথম মানবজাতিকে পপের কাছে নিয়ে এসেছিল I এটি স্বর্গে সত্যের যুগ, সত্য যুগকে শেষ করেছিল I  

শয়তান তার মূল বুদ্ধিমত্তা এবং সৌন্দর্যের কোনো কিছুকে হারায় নি, যা তাকে অধিকতর বিপজ্জনক করে তোলে যেহেতু সে চেহারার পেছনে তার প্রতারণাকে ভালভাবে লুকোতে পারে I বাইবেল বর্ণনা দেয় কীভাবে সে কার্য করে:

১৪ আর ইহা আশ্চর্য্য নয়, কেননা শয়তান আপনি দীপ্তিময় দূতের বেশ ধারণ করে

২ করিন্থীয়ান ১১:১৪

যীশু শয়তানের সঙ্গে যুদ্ধ করেন

যীশুকে এই প্রতিদ্বন্দীর সম্মুখীন হতে হয়েছিল I যোহনের দ্বারা বাপ্তাইজ হওয়ার ঠিক পরে তিনি বাণপ্রস্থ গ্রহণ করে জঙ্গলে প্রবেশ করলেন I তবে তিনি অবসর নিতে এইরকম করেন নি, কিন্তু যুদ্ধে তার প্রতিদ্বন্দীর সম্মুখীন হতে I এই যুদ্ধ শারীরিক ছিল না যেমনটি কৃষ্ণ এবং অঘাসুর বা ইন্দ্র ও বৃত্রের মধ্যে বর্ণিত হয়েছিল, কিন্তু প্রলোভনের এক যুদ্ধ I সুসমাচার এইভাবে এটিকে লিপিবদ্ধ করে: 

১ যীশু পবিত্র আত্মায় পূর্ণ হইয়া যর্দ্দন হইতে ফিরিয়া আসিলেন, এবং চল্লিশ দিন পর্য্যন্ত সেই আত্মার আবেশে প্রান্তর মধ্যে চালিত হইলেন, 

২ আর দিয়াবল দ্বারা পরীক্ষিত হইলেন। সেই সকল দিন তিনি কিছুই আহার করেন নাই; পরে সেই সকল দিন শেষ হইলে ক্ষুধিত হইলেন।

৩ তখন দিয়াবল তাঁহাকে কহিল, তুমি যদি ঈশ্বরের পুত্র হও, তবে এই পাথরখানিকে বল, যেন ইহা রুটী হইয়া যায়।

৪ যীশু তাহাকে উত্তর করিলেন, লেখা আছে, “মনুষ্য কেবল রুটীতে বাঁচিবে না।”

৫ পরে সে তাঁহাকে উপরে লইয়া গিয়া মুহূর্ত্তকাল মধ্যে জগতের সমস্ত রাজ্য দেখাইল। 

৬ আর দিয়াবল তাঁহাকে বলিল, তোমাকেই আমি এই সমস্ত কর্ত্তৃত্ব ও এই সকলের প্রতাপ দিব; কেননা ইহা আমার কাছে সমর্পিত হইয়াছে, আর আমার যাহাকে ইচ্ছা, তাহাকে দান করি; 

৭ অতএব তুমি যদি আমার সম্মুখে পড়িয়া প্রণাম কর, তবে এ সকলই তোমার হইবে।

৮ যীশু উত্তর করিয়া তাহাকে কহিলেন, লেখা আছে, “তোমার ঈশ্বর প্রভুকেই প্রণাম করিবে, কেবল তাঁহারই আরাধনা করিবে”।

৯ আর সে তাঁহাকে যিরূশালেমে লইয়া গেল, ও ধর্ম্মধামের চূড়ার উপরে দাঁড় করাইল, এবং তাঁহাকে কহিল, তুমি যদি ঈশ্বরের পুত্র হও, তবে এ স্থান হইতে নীচে পড়; 

১০ কেননা লেখা আছে, ‘তিনি আপন দূতগণকে তোমার বিষয়ে আজ্ঞা দিবেন, যেন তাঁহারা তোমাকে রক্ষা করেন’; 11আর ‘তাঁহারা তোমাকে হস্তে করিয়া তুলিয়া লইবেন, পাছে তোমার চরণে প্রস্তরের আঘাত লাগে।’

১২ যীশু উত্তর করিয়া তাহাকে কহিলেন, উক্ত আছে, “তুমি আপন ঈশ্বর প্রভুর পরীক্ষা করিও না”।

১৩ আর সমস্ত পরীক্ষা সমাপন করিয়া দিয়াবল কিয়ৎকালের জন্য তাঁহার নিকট হইতে চলিয়া গেল।

লুক: ৪:১-১৩ 

তাদের সংগ্রাম মানবীয় ইতিহাসের প্রারম্ভে শুরু হয়েছিল I এটি শিশু যীশুকে হত্যা করার প্রচেষ্টার মাধ্যমে যীশুর জন্মে পুনর্নবীকরণ করেছিল I যুদ্ধের এই দফায়, যীশু বিজয়ী প্রমাণিত হয়েছিলেন, শয়তানকে শারীরিকভাবে পরাজিত করার কারণে নয়, বরং তিনি তার সম্মুখে শয়তানের রাখা সমস্ত শক্তিশালী প্রলোভনগুলোকে প্রতিরোধ করেছিলেন সেই কারণে I এই দুজনের মধ্যে লড়াই সামনের মাসগুলোতে চলতে থাকত, সেই সর্পের দ্বারা ‘পাদমূল আঘাত করে’ এবং যীশুর দ্বারা ‘মস্তক চুর্ণ করে’ শেষ হত I তবে তার পূর্বে যীশুকে অন্ধকার মেটানোর শিক্ষা দিতে গুরুর ভূমিকা পালন করতে ছিল I     

যীশু – এমন কেউ যিনি আমাদের বোঝেন

যীশুর প্রলোভন এবং পরীক্ষার সময়কাল আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ I যীশুর সম্বন্ধে বাইবেল ব্যক্ত করে যে: 

১৮ কেননা তিনি আপনি পরীক্ষিত হইয়া দুঃখভোগ করিয়াছেন বলিয়া পরীক্ষিতগণের সাহায্য করিতে পারেন।

হিব্রু ২:১৮

এবং

১৫কেননা আমরা এমন মহাযাজককে পাই নাই, যিনি আমাদের দুর্ব্বলতাঘটিত দুঃখে দুঃখিত হইতে পারেন না, কিন্তু তিনি সর্ব্ববিষয়ে আমাদের ন্যায় পরীক্ষিত হইয়াছেন, বিনা পাপে।
১৬ অতএব আইস, আমরা সাহসপূর্ব্বক অনুগ্রহ সিংহাসনের নিকটে উপস্থিত হই, যেন দয়া লাভ করি, এবং সময়ের উপযোগী উপকারার্থে অনুগ্রহ প্রাপ্ত হই।

হিব্রু ৪:১৫-১৬

হিব্রু দূর্গা পূজা, ইয়োম কিপ্পুরে, মহা যাজক বলিদানগুলো নিয়ে আসতেন যাতে ইস্রায়েলীয়রা ক্ষমা পেতে পারে I এখন যীশু একজন যাজক হয়েছেন যিনি সহানুভূতি প্রকাশ করতে পারেন এবং আমাদের বুঝতে পারেন – এমনকি আমাদের প্রলোভনের মধ্যে সাহায্য করতে পারেন, স্পষ্টতই তিনি স্বয়ং প্রলুব্ধ হয়েছিলেন – তথাপি পাপ ছাড়া I আমরা সর্বোচ্চ ঈশ্বরের সামনে আস্থা রাখতে পারি কারণ মহা যাজক আমাদের অত্যন্ত কঠিন প্রলোভন সমূহের মধ্য দিয়ে অভিজ্ঞতা লাভ করেছেন I তিনি এমন একজন যিনি আমাদের বোঝেন এবং আমাদের নিজস্ব প্রলোভন এবং পাপ সমেত আমাদের সাহায্য করতে পারেন I প্রশ্ন হল: আমরা কি তাঁকে করতে দেব?     

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *