Skip to content

ব্রহ্মান ও আত্মাকে বুঝতে লোগোর অবতার

  • by

ভগবান ব্রহ্মা মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তাকে সনাক্তকারী একটি সাধারণ নাম I প্রাচীন ঋগ্বেদে   (১৫০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দ) প্রজাপতিকে  সাধারণতঃ সৃষ্টিকর্তার জন্য ব্যবহার করা হত তবে পুরাণগুলোর মধ্যে ভগবান ব্রহ্মার সাথে এটিকে বদলে দেওয়া হয়েছিল I আজকের ব্যবহারে, সৃষ্টিকর্তা রূপে ভগবান ব্রহ্মা, বিষ্ণু (সংরক্ষণকারী), এবং শিব (ধ্বংস কারী) সহ ঐশ্বরিক ত্রিমূর্তির (ত্রি-তত্ত্ব ঈশ্বর) তিনটি দিকের একটি I ঈশ্বর (ঈশ্বরা) ব্রহ্মার সাথে সমার্থক কারণ এটি সেই উচ্চ আত্মাকে বোঝায় যা সৃষ্টিকে সৃষ্টি করেছিল I        

যদিও ব্রহ্মাকে বোঝার জন্য এটি একটি প্রাথমিক লক্ষ্য, বাস্তবে এটি অধরা I ভক্তি এবং পূজার দিক দিয়ে শিব ও বিষ্ণু, তাদের স্ত্রী এবং অবতার সহ ভগবান ব্রহ্মার চেয়ে অধিক বেশি মনোযোগ পান I আমরা শীঘ্রই শিব ও বিষ্ণুর জন্য অবতার এবং স্ত্রীদের জন্য নাম দিতে পারি, তবে ব্রহ্মার জন্য আমরা এলো মেলো কথা বলি I     

কেন?

ব্রহ্মা, ব্রহ্মান বা ঈশ্বর, যদিও সৃষ্টিকর্তা, আমাদের থেকে সুদুর-অপসারিত এবং দুর্গম বলে মনে হয় যারা পাপ সমূহ, অন্ধকার এবং অস্থায়ীর প্রতি আসক্তির সাথে সংঘর্ষ করে I যদিও ব্রহ্মা সমস্ত কিছুর উৎস, এবং এই উৎসের কাছে আমাদের ফিরে যাওয়ার দরকার, এই স্বর্গীয় নীতিকে উপলব্ধি করা অনধিগম্য বলে মনে হয় I অতএব আমরা সাধারণতঃ আমাদের ভক্তিকে দেবতাদের উপরে ফোকাস করি যারা  অধিক মানবীয় এবং নিকটস্থ মনে হয় এবং আমাদের কাছে সাড়া দিতে পারে I ব্রহ্মানের স্বরূপের উপরে আমরা একটি দূরত্ব থেকে জল্পনা করতে পারি I বাস্তবে ব্রহ্মা একজন অচেনা ঈশ্বর সাথে ব্রহ্মার মূর্তি অপেক্ষাকৃতভাবে বিরল I     

সেই জল্পনার অংশ ঐশ্বরিক (ব্রহ্মান) এর সাথে প্রাণের (সেই আত্মান) সম্পর্কের চারিপাশে ঘোরে I এই প্রশ্নের উপরে কয়েকজন ঋষি বিভিন্ন দর্শন উত্থাপন করেছেন I এই অর্থে, মনোবিদ্যা এর অধ্যয়ন, আমাদের প্রাণ বা আত্মান, ধর্মবিদ্যা, ঈশ্বর বা ব্রহ্মান এর অধ্যয়নের সঙ্গে সম্পর্কিত হয় I যদিও বিভিন্ন চিন্তাধারা বিদ্যমান, যেহেতু আমরা এক বৈজ্ঞানিক উপায়ে ঈশ্বরকে পরীক্ষা করতে পারি না, এবং যেহেতু ঈশ্বর দূরবর্তী, সেইহেতু বিজ্ঞতম দর্শনগুলোর বেশিরভাগই অন্ধকারের মধ্যে একটি হাতড়ানো হয় I        

দূরবর্তী স্বর্গীয় সৃষ্টিকর্তার সংগে সংযোগের অক্ষমতাকে বিস্তৃত প্রাচীন জগতে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল I প্রাচীন গ্রীকরা জগতের উৎপত্তির সম্বন্ধে নীতিমালা এবং কারণ সমূহকে বর্ণনা করতে লোগো পরিভাষাটিকে ব্যবহার করেছিলেন এবং তাদের লেখাগুলো লোগোস সম্বন্ধে আলোচনা করেছিল I যুক্তিবিদ্যা শব্দটি লোগো থেকে উদ্ভূত, প্রত্যয়ের সাথে – বিদ্যা (উদা: ধর্মবিদ্যা, মনোবিদ্যা, জীববিদ্যা ইত্যাদি) অধ্যয়নের সমস্ত শাখা সমূহ লোগো থেকে উদ্ভূত I লোগো ব্রহ্মা বা সেই ব্রহ্মানের সঙ্গে সমতুল্য I

হিব্রু বেদ, হিব্রুদের (বা যিহূদিরা) সঙ্গে তাদের জাতির পূর্বসুরী শ্রী আব্রাহামের সাথে আরম্ভ হওয়া দশ আজ্ঞা প্রাপ্ত মশি পর্যন্ত সৃষ্টিকর্তার আচরণের বর্ণনা করেছে I তাদের ইতিহাসে, আমাদের ন্যায়, হিব্রুরা অনুভব করেছিল সৃষ্টিকর্তা তাদের থেকে অপসারিত হয়েছেন আর তাই তাদেরকে অন্য দেবতাদের আরাধনা করতে টেনে আনা হয়েছে, যাদেরকে অন্তরঙ্গ এবং ব্যক্তিগত বলে মনে হয় I তাই হিব্রু বেদ সৃষ্টিকর্তাকে এই অন্যান্য দেবতাদের থেকে আলাদা করতে প্রায়শই সর্বোচ্চ ঈশ্বর বলে অবহিত করেছে I আমরা অনুমান করেছিলাম যে প্রজাপতি থেকে ব্রহ্মার উত্তরণ প্রায় 700 খ্রীষ্টপূর্বাব্দে ভারতবর্ষে নির্বাসনের মধ্যে ইস্রায়েলীযদের আগমনের দ্বারা সহজতর হয়েছিল, যেহেতু এই ঈশ্বরকে তাদের পূর্বসুরী আব্রাহামের দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছিল এবং তার সাথে যুক্ত ঈশ্বর হয়েছিলেন (আ) ব্রহ্মা I

যেহেতু আমরা আমাদের ইন্দ্রিয় সমূহ দিয়ে ব্রহ্মা কে দেখতে পারি না, নাতো আত্মার স্বরূপকে উপলব্ধি করতে পারি, তাই ঈশ্বর ব্রহ্মান আমাদের মনের সাথে একা থাকুন, নিশ্চিত জ্ঞান অর্জনের একমাত্র উপায় ব্রহ্মা কে স্বয়ং আমাদের কাছে প্রকাশ করা I

সুসমাচার সমূহ যীশুকে (যেশু সৎসংগ) সৃষ্টিকর্তার অবতার রূপে বা সর্বোচ্চ ঈশ্বর, ব্রহ্মা বা লোগো রূপে উপস্থাপন করেছে I সময় ও সংস্কৃতি জুড়ে সমস্ত লোকেদের দ্বারা অনুভূত এই সীমাবদ্ধতাগুলোর কারণে তিনি আমাদের জগতে এসেছিলেন I যোহনের সুসমাচার এইভাবেই যীশুর পরিচয় করিয়ে দেয় I যেখানে আমরা শব্দটি পড়ি তা একই লোগো যাকে মূল গ্রীক পাঠ্য থেকে অনুবাদিত করা হয়েছিল I শব্দ/লোগো ব্যবহৃত হয়েছিল যাতে আমরা বুঝব যে একটি জাতীয় দেবতার সম্বন্ধে আলোচনা করা হচ্ছে না, বরং নীতি বা কারণ যার থেকে সকলে উদ্ভূত হয়েছে I যেখানেই শব্দটিকে দেখা যাক না কেন আপনি ব্রহ্মান এর সঙ্গে এটিকে বদলাতে পারেন এবং এই পাঠ্যটির বার্তা বদলাবে না I

1আদিতে বাক্য ছিলেন, এবং বাক্য ঈশ্বরের কাছে ছিলেন, এবং বাক্য ঈশ্বর ছিলেন। 
২তিনি আদিতে ঈশ্বরের কাছে ছিলেন। 
৩ সকলই তাঁহার দ্বারা হইয়াছিল, যাহা হইয়াছে, তাহার কিছুই তাঁহা ব্যতিরেকে হয় নাই। 
৪ তাঁহার মধ্যে জীবন ছিল, এবং সেই জীবন মনুষ্যগণের জ্যোতি ছিল। 
৫ আর সেই জ্যোতি অন্ধকারের মধ্যে দীপ্তি দিতেছে, আর অন্ধকার তাহা গ্রহণ করিল না।
৬ এক জন মনুষ্য উপস্থিত হইলেন, তিনি ঈশ্বর হইতে প্রেরিত হইয়াছিলেন, তাঁহার নাম যোহন। 
৭ তিনি সাক্ষ্যের জন্য আসিয়াছিলেন, যেন সেই জ্যোতির বিষয়ে সাক্ষ্য দেন, যেন সকলে তাঁহার দ্বারা বিশ্বাস করে। 
৮ তিনি সেই জ্যোতি ছিলেন না, কিন্তু আসিলেন, যেন সেই জ্যোতির বিষয়ে সাক্ষ্য দেন। 
৯ প্রকৃত জ্যোতি ছিলেন, যিনি সকল মনুষ্যকে দীপ্তি দেন, তিনি জগতে আসিতেছিলেন।
১০ তিনি জগতে ছিলেন, এবং জগৎ তাঁহার দ্বারা হইয়াছিল, আর জগৎ তাঁহাকে চিনিল না। 
১১ তিনি নিজ অধিকারে আসিলেন, আর যাহারা তাঁহার নিজের, তাহারা তাঁহাকে গ্রহণ করিল না। 
১২ কিন্তু যত লোক তাঁহাকে গ্রহণ করিল, সেই সকলকে, যাহারা তাঁহার নামে বিশ্বাস করে তাহাদিগকে, তিনি ঈশ্বরের সন্তান হইবার ক্ষমতা দিলেন। 
১৩ তাহারা রক্ত হইতে নয়, মাংসের ইচ্ছা হইতে নয়, মানুষের ইচ্ছা হইতেও নয়, কিন্তু ঈশ্বর হইতে জাত।
১৪ আর সেই বাক্য মাংসে মূর্ত্তিমান হইলেন, এবং আমাদের মধ্যে প্রবাস করিলেন, আর আমরা তাঁহার মহিমা দেখিলাম, যেমন পিতা হইতে আগত একজাতের মহিমা; তিনি অনুগ্রহে ও সত্যে পূর্ণ।
১৫ যোহন তাঁহার বিষয়ে সাক্ষ্য দিলেন, আর উচ্চৈঃস্বরে বলিলেন, ইনি সেই ব্যক্তি, যাঁহার বিষয়ে আমি বলিয়াছি, যিনি আমার পশ্চাৎ আসিতেছেন, তিনি আমার অগ্রগণ্য হইলেন, কেননা তিনি আমার পূর্ব্বে ছিলেন।
১৬ কারণ তাঁহার পূর্ণতা হইতে আমরা সকলে পাইয়াছি, আর অনুগ্রহের উপরে অনুগ্রহ পাইয়াছি; 
১৭ কারণ ব্যবস্থা মোশি দ্বারা দত্ত হইয়াছিল, অনুগ্রহ ও সত্য যীশু খ্রীষ্ট দ্বারা উপস্থিত হইয়াছে। 
১৮ ঈশ্বরকে কেহ কখনও দেখে নাই; একজাত পুত্র, যিনি পিতার ক্রোড়ে থাকেন, তিনিই [তাঁহাকে] প্রকাশ করিয়াছেন।

যোহন ১:১-১৮

সুসমাচার সমূহ যীশুর একটি সম্পূর্ণ বিবরণ চিত্রিত করতে অগ্রসর হয় যাতে আমরা বুঝতে পারি তিনি কে, তাঁর মিশন কি, আমাদের জন্য এর অর্থ কি I (‘যোহনকে এখানে ব্যাখ্যা করা হয় I) যেহেতু ঈশ্বরের লোগো রূপে যীশুকে পরিচিত করা হয় আমরা জানি এটিকে কেবলমাত্র খ্রীষ্টানদের জন্য লেখা হয় নি বরং সকলের কাছে একটি সার্বজনীন লেখা যারা ঈশ্বর, বা ব্রহ্মানকে বুঝতে চায়, আরও স্পষ্টভাবে এবং এছাড়াও নিজেদেরকে ভালো করে বুঝতে পারে I যেহেতু লোগো কে বিশেষ পরিভাষা ধর্মবিদ্যাএবং মনোবিদ্যায় নিহিত করা হয় এবং যেহেতু ‘কেউ ঈশ্বরকে কখনও দেখেনি’ সেইহেতু আমাদের প্রাণ (আত্মা) এবং ঈশ্বরকে (ব্রহ্মান) বুঝতে যীশুর ব্যক্তিত্বকে বিবেচনা করার চেয়ে আর ভাল উপায় কি হতে পারে? তিনি বাস করলেন, হাঁটলেন এবং যাচাইযোগ্য ইতিহাসের মধ্যে শিক্ষা দিলেন I আমরা তাঁর জন্ম দিয়ে আরম্ভ করি, সুসমাচার সমূহের মধ্যে নথিভুক্ত সেই ঘটনা হিসাবে যার দ্বারা ‘বাক্য দেহে পরিণত হ’ল’ I

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *