Skip to content

রাজের মতন: যীশু খ্রীষ্টের ‘খ্রীষ্টের’ মানে কি?

  • by

আমি মাঝে মাঝে লোকেদের জিজ্ঞাসা করি যীশুর শেষ নাম কি ছিল I তারা সাধারণতঃ উত্তর দেয়,

 “আমার মনে হয় তার শেষ নাম ছিল ‘খ্রীষ্ট’, তবে আমি নিশ্চিত নয়”I 

তখন আমি জিজ্ঞাসা করি,

“তাহলে যীশু যখন এক বালক ছিল তখন যোষেফ খ্রীষ্ট এবং মরিয়ম ছোট্ট যীশু খ্রীষ্টকে কি বাজারে নিয়ে গিয়েছিলেন?’ 

সেইভাবে রাখলে, তারা উপলব্ধি করে যে ‘খ্রীষ্ট’ যীশুর পারিবারিক নাম নয় I তাহলে ‘খ্রীষ্ট’ কি? কোথা থেকে এটি এসেছে? এর মানে কি? অনেকের কাছে অবাক লাগে, ‘খ্রীষ্ট’ এমন একটি উপাধি যার অর্থ ‘শাসক’ বা ‘শাসন করা’ I এটি ‘রাজ’ শিরোনামের বিপরীত নয়, যেমন ব্রিটিশ রাজের মধ্যে যে স্বাধীনতার পূর্বে ভারতবর্ষকে শাসন করেছিল I 

অনুবাদ বনাম অক্ষরীকরণ 

আমাদের প্রথমে অনুবাদের কিছু মূলসুত্রগুলোকে বুঝতে হবে I অনুবাদকরা মাঝে মাঝে অর্থের পরিবর্তে অনুরূপ ধ্বনির দ্বারা অনুবাদ করতে পচ্ছন্দ করে, বিশেষকরে নাম এবং শিরোনাম সমূহের I এটিকে অক্ষরীকরণ বলা হয় I উদাহরণস্বরূপ, “কুম্ভ মেলা” হিন্দি कुंभ मेला থেকে একটি ইংরেজি অক্ষরীকরণ I যদিও मेला মানে ‘মেলা’ বা ‘উৎসব’ এটিকে কুম্ভ ফেয়ারের পরিবর্তে অনুরূপ ধ্বনির দ্বারা ইংরেজিতে নিয়ে আসা হয়েছে I “রাজ” হিন্দি  “राज” থেকে একটি ইংরেজি অক্ষরীকরণ I যদিও राज  মানে   ‘শাসন করা’  বোঝায় এটিকে “ব্রিটিশ শাসনের’ পরিবর্তে “ব্রিটিশ রাজ” ধ্বনির দ্বারা ইংরেজিতে নিয়ে আসা হয়েছিল I বেদা [পুস্তকমের] (বাইবেল) সাথে, অনুবাদকদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হত কোন নাম এবং শিরোনামগুলোকে (অর্থের দ্বারা) অনুবাদ এবং কোনগুলোকে (ধ্বনির দ্বারা) অক্ষরীকরণ করতে হবে I সেখানে কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম নেই I 

সেপ্টুজিয়ান্ট 

বাইবেলকে প্রথমে 250 খ্রীষ্টপূর্বাব্দে অনুবাদ করা হয়েছিল যখন হিব্রু বেদা (পুরনো নিয়ম) গ্রীকে অনুবাদিত হয়েছিল – সেই সময়ের আন্তর্জাতিক ভাষা I এই অনুবাদ সেপ্টুজিয়ান্ট (বা LXX) নামে পরিচিত এবং এটি খুব প্রভাবী  ছিল I যেহেতু নতুন নিয়মকে গ্রীকের মধ্যে লেখা হয়েছিল, এর পুরনো নিয়মের অনেক উদ্ধৃতি সমূহকে সেপ্টুজিয়ান্ট থেকে নেওয়া হয়েছিল I 

সেপ্টুজিয়ান্ট এর মধ্যে অনুবাদ এবং অক্ষরীকরণ 

নিচের চিত্রটি এই প্রক্রিয়াকে দেখায় এবং কিভাবে এটি আধুনিক-দিনের বাইবেলগুলোকে প্রভাবিত করে  

অনুবাদ প্রবাহ মূল ভাষা থেকে আধুনিক-দিনের বাইবেলে

মূল হিব্রু পুরনো নিয়মকে (1500 – 400 খ্রীষ্টাব্দে লেখা) চতুর্থাংশ #1 এর মধ্যে দেখানো হয়েছে I কারণ সেপ্টুজিয়ান্ট একটি 250 খ্রীষ্টপূর্বাব্দ হিব্রু –>  গ্রীক অনুবাদ ছিল এটিকে একটি তীরের দ্বারা দেখান হয়েছে চতুর্থাংশ  #1 থেকে  #2 এর দিকে যাচ্ছে I নতুন নিয়ম গ্রীকে লেখা হয়েছিল (50 – 90 খ্রীষ্টাব্দ) তাই #2 এর মধ্যে উভয় পুরনো এবং নতুন নিয়ম রয়েছে I নিচের অর্ধেক  (#3) বাইবেলের একটি আধুনিক ভাষার অনুবাদ I পুরনো নিয়মটি (হিব্রু বেদা) মূল হিব্রু থেকে (1–>3) অনুবাদিত হয়েছে এবং নতুন নিয়ম গ্রীক থেকে (2–>3) অনুবাদিত হয়েছে I নাম এবং শিরোনাম সমূহের উপরে অনুবাদকদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে যেমনটি পূর্বে ব্যাখ্যা করা হয়েছে I এটিকে অক্ষরীকরণ এবং অনুবাদ লেবেলের সাথে নীল তীরের দ্বারা দেখানো হয়েছে, দেখায় যে অনুবাদকরা উভয় পদ্ধতি গ্রহণ করতে পারেন I     

 ‘খ্রীষ্টের’ উৎপত্তি  

‘খ্রীষ্ট’ শব্দের উপরে ফোকাস করে এখন উপরোক্ত প্রক্রিয়া অনুসরণ করুন I  

বাইবেলের মধ্যে ‘খ্রীষ্ট’ কোথা থেকে এসেছে?

হিব্রু পুরনো নিয়মে উপাধিটি হ’ল  ‘מָשִׁיחַ’ (মাশিয়াক) যার অর্থ হ’ল অভিষিক্ত বা উৎসর্গীকৃত ব্যক্তি, যেমন একজন রাজা বা শাসক I সেই সময়ের হিব্রু রাজাদের তাদের রাজা হওয়ার পূর্বে অভিষিক্ত করা হত (আনুষ্ঠিনিকভাবে তৈল মর্দন করে) এইরূপে তারা অভিষিক্ত ব্যক্তি বা মাশিয়াক হয়েছিল I তারপরে তারা শাসক হত, কিন্তু তাদের শাসনকে ঈশ্বরের স্বর্গীয় শাসনের অধীনস্থ হতে হত, তাঁর ব্যবস্থা অনুসারে I সেই অর্থে পুরনো নিয়মে হিব্রু রাজারা রাজের মতন ছিল I রাজ দক্ষিন এশিয়ার ব্রিটিশ অঞ্চলের উপরে শাসন করত, তবে বৃটেনের সরকারের অধীনস্থ হয়ে, এর ব্যবস্থা অনুসারে I      

পুরনো নিয়ম একজন নির্দিষ্ট মাশিয়াকের আগমনের বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল (একটি নির্দিষ্ট আর্টিকেল ‘দি’ এর সাথে) যিনি একজন অনন্য রাজা হবেন I 250 খ্রীষ্টপূর্বাব্দে যখন সেপ্টুজিয়ান্ট অনুবাদিত হ’ল, অনুবাদকরা গ্রীকের মধ্যে একটি অনুরূপ অর্থের শব্দের চয়ন করলেন I Χριστός (ক্রিস্তোস ধ্বনির মতন), ক্রিয়োর থেকে ভিত্তি করে, যার অর্থ ছিল তৈলের দ্বারা আনুষ্ঠানিকভাবে মর্দন করা I অতএব হিব্রু ‘মাশিযাক’ অর্থের দ্বারা গ্রীক সেপ্টুজিয়ান্ট এর মধ্যে Χριστός তে অনুবাদিত হয়েছিল (ধ্বনির দ্বারা অক্ষরীকরণ নয়) I নতুন নিয়মের রচয়িতারা যীশুর পরিচিতির জন্য ক্রিস্তোস শব্দটিকে ক্রমাগত ব্যবহার করতে লাগলেন যেমনটি এটিকে ‘মাশিয়াক’ রূপে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল I   

ইউরোপীয় ভাষাগুলোর জন্য অনুরূপ অর্থ সহ কোনো স্পষ্ট শব্দ ছিল না তাই নতুন নিয়মের গ্রীক ‘ক্রিস্তোস’ ‘খ্রীষ্টে’ অক্ষরীকরণ করা হয়েছিল I ‘খ্রীষ্ট’ শব্দটি পুরনো নিয়মের মূলগুলোর সাথে একটি অত্যন্ত নিদিষ্ট উপাধি, হিব্রুর থেকে গ্রীকে অনুবাদের দ্বারা এবং তারপরে গ্রীক থেকে আধুনিক ভাষাগুলোতে অক্ষরীকরণের দ্বারা I পুরনো নিয়মকে হিব্রু থেকে আধুনিক ভাষাগুলোতে সরাসরিভাবে অনুবাদ করা হয়েছে এবং অনুবাদকরা মূল হিব্রু ‘মাশিয়াক’ সম্বন্ধে বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন I কিছু বাইবেল মসীহর বৈচিত্রের সাথে  মাশিয়াকের অক্ষরীকরণ করে, অন্যরা অভিষিক্ত ব্যক্তি রূপে অর্থের দ্বরা অনুবাদ করে I খ্রীষ্টের জন্য একটি [হিন্দি] শব্দ (मसीह) আরবী থেকে অক্ষরীকরণ করা হয়েছে, যেটিকে পরিবর্তে, মূল হিব্রু থেকে অনুবাদিত করা হয়েছিল I অতএব এর উচ্চারণ মসীহ মূলের কাছাকাছি I  

হিব্রু শব্দ מָשִׁיחַ (মাশিয়াহ, মেশিয়াহ) কে “ক্রিস্তোস” রূপে গ্রিক সেপ্টুজিয়ান্ট এর মহ্য়ে অনুবাদিত করা হয়েছে I এটিকে পরিবর্তে ইংরেজিতে ‘খ্রীষ্ট’ রূপে অনুবাদিত করা হয়েছে এবং ‘ক্রাইস্ট’ এর মতন শুনতে লাগে I রীষ্টের বাংলা শব্দ হল ক্রিস্টো । এটি গ্রীক শব্দ “ক্রিস্টোস” থেকে অনূদিত এবং তাই krisṭō হিসাবেও উচ্চারণ করা হয়।

যেহেতু আমরা পুরনো নিয়মে ‘খ্রীষ্ট’ শব্দটিকে সাধারণতঃ দেখিনা, পুরনো নিয়মের সঙ্গে এর যোগাযোগ সর্বদা স্পষ্ট নয় I তবে অধ্যয়ন থেকে আমরা জানি যে ‘খ্রীষ্ট’=’মেশিয়াহ’=’অভিষিক্ত ব্যক্তি’ এবং সেটি একটি নিদিষ্ট উপাধি ছিল I    

প্রথম শতাব্দীতে খ্রীষ্ট প্রত্যাশিত ছিল 

এখন সুসমাচার থেকে আমাদের কিছু পর্যবেক্ষণ করা যাক I নিচে রাজা হেরোদের প্রতিক্রিয়া রয়েছে যখন মাগি যিহূদিদের রাজার খোঁজে এলো, খ্রীষ্টমাস কাহিনীর একটি অংশ I লক্ষ্য করুন খ্রীষ্টের পূর্বে ‘দি’ রয়েছে এমনকি যদিও এটি নির্দিষ্টভাবে যীশুর সমন্ধে উল্লেখ করছে না I 

রাজা হেরোদ একথা শুনে খুব বিচলিত হলেন এবং তাঁর সঙ্গে জেরুশালেমের সব লোক বিচলিত হল৷
তখন তিনি ইহুদীদের মধ্যে যাঁরা প্রধান যাজক ও ব্যবস্থার শিক্ষক ছিলেন, তাঁদের ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, মশীহ (খ্রীষ্ট) কোথায় জন্মগ্রহণ করবেন?

মথি 2:3-4

আপনি দেখুন ‘দি খ্রীষ্টের’ ধারণাকে রাজা হেরোদ এবং তার পরামর্শকারীদের মধ্যেকার বিষয় রূপে ভালভাবে বোঝা যায় – এবং এখানে যীশুকে নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করে না I এটি দেখায় ‘খ্রীষ্ট’ পুরনো নিয়ম থেকে আসে, সাধারনভাবে প্রথম শতাব্দীর মধ্যে গ্রীক সেপ্টুজিয়ান্ট থেকে লোকেদের দ্বারা পড়া হয় I ‘খ্রীষ্ট’ ছিল (এবং আছে) একটি উপাধি, নাম নয়, একজন শাসক বা রাজাকে বোঝায় I এই জন্যই হেরোদ ‘বিচলিত হলেন’ কারণ আর একজন রাজার সম্ভাবনার ঝুঁকি তিনি অনুভব করলেন I আমরা ধারনাটিকে খারিজ করতে পারি যে ‘খ্রীষ্ট’ একটি খ্রীষ্টান আবিষ্কার ছিল I সেখানে কোনো খ্রীষ্টান থাকার পূর্বে উপাধিটি শতাধিক বছর ধরে ব্যবহারে ছিল I  

খ্রীষ্টের কর্তৃত্বের প্রহেলিকা 

যীশুর আদি অনুগামীরা বিশ্বস্ত হয়েছিল যে যীশু ছিলেন আসন্ন খ্রীষ্ট যার সম্বন্ধে হিব্রু বেদার মধ্যে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল, যখন অন্যরা এই বিশ্বাসের বিরোধিতা করেছিল I  

কেন? 

উত্তরটি প্রেম বা শক্তির উপরে ভিত্তিশীল শাসন সম্পর্কে একটি প্রহেলিকার  হৃদয়ে যায় I ব্রিটিশ মুকুটের অধীনে ভারতে শাসন করার রাজের কর্তৃত্ব ছিল I তবে এটি ভারতকে শাসন করার অধিকার পেয়েছিল কারণ রাজ প্রথমে সামরিক শক্তিতে এসেছিল এবং এর ক্ষমতার মাধ্যমে বাহ্যিক অধীনস্থ জোরপূর্বক চাপিয়ে দিয়েছিল I লোকেরা রাজকে ভালোবাসেনি এবং গান্ধীর মতন নেতাদের মাধ্যমে, অবশেষে রাজকে উচ্ছেদ করা হল I  

যীশু খ্রীষ্ট হিসাবে অধীনস্থ দাবি করতে আসেন নি, এমনকি যদিও তার কাছে কর্তৃত্ব ছিল I প্রেম বা ভক্তির উপরে ভিত্তিশীল একটি অনন্তকালীন রাজ্য স্থাপন করতে এসেছিলেন, এবং এটির প্রয়োজন ছিল যে একদিকে ক্ষমতা এবং কর্তৃত্বের মধ্যে কূটাভাস অন্যদিকে প্রেমের সাক্ষাত I হিব্রু ভাববাদীরা ‘খ্রীষ্টের’ আগমনের বিষয়ে আমাদেরকে বুঝতে সাহায্য করতে এই প্রহেলিকার অন্বেষণ করলেন I হিব্রু রাজা দায়ূদের থেকে 1000 খ্রীষ্টপূর্বাব্দে আসা হিব্রু বেদার মধ্যে ‘খ্রীষ্টের’ প্রথম আবির্ভাব থেকে আমরা তাদের অন্তর্দৃষ্টিকে অনুসরণ করে আসছি I  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *