যুগ যুগ ধরে মুনি ও ঋষিরা জেনেছেন যে মানুষ মায়া এবং পাপের মধ্যে বাস করেছে I এটি যুগে যুগে সমস্ত ধর্মের লোকেদর মধ্যে ঘটেছে এবং শিক্ষা স্তর সমমূহর মধ্যে একটি সহজাত সচেতনতা রয়েছে যে তাদের ‘পরিশুদ্ধ’ হওয়ার প্রয়োজন আছে I এইজন্যই অতশত লোক কুম্ভ মেলা উৎসবে অংশগ্রহন করে এবং কেন পূজা করার পূর্বে লোকেরা প্রার্থ স্নানা (অথবা প্রাতসানা) মন্ত্রম বলে (“আমি একজন পাপী I আমি পাপের পরিণাম I আমার পাপের থেকে জন্ম I আমার আত্মা পাপের মধ্যে I আমি সবথেকে খারাপ পাপী I হে প্রভু যাঁর সুন্দর চক্ষু আছে I আমাকে রক্ষা করুন, হে বলিদানের প্রভু I”) I পরিশুদ্ধ করার জন্য সাথে সাথে এই সহজাত প্রয়োজনীয়তার একটি ধারণা হল আমাদের পাপের জন্য বা আমাদদের জীবনের অন্ধকারের (তমসা) জন্য কোনভাবে মূল্য প্রদান করতে একটি বলিকে উৎসর্গ করা I এবং আর একবার পূজার বলিদানের মধ্যে, অথবা কিম্ভ কুম্ভ মেলা ও অন্যান্য উৎসবের মধ্যে লোকেরা সময়, অর্থ, তপস্যার বলিদান দেয় এই উদ্দেশ্যে যাতে বলি দিতে সহজাত প্রয়োজনীয়তা পূরণ করে I আমি এমন লোকেদের কথা শুনেছি যারা একটি গরুকে নিয়ে এর লেজ ধরে যাতে এটি নদীর মধ্যে চারিদিকে সাঁতরে বেড়ায় I এটিকে একটি পূজা বা বলিদান রূপে করা হয় যাতে ক্ষমা পাওয়া যায় I
বলি দেওয়ার এই প্রয়োজনীয়তা আমাদের চারিদিকে আছে যত দিন ধরে প্রাচীনতম ধার্মিক শাস্ত্রগুলো চারিদিকে রয়েছে I আর এই পাঠ্যগুলো সুনিশ্চিত করে যা আমাদের সহজাত প্রবৃত্তিগুলো বলে – যে বলি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং অবশ্যই তা দেওয়া উচিত I উদাহরণস্বরূপ নিচের শিক্ষাগুলোকে বিবেচনা করুন:
কাঠোপনিষদের (হিন্দু পাঠ্য) মধ্যে অধিবক্তা নচিকেতা বলেন:
“আমি বাস্তবিক জানি যে অগ্নি বলিদান স্বর্গে নিয়ে যায় এবং স্বর্গ লাভের উপায়” কাঠোপনিষদ 1:14
কাঠোপনিষদ 1:14
হিন্দুদের পুস্তক বলে:
“এটি বলিদানই হচ্ছে যার মাধ্যমে মানুষ স্বর্গে পৌঁছায়” শথপথ ব্রাহ্মণ VIII.6.1.10
“বলিদানের মাধ্যমে, না কেবল মনুষ্য বরং ঈশ্বরও অমরত্ব লাভ করে” শ
থপথ ব্রাহ্মণ II.2.2.8-14
অতএব বলিদানের মাধ্যমেই আমরা অমরত্ব ও স্বর্গ (মোক্ষ) লাভ করি I কিন্তু প্রশ্ন এখনও অবশিষ্ট থেকে যায় যে মূল্য প্রদানের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে অথবা আমাদের পাপ/অন্ধকার সমূহের বিরুদ্ধে যথেষ্ট যোগ্যতা অর্জন করতে কি প্রকারের বলিদান এবং কতটা পরিমাণ পর্যাপ্ত? পাঁচ বছরের তপস্যা কি যথেষ্ট হবে? দরিদ্রদের অর্থ দেওয়া কি একটি পর্যাপ্ত বলিদান হবে? আর তাই যদি হয়, কতটা?
প্রজাপতি/সদাপ্রভু: ঈশ্বর যিনি বলি যোগান দেন
অত্যন্ত প্রাচীনতম বৈদিক পাঠ্যগুলোর মধ্যে, ঈশ্বর যিনি সমস্ত সৃষ্টির প্রভু ছিলেন – একজন যিনি বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি এবং নিয়ন্ত্রণ করেছেন – তাঁকে প্রজাপতি বলা হয় I ইনি প্রজাপতি যার মধ্য দিয়ে অন্য সমস্ত কিছু অস্তিত্বে এসেছে I
বেদা পুস্তকমের (বাইবেল) প্রাচীনতম পাঠ্য তোরাহ নাম পরিচিত I তোরাহ আনুমানিক 1500 খ্রীষ্টাব্দে লেখা হয়েছিল, যে সময়ে ঋক বেদ রচিত হয়েছিল I তোরাহ এই ঘোষণা দিয়ে আরম্ভ হয় যে একজন জীবন্ত ঈশ্বর আছেন যিনি সমগ্র বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডর সৃষ্টিকর্তা I মূল হিব্রুর লিপ্যন্তরের মধ্যে এই ঈশ্বরকে এলোহীম বা সদাপ্রভু বলা হত এবং তাদেরকে এই হিব্রু পাঠ্যের মধ্যে আগে পিছে অদলবদল করা হয়েছিল I এইরূপে ঋক বেদের প্রজাপতির ন্যায় তোরাহর মধ্যে সদাপ্রভু, বা এলোহীম সমস্ত সৃষ্টির প্রভু ছিলেন (এবং হন) I
তোরাহর প্রারম্ভে, ভাববাদী আব্রাহামের সংগে এক উল্লেখযোগ্য সাক্ষাত্কারের মধ্যে সদাপ্রভু আবারও স্বয়ংকে ‘যোগানদাতা’ ঈশ্বর রূপে প্রকাশ করেন I আমি যোগানদাতা সদাপ্রভুর (যহোবা-যিরে রূপে হিব্রু থেকে লিপ্যন্তর) সাথে সেই ঋক বেদের প্রজাপতির অনুরূপতার সঙ্গে ধাক্কা খেলাম যিনি “সৃষ্টি সমূহের সংরক্ষক অথবা সহায়ক” I
কিভাবে সদাপ্রভু যোগান দেন? আমরা ইতিমধ্যেই লোকেদের জন্য বলি দেওয়ার সহজাত প্রয়োজনীয়তাকে লক্ষ্য করেছি, কিন্তু কোনরকম আশ্বাসন ছাড়া যে বলি আমরা নিয়ে আসি তা যথেষ্ট I যেটি এত চিত্তাকর্ষক তা হল আমাদের প্রয়োজনের এই বিশেষ নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে তান্দ্যমহা ব্রাহ্মণ ঘোষণা করে কিভাবে প্রজাপতি আমাদের প্রয়োজন যোগান দেয় I এটি বলে:
“স্বয়ং-বলিদান রূপে প্রস্তুত করে প্রজাপতি (সমস্ত সৃষ্টির প্রভু) নিজেকে ঈশ্বরদের জন্য সমর্পণ করলেন” তান্দ্যমহা ব্রাহ্মণ 2 খন্ডের অধ্যায় 7
[সংস্কৃত অক্ষরীকরণ হল “প্রজাপতির্দ দেবেভ্য আত্মানম যজ্ঞম কর্তভা প্রয়চ্ছত”] I
এখানে প্রজাপতি একবচনের মধ্যে আছে I কেবল একমাত্র প্রজাপতি, ঠিক যেমন তোরাহতে কেবল একজন সদাপ্রভু I পরে পুরাণ সাহিত্যে (500 থেকে – 1000 খ্রীষ্টাব্দের মধ্যে লিখিত) বিভন্ন প্রজাপতি সমূহকে সনাক্তকরণ করা হয়েছে I কিন্তু প্রাচীনতম পাঠ্যে উল্লিখিত উক্ত প্রজাপতি একবচনের মধ্যে আছে I এবং এই বক্তব্যর মধ্যে আমরা দেখি যে প্রজাপতি নিজে প্রদান করেন বা বলি হচ্ছেন এবং তিনি এটিকে অন্যদের হয়ে দান করেন I ঋক বেদ এই বলে এটিকে সমর্থন করে:
“আসল বলিদান প্রজাপতি স্বয়ং” (সংস্কৃত: ‘প্রজাপতির্র যজ্ঞ’]
সংস্কৃত পন্ডিত এইচ, আগুইলার শতপথ ব্রাহ্মণ থেকে অনুবাদ করে এর উপরে টিপ্পনী করেন:
“আর বাস্তবিক, বলিদানের উপযুক্ত সেখানে আর কোনো (জীবন্ত বলি) ছিল না বরং সেই একজন প্রজাপতি, এবং দেবতারা তাঁকে বলিদানে সমর্পণের জন্য স্থাপিত করলেন – কারণ বলিদানের সাহায্যে তারা তাঁকে (প্রজাপতি) সমর্পণ করলেন – এগুলো ছিল প্রথম বিধি, কারণ এই ব্যবস্থা সমূহকে প্রথমে জারি করা হয়েছিল” এইচ. আগুইলার, দি স্যাক্রিফাইস ইন দি ঋক বেদা
প্রাচীন কাল থেকে বেদ ঘোষণা করে যে সদাপ্রভু বা প্রজাপতি আমাদদের যা প্রয়োজন তা জানতেন তাই তিনি নিজেকে আমাদের জন্য এক স্বয়ং-বলিদানের মধ্যে প্রদান করলেন I কিভাবে তিনি এটি করলেন তা আমরা পরবর্তী রচনা সমূহের মধ্যে দেখি যে মুহুর্তে আমরা ঋক বেদের পুরুষাসুক্তর পুরুষা-প্রজাপতির বলিদানের উপরে মনোযোগ দিই, কিন্তু এখনকার জন্য কেবল চিন্তা করুন এটি কতটা গুরুত্বপূর্ণ I শ্বেতাশ্বর উপনিষদ বলে
‘অনন্ত জীবনে প্রবেশ করার আর কোনো উপায় নেই’ (সংস্কৃত: ন্যান্য: পন্থা বিদ্যতেঅয়নায়) শ্বেতাশ্বর উপনিষদ 3:8
আপনারা যদি অনন্ত জীবনে উৎসাহিত হন, আপনার যদি মোক্ষ অথবা চেতনার দীপ্তি পেতে ইচ্ছা করেন তাহলে এটি দেখা বিচক্ষণ হবে যা প্রকাশিত হয়েছে যে কিভাবে এবং কেন প্রজাপতি (বা সদাপ্রভু) স্বয়ং-বলিদানের মাধ্যমে আমাদের জন্য প্রদান করেছেন যাতে আমরা স্বর্গ লাভ করতে পারি I আর বেদ আমাদের ঝুলিয়ে রাখে না I ঋক বেদের মধ্যে পুরুষাসুক্ত যা প্রজাপতির অবতার এবং তার দ্বারা প্রস্তুত আমাদের জন্য বলিকে বর্ণনা করে I এখানে আমরা পুরুসাসুক্তকে প্রবর্তন করি যেমন বাইবেল (বেদা পুস্তকম) যেশু সৎসংগকে (নাসরতের যীশুক) এবং তাঁর বলিদানকে বর্ণনা করেছে যা আমাদের কাছে মোক্ষ অথবা মুক্তি (অমরত্ব) নিয়ে আসে I এখানে আমরা সরাসরি যীশুর (যেশু সৎসংগ) বলিদান এবং আমাদের প্রতি তাঁর উপহারকে দেখি I