Skip to content

পুরুষাসুক্তর বিবেচনা – মানুষের প্রশংসার গীত

  • by

ঋগ বেদ (অথবা ঋক বেদ) এর মধ্যে হয়ত সবথেকে বিখ্যাত কবিতা বা প্রার্থনা হল পুরুসাসুক্তম (পুরুসা সুক্তম)I 10 মণ্ডল এবং 90 অনুচ্ছেদের মধ্যে এটি দেখা যায় I একজন বিশেষ পুরুষের জন্য এটি একটি গান – পুরুসা  (পুরুষা উচ্চারণ করা হয়)I যেহেতু ঋক বেদের মধ্যে এটি দেখা যায় এটি  জগতের মধ্যে সব থেকে প্রাচীন মন্ত্রদের মধ্যে একটি, এবং তাই এটি অধ্যয়ন করা যোগ্য হচ্ছে দেখতে আমরা মুক্তি বা মোক্ষর (বোধদয়) পথে যেতে কি শিখতে পারি I     

অতএব পুরুসা কে? বৈদিক পাঠ্যপুস্তক আমাদে বলে যে

 “পুরুসা এবং প্রজাপতি এক এবং একই ব্যক্তি” (সংস্কৃত অক্ষরীকরণ পুরুসোহি প্রজাপতি)

মধ্যনদিয়া সথাপথা ব্রহ্মানা VII.4:1.1:56

উপনিষদ এই একই লাইনের উপরে বলার দ্বারা চলতে থাকে যে

 “সমস্ত কিছুর থেকে পুরুষ শ্রেষ্ঠ I কোনো কিছুই (কেউ নয়) পুরুষের  থেকে শ্রেষ্ঠ নয় I তিনিই শেষ এবং সর্বোচ্চ লক্ষ্য” (অভ্যাকৎ পুরুষা পরাহ I পুরুষন্না পরম কিনচিৎসা কাস্থা সা পরাগতি)

কঠোপনিষদ 3:11      

এবং নিশ্চয়ই অপ্রকাশনের পেছনেই সর্বোচ্চ পুরুষ… একজন যিনি তাকে জানেন মুক্ত হয় এবং অমরত্ব অর্জন করে (অভ্যাকৎ উ: পরাহ পুরুষা…যজ্ঞা ত্বা মুক্যাতে জন্তুরআত্মাত্বম কা গচ্ছতি)

কঠোপনিষদ 6:8     

সুতরাং পুরুসা হচ্ছেন প্রজাপতি (সমস্ত সৃষ্টির প্রভু) I কিন্তু হয়ত আরও অধিক গুরুত্বপূর্ণ, তাঁকে প্রতক্ষ্যভাবে জানা আপনাকে এবং আমাকে প্রভাবিত করে I উপনিষদ বলে:

অনন্ত জীবনে প্রবেশ করার আর কোনো পথ নেই (কিন্তু পুরুসার  মাধ্যমে) (নান্য: পন্থা বিদ্যতেঅয়নায়)

শ্বেতাশ্বতরপোনিষদ 3:8  

সুতরাং আমরা পুরুসাসুক্তর মাধ্যমে অধ্যয়ন করব, ঋক বেদের স্ত্রোত্রকে যা পুরুসাকে বর্ণনা করে I যেমনি আমরা তা করব, আমি হয়ত এক অদ্ভূত এবং মহান ধারনাকে বিবেচনা করতে আমাদের সামনে তুলে ধরব: পুরুসাসুক্তর মধ্যে এই পুরুসার কথা কি বলা হয়েছে যা 2000 বছর পূর্বে যেশু সৎসংগের (নসরৎ-এর যীশু) অবতারের মধ্যে পরিপূর্ণ? যেমন আমি বলেছি, এটি হয়ত একটি অদ্ভূত ধারণা, কিন্তু যেশু সৎসংগ (নসরৎ-এর যীশু) সমস্ত ধর্ম জুড়ে একজন পবিত্র পুরুসা বলে পরিচিত এবং তিনি ঈশ্বরের অবতার রূপে নিজেকে দাবি করেছিলেন, এবং তিনি ও পুরুসা উভয়কে বলি দেওয়া হয়েছে (যেমন আমরা দেখব) তাই এই ধারনাটিকে বিবেচনা এবং বিশ্লেষণ করতে আমাদেরকে উত্তম কারণ দেয় I সংস্কৃত অক্ষরীকরণ, এবং পুরুষাসুক্তর উপরে আমার চিন্তাধারার অনেক কিছু যোষেফ পাদিনজারেকারা দ্বারা লিখিত ক্রাইষ্ট ইন দি এনসিয়েন্ট বেদাস বইটির অধ্যয়ন থেকে এসেছে I (346 পৃষ্ঠায় প্রকাশিত  2007)         

পুরুসাসুক্তর প্রথম পদ

সংস্কৃত থেকে অক্ষরীকরণ বাংলাতে অনুবাদ
সহস্র শিরশা-পুরুষাসহস্র ক্ষাহ সহস্রপতসা ভুমিন ভিস্বাতো ভি ঋতভাতিষ্ঠাআদ্দাসংগুলম পুরুষের এক সহস্র মস্তক, এক সহস্র চক্ষু এবং এক সহস্র চরণ যুগল আছে I পৃথিবীর সমস্ত দিকে প্রদক্ষিন কোরে তিনি দীপ্তি দেন I এবং তিনি দশ অঙ্গুলিতে স্বয়ংকে সীমিত করেছেন

আমরা উপরে দেখলাম যে পুরুষ প্রজাপতির অনুরূপ I এখানে যেমন ব্যাখ্যা করা হয়েছে, প্রাচীনতম বেদে প্রজাপতিকে ঈশ্বর রূপে বিবেচনা করা হয়েছিল যিনি সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেছিলেন – তিনি “সমস্ত সৃষ্টির প্রভু” ছিলেন 

পুরুসাসুক্তর প্রারম্ভে আমরা দেখি পুরুষের এক ‘সহস্র মস্তক, এক সহস্র চক্ষু এবং এক সহস্র পাদপীঠ আছে I’ এর অর্থ কি? এখানে ‘সহস্র’ বলতে একটি নির্দিষ্ট গণনার সংখ্যাকে বোঝায় না, বরং অধিক ‘অগণিত’, অথবা ‘অসীম’ কে বোঝায় I সুতরাং পুরুসার কাছে অসীম বুদ্ধি (‘মস্তক’) আছে I আজকের ভাষায় আমরা বলব তিন সর্বজ্ঞানী বা সব-জান্তা I এটি ঈশ্বরের (প্রজাপতি) একটি গুণ I তিনিই একমাত্র যিনি সবকিছু জানেন I এছাড়া ঈশ্বর দেখেন এবং  সমস্ত কিছুর সম্পর্কে সচতন I কথায় বলে যে পুরুসার কাছে ‘এক সহস্র চক্ষু; আছে তা একই কথা যা বলে যে পুরুসা সর্বজ্ঞানী – তিনি সমস্ত কিছুর সম্পর্কে সচেতন কারণ তিনি সর্বত্র বিরাজমান I অনুরূপভাবে, বাগ্ধারাটি ‘এক সহস্র চরণ যুগল’ সর্বশক্তিমান – অসীম শক্তির প্রতিনিধিত্ব করে I    

এইরূপে আমরা পুরুষাশসুক্তর প্রারম্ভ দেখি যে পুরুসাকে এক সর্বজ্ঞানী, সর্বত্র বিরাজমান এবং সর্বশক্তিমান পুরুষ রূপে প্রবর্তন করা হয়েছে I কেবলমাত্র ঈশ্বরের অবতার এই ধরণের এক ব্যক্তি হতে পারে I যাইহোক, পদটি এই বলে শেষ করে ‘তিনি স্বয়ংকে দশ অঙ্গুলিতে সীমিত করলেন’ I এর অর্থ কি? একজন অবতারী ব্যক্তি রূপে, পুরুষ তাঁর স্বর্গীয় পরাক্রম থেকে নিজেকে শুন্য করলেন এবং এক স্বাভাবিক মনুষ্যের ন্যায় স্বয়ংকে সীমিত করলেন – কেবলমাত্র ‘দশ অঙ্গুলি সহ’ I এইরূপে, যদিও পুরুসা স্বর্গীয় ছিলেন, সমস্ত কিছু সহ যা ফলস্বরূপ ঘটে, তিনি স্বয়ংকে তাঁর অবতারে শুন্য করলেন I     

বেদ পুস্তকম (বাইবেল), যখন যেশু সৎসংগের (নসরৎ-এর যীশু) কথা বলা হয় তখন ঠিক সেই একই ধারণা প্রকাশ করে I এটি বলে:  

… একই ভাব যেমন যীশু খ্রীষ্টের কাছে আছে:

যিনি, বিশেষ প্রকৃতিতে ঈশ্বর হন,

ঈশ্বরের সমান গন্য করেন নি এমনকিছু যা তাঁর নিজের সুবিধার্থে ব্যবহৃত হয়; বরং, তিনি একজন দাসের বিশেষ প্রকৃতিকে গ্রহণ করে নিজেকে শুন্য করলেন, মনুষ্যের সমানতায় নিজেকে প্রস্তুত করলেন I

এবং একজন মানুষের রূপে দেখা দিয়ে, তিনি নিযেকে নত করলেন মৃত্যু পযন্ত আজ্ঞাবহ হয়ে – এমনি ক্রুশের উপরে মৃত্যু বরণ করেন

ফিলিপীয় 2: 5-8

আপনারা দেখতে পারেন যে বেদ পুস্তকম (বাইবেল) একই চিন্তাধারাকে ব্যবহার করে যেমনটি পুরুষাসুক্ত পুরুষকে প্রবর্তনের ক্ষেত্রে করেছে – অসীম ঈশ্বর এক সীমিত মনুষ্যে দেহধারী হচ্ছেন I কিন্তু বাইবেলের মধ্যে এই অনুচ্ছেদটি দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে যায় তাঁর বলিদানকে বর্ণনা করতে – যেমনটি পুরুসাসুক্তও করবে I অতএব এটি যে কোনো কারোর পক্ষে উপযুক্ত এই দৈববাণীগুলোকে আরও বিশ্লেষণ করতে যে মোক্ষ পেতে ইচ্ছা রাখে, যেহেতু, উপনিষদের মধ্যে এটি যেমন বলে;

অনন্ত জীবনে যাওয়ার আর কোনো রাস্তা নেই (কিন্তু পুরুষের মাধ্যমে) (নান্য: পন্থা বিদ্যতেঅয়নায়)

শ্বেতাশ্বতরপোনিষদ 3:8

আমরা এখানে পুরুসাসুক্তর পদ 2 কে চালিয়ে যাচ্ছি I    

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *