Skip to content

যিহূদিদের ইতিহাস: সারা ভারতবর্ষ এবং পৃথিবী ব্যাপী

  • by

ভারতবর্ষে যিহূদিদের এক দীর্ঘ ইতিহাস আছে, তারা সহস্রাধিক বছর ধরে এখানে থেকে, ভারতীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে মশি সংক্রান্ত একটি ছোট সম্প্রদায়কে গঠন করেছে I অন্য সম্প্রদায় সমূহের থেকে আলাদা (যেমন জৈন, শিখ, বৌদ্ধ সমূহ), যিহূদিরা তাদের ঘর তৈরী করতে মূলতঃ ভারতবর্ষের বাইরে থেকে এসেছিল I ২০১৭ সালের গ্রীষ্মে ভারতের প্রধান মন্ত্রী মোদির ইস্রায়েল ভ্রমণের ঠিক পূর্বে তিনি ইস্রায়েলের প্রধান মন্ত্রী নেতানিয়াহুর সাথে একটি সংযুক্ত ওপ-এড লিখলেন I যখন তারা লিখলেন তারা ভারতবর্ষে যিহূদিদের বসবাস হেতু আগমনকে স্বীকৃতি দিলেন I

ভারতবর্ষের যিহূদি সম্প্রদায়কে সর্বদা উষ্ণ এবং সম্মানের সাথে স্বাগত করা হয়েছিল এবং কখনও কোনো অত্যাচারের সম্মুখীন হয় নি I 

প্রকৃতপক্ষে, ভারতবর্ষের ইতিহাসের উপরে যিহূদিদের এক গভীর প্রভাব ছিল, ভারতীয় ইতিহাসের একগুঁয়ে রহস্যের সমাধান করে – কিভাবে লেখার উদয় হয়েছিল যেমন এটি ভারতে হয়েছিল? এই প্রশ্নের উত্তর ভারতীয় সংস্কৃতির সমস্ত

ভারতবর্ষের যিহূদি ইতিহাস

যদিও স্বতন্ত্র, তবুও যিহূদিরা পরম্পরাগত ভারতীয় পোশাক গ্রহণ করার দ্বারা মিশে গিয়েছিল I 

কত সময় ধরে যিহূদি সম্প্রদায় সমূহ ভারতবর্ষে রয়েছে? দি টাইমস অফ ইস্রায়েল সম্প্রতি একট নিবন্ধ প্রকাশিত করেছে যা লক্ষণীয় যে 27 শতাব্দীর পরে মনশি: উপজাতির (মনশিদের সন্তানরা) থেকে যিহূদিরা মিজোরাম থেকে ইস্রায়েলে ফিরছে I সেটি তাদের পূর্বপুরুষগণকে মূলতঃ 700 খ্রীষ্টপূর্বাব্দের আশেপাশে এখানে পৌঁছায় I তাদের তেলেগুভাষী আত্মীয় স্বজনদের কাছে যারা পার্সিয়া, আফগানিস্তান, তিব্বত এবং পরে চীনের মধ্য দিয়ে ঘুরে বেড়ানোর পরে যিহূদি উপজাতি ইফ্রয়িমের (ইফ্রয়িমের সন্তানরা) থেকে অন্ধ্রপ্রদেশে বাস করছে তাদের কাছে 1000 বছরের বেশি সময় ধরে ভারতে থাকার সম্মলিত এক স্মৃতি রয়েছে I কেরালার কোচিন যিহূদিরা প্রায় 2600 বছর ধরে সেখানে বাস করছে I শত শত বছর ধরে যিহূদিরা ভারতবর্ষ জুড়ে ছোট কিন্তু স্বতন্ত্র সম্প্রদায় সমূহ গঠন করেছিল I তবে এখন তারা ইস্রায়েলের জন্য ভারত্বর্শছেরে চলে যাচ্ছে I

কোচিনের যিহূদি সমাজগৃহের উপরে শিলালিপি I এটি সেখানে 300 বছর ধরে রয়েছে I

যিহূদিরা কিভাবে ভারতবর্ষে বসবাস করতে এসেছিল? এত দীর্ঘ সময় পরে তারা কেন ইস্রায়েলে ফিরে যাচ্ছে? অন্য কোনো জাতির চয়ে তাদের ইতিহাস সম্বন্ধে আমাদের কাছে অধিক তথ্য সমূহ আছে I একটি কালপঞ্জিকে ব্যবহার করে তাদের ইতিহাসকে সংক্ষিপ্তসার করতে আমরা এই তথ্যকে ব্যবহার করব I  

আব্রাহাম: যিহূদি পরিবারের আরম্ভ

আব্রাহামের সাথে কালপঞ্জি শুরু হয় I তাকে জাতি সমূহের এক প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল এবং তার সাথে ঈশ্বরের সাক্ষাতকার হয়েছিল যা তার পুত্র ইসহাকের প্রতীকাত্মক বলিদানের মধ্য দিয়ে শেষ হয় I এটি তার বলিদানের ভবিষ্যত স্থানকে চিহ্নিত করার দ্বারা যীশুর (যেশু সৎসংগ) প্রতি একটি সাঙ্কেতিক চিহ্ন ছিল I ইসহাকের পুত্রকে ঈশ্বরের দ্বারা ইস্রায়েল নামে অভিহিত করা হয়েছিল I মিসরে ইস্রায়েলের বংশধরদের দাস রূপে থাকার সময়টি  কালপঞ্জির মধ্যে সবুজের মধ্যে চলতে থাকে I এই সময়কাল আরম্ভ হয়েছিল যখন ইস্রায়েলের পুত্র যাকোব (বংশ্রক্রমটি ছিল: আব্রাহাম -> ইসহাক -> ইস্রায়েল  (এছাড়াও যাকোব রূপে পরিচিত) -> যোষেফ), ইস্রায়েলীয়দের মিসরে নিয়ে গেল, যেখানে পরবর্তী সময়ে তারা দাসে পরিণত হল I

ফরৌণের দাস রূপে মিসরে বসবাস 

মশি: ইস্রায়েলীয়রা ঈশ্বরের অধীনে এক জাতিতে পরিণত হ’ল

নিস্তারপর্ব মহামারীর সাহায্যে মশি ইস্রায়েলীয়দের নেতৃত্ব দিলেন, যা মিসরকে ধ্বংস করল এবং ইস্রায়েলীয়দের মিসর থেকে ইস্রায়েল দেশে নিয়ে এল I তার মৃত্যুর পূর্বে, মশি ইস্রায়েলীয়দের উপরে আশীর্বাদ এবং অভিশাপ ঘোষণা করলেন (যখন কালপঞ্জি সবুজ থেকে হলুদের দিকে যায়) I তারা আশির্বাদিত হবে যদি তারা ঈশ্বরের বাধ্য হয়, যদি তারা না করে তবে অভিশপ্ত হবে I ইস্রায়েলের ইতিহাস এই আশীর্বাদ এবং অভিশাপের কাছে পরে চিরকাল আবদ্ধ রইল I

শত শত বছর ধরে ইস্রায়েলীয়রা তাদের দেশে রইল তবে তাদের কাছে কোনো রাজা থাকলো না, নাতো তাদের কাছে যিরূশালেমের রাজধানী নগর থাকল – এই সময়ে এটি অন্য লোকেদের কাছে ছিল I যাইহোক ১০০০ খ্রীষ্টাব্দের আশে পাশে রাজা দায়ূদের সাথে এটির পরিবর্তন হ’ল I 
যিরূশালেম থেকে রাজা দায়ূদের শাসনের সাথে বসবাস

রাজা দায়ূদ যিরূশালেমে এক রাজকীয় বংশের স্থাপনা করেন 

দায়ূদ য়িরুশালেম জয় করে এটিকে তার রাজধানী নগর বানালেন I তিনি এক আসন্ন ‘খ্রীষ্টের’ প্রতিশ্রুতি পেলেন এবং সেই সময় থেকে যিহূদি জনগন খ্রীষ্টের আগমনের প্রতীক্ষা করল I তার পুত্র ধনবান এবং বিখ্যাত শলোমন তার উত্তরাধিকারী হলেন এবং যিরূশালেমর মধ্যে মোরিয়া পর্বতের উপরে প্রথম যিহূদি মন্দির নির্মাণ করলেন I দায়ূদের বংশধররা প্রায় 400 বছর ধরে শাসন করতে থাকল আর এই সময়কালকে ফেকাশে নীলবর্ণে দেখানো হয়েছে (1000 – 600 খ্রীষ্টপূর্বাব্দ) I এটি ইস্রায়েলের গৌরবের সময়কাল ছিল – তাদের কাছে প্রতিশ্রুত আশীর্বাদ সমূহ ছিল I তারা একটি শক্তিশালী জাতি ছিল; তাদের কাছে একটি উন্নত সমাজ, সংস্কৃতি, এবং তাদের মন্দির ছিল I তবে এছাড়াও  পুরনো নিয়ম এই সময়ে তাদের ক্রমবর্ধমান দুর্নীতির কথা বর্ণনা করে I এই সময়কালের মধ্যে অনেক ভাববাদী ইস্রায়েলীয়দের সতর্ক করেছিলেন যে যদি তাদের পরিবর্তন না হয় তবে মশির অভিশাপ সমূহ তাদের উপরে আসবে I এই সতর্কতা সমূহকে উপেক্ষা করা হয়েছিল I এই সময়কালের মধ্যে ইস্রায়েলীয়রা দুটি আলাদা রাজ্যে বিভক্ত হ’ল: ইস্রায়েল বা ইফ্রয়িমের উত্তরাঞ্চল রাজ্য, এবং যিহূদার দক্ষিণাঞ্চল রাজ্য (যেমন আজকের কোরিয়া, এক জনগণ দুটি দেশে বিভক্ত – উত্তর এবং দক্ষিন কোরিয়া) I

প্রথম যিহূদি নির্বাসন: অশুরিয়া এবং বাবিল 

অবশেষে, দুটি পর্যায়ে তাদের উপরে অভিশাপ সমূহ নেমে এলো I ৭২২ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে অশুরিয়রা উত্তরাঞ্চল রাজ্যকে ধ্বংস করল এবং ওই ইস্রায়েলীয়দের তাদের বিশাল সাম্রাজ্য জুড়ে গণ নির্বাসনে পাঠানো হল I মিজোরামের মনশি: সন্তানরা, অন্ধ্রপ্রদেশের ইফ্রয়িম সন্তানরা ওই নির্বাসিত ইস্রায়েলীয়দের বংশধর I পরে 586 খ্রীষ্টপূর্বাব্দে, একজন শক্তিশালী বাবিলোনিয়ান রাজা নবুখদনিৎসর এলেন – ঠিক যেমন মশি 900 বছর পূর্বে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যখন তিনি তার অভিশাপের মধ্যে লিখলেন: 

 ৪৯ সদাপ্রভু তোমার বিরুদ্ধে অতি দূর হইতে, পৃথিবীর প্রান্ত হইতে এক জাতিকে আনিবেন; যেমন ঈগল পক্ষী উড়িয়া আইসে, [সে সেইরূপ আসিবে]; সেই জাতির ভাষা তুমি বুঝিতে পারিবে না। 
৫০ সেই জাতি ভয়ঙ্কর-বদন, সে বৃদ্ধের মুখাপেক্ষা করিবে না, ও বালকের প্রতি কৃপা করিবে না। 
৫১ আর যে পর্য্যন্ত তোমার বিনাশ না হইবে, তাবৎ সে তোমার পশুর ফল ও তোমার ভূমির ফল ভোজন করিবে; যাবৎ সে তোমার বিনাশ সাধন না করিবে, তাবৎ তোমার জন্য শস্য, দ্রাক্ষারস কিম্বা তৈল, তোমার গোরুর বৎস কিম্বা তোমার মেষীর শাবক অবশিষ্ট রাখিবে না। 
৫২ আর তোমার সমস্ত দেশে যে সকল উচ্চ ও সুরক্ষিত প্রাচীরে তুমি বিশ্বাস করিতে, সে সকল যাবৎ ভূমিসাৎ না হইবে, তাবৎ সে তোমার সমস্ত নগর-দ্বারে তোমাকে অবরোধ করিবে; তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর দত্ত তোমার সমস্ত দেশে সমস্ত নগরদ্বারে সে তোমাকে অবরোধ করিবে।

দ্বিতীয় বিবরণ ২৮: ৪৯-৫২

নবুখদনিৎসর যিরূশালেম জয় করলেন, এটিকে পোড়ালেন, এবং শলোমনের দ্বারা নির্মিত মন্দিরকে ধ্বংস করলেন I এটি মশির ভবিষ্যদ্বাণী সমূহকে পূর্ণ করল যে

৬৩ আর তোমাদের মঙ্গল ও বৃদ্ধি করিতে যেমন সদাপ্রভু তোমাদের সম্বন্ধে আনন্দ করিতেন, সেইরূপ তোমাদের বিনাশ ও লোপ করিতে সদাপ্রভু তোমাদের সম্বন্ধে আনন্দ করিবেন; এবং তুমি যে দেশ অধিকার করিতে যাইতেছ, তথা হইতে তোমরা উন্মূলিত হইবে।
৬৪ আর সদাপ্রভু তোমাকে পৃথিবীর এক প্রান্ত হইতে অপর প্রান্ত পর্য্যন্ত সমস্ত জাতির মধ্যে ছিন্নিভন্ন করিবেন; সেই স্থানে তুমি আপনার ও আপন পিতৃপুরুষদের অজ্ঞাত অন্য দেবগণের, কাষ্ঠ ও প্রস্তরের, সেবা করিবে।

দ্বিতীয় বিবরণ ২৮:৬৩-৬৪
পরাজিত এবং বাবিলে নির্বাসিত হ’ল I

কেরালার কোচিনের যিহূদিরা এই নির্বাসিত ইস্রায়েলীয়দের বংশধর সমূহ ছিল I 70 বছর ধরে, সময়কালটিকে লালের মধ্যে দেখানো হয়েছে, এই ইস্রায়েলীয়দের (বা যিহূদিরা যেমন তাদেরকে এখন ডাকা হয়) দেশের বাইরে নির্বাসিত করা হয়েছিল যা আব্রাহাম এবং তার বংশধরদের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল I

ভারতীয় সমাজে যিহূদি’র অবদান

 আমরা লেখার প্রশ্নটিকে তুলি যেটি ভারতবর্ষে উদিত হয়েছিল   I ভারতবর্ষের আধুনিক ভাষা সমূহকে তৎসহ হিন্দি, বাঙালি, মারাঠি, গুজরাতি তেলেগু, কান্নাড়, মালায়ালাম এবং তামিলের পাশাপাশি প্রাচীন সংস্কৃত যার মধ্যে ঋক বেদ এবং অন্যান্য সনাতন সাহিত্য লেখা হয়েছিল ব্রাহ্মিক লিপি সমূহ  বলে শ্রেণীভুক্ত করা হয় I যেহেতু এরা সবাই ব্রাহ্মীলিপি  নাম পরিচিত একটি পৈতৃক লিপি থেকে অবতীর্ণ হয় I ব্রাহ্মীলিপিকে অশোকের সাম্রাজ্যের সময়্কাল থেকে কেবলমাত্র কিছু প্রাচীন মুহুর্তে দেখা যায় I

অশোকের স্তম্ভের উপরে ব্রাহ্মীলিপি (250 খ্রীষ্টপূর্বাব্দ)

যদিও বোঝা যায় ব্রাহ্মীলিপি কিভাবে এই আধুনিক ভাষা সমূহে পরিবর্তিত হয়, তবে যেটি স্পষ্ট নয় তা হ’ল ভারতবর্ষ প্রথমে কিভাবে ব্রাহ্মীলিপিকে গ্রহণ করল I পন্ডিতগণ লক্ষ্য করেন যে ব্রাহ্মীলিপি হিব্রু-ফৈনিকী লিপির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত, যেটি সেই লিপি ছিল যাকে ইস্রায়েলের যিহূদিদের দ্বারা তাদের নির্বাসন এবং ভারতবর্ষে আগমন কালে ব্যবহৃত হয়েছিল I ঐতিহাসিক ডা. অভিগদর সাচন (1) প্রস্তাব দেন যে ভারতে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী নির্বাসিত ইস্রায়েলীয়রা তাদের সঙ্গে করে হিব্রু-ফৈনিকীকে নিয়ে এসেছিল – যা ব্রাহ্মীলিপিতে পরিণত হয়েছিল I এছাড়াও এটি এই রহস্যের সমাধান করে কিভাবে ব্রাহ্মীলিপি এর নাম পেল I এটি কি শুধুমাত্র কাকতলীয় ঘটনা যে ব্রাহ্মীলিপি সেই একই সময়ে উত্তর ভারতে দেখা যায় যখন তাদের পৈতৃক ভূমি, আব্রাহামের দেশ থেকে নির্বাসনের মধ্যে আসা যিহূদিরা সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করে? স্থানীয় নিবাসিগণ যারা আব্রাহামের বংশধরদের লিপিকে গ্রহণ করল তারা এটিকে (A) ব্রাহ্মীলিপি নাম দিল I আব্রাহামের ধর্ম ছিল একেশ্বরবাদ, যার ভূমিকা সীমিত নয় I তিনি প্রথম, শেষ এবং অনন্তকালীন I সম্ভবতঃ এই জন্যই সেখানে (A) ব্র্হ্মার ধর্মের থেকে, ব্র্হ্মায় বিশ্বাসের আরম্ভ হ’ল I যিহূদিরা, তাদের লিপি এবং ধর্মকে ভারতবর্ষে আনার মাধ্যমে অনেক আক্রমনকারীদের তুলনায় যারা তাকে জয় করতে ও শাসন করতে চেয়েছিল এর চিন্তাধারা এবং ইতিহাসকে আরও অধিক মৌলিকভাবে রূপ দিল I এবং হিব্রু বেদার, মূলতঃ হিব্রু-ফৈনিকী/ব্রাহ্মীলিপিতে আসন্ন একজনের সম্বন্ধে এর থিম রয়েছে, যা সংস্কৃত ঋক বেদের আসন্ন পুরুসার থিমের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ I তবে আমরা তাদের পৈতৃক ভূমির থেকে তাদের নির্বাসনের পরে আরব প্রাচ্যে যিহূদিদের ইতিহাসে ফিরি I

পারস্যের অধীনে নির্বাসন থেকে প্রত্যাবর্তন

তার পরে, পার্সিয়ান সম্রাট কোরস বাবিলকে জয় করলেন এবং কোরস বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যক্তি হলেন I তিনি যিহূদিদের তাদের দেশে ফেরার অনুমতি দিলেন I

পারস্য সাম্রাজ্যের অংশ হিসাবে দেশে বাস বসবাস 

যাইহোক তারা আর স্বতন্ত্র দেশ রইল না,তারা এখন পারস্য সাম্রাজ্যের মধ্যে একটি প্রদেশ ছিল I এটি 200 বছর ধরে চলতে থাকল এবং কালপঞ্জির গোলাপির মধ্যে রয়েছে I এই সময়ের মধ্যে যিহূদি মন্দির (দ্বিতীয় মন্দির রূপে পরিচিত) এবং য়িরুশালেম নগরকে পুনর্নির্মাণ করা হল I যদিও যিহূদিদের ইস্রায়েলে ফেরার অনুমতি দেওয়া হ’ল, তবুও অনেকে বিদেশের নির্বাসনে রয়ে গেল I

গ্রীকদের সময়কাল 

মহান আলেক্সান্ডার পারস্য সাম্রাজ্য জয় করল এবং গ্রীক সাম্রাজ্যের মধ্যে আরও 200 বছর ধরে ইস্রায়েলকে এক প্রদেশ পরিণত করল I এটিকে গাড় নীলের মধ্যে দেখানো হয়েছে I 

গ্রীক সাম্রাজ্যের অংশ হিসাবে দেশে বসবাস 

রোমীয়দের সময়কাল 

পরে রোমীয়রা গ্রীক সাম্রাজ্যকে পরাস্ত করল এবং তারা পৃথিবীতে প্রভাবী শক্তিতে পরিণত হ’ল I যিহূদিরা পুনরায় এই সাম্রাজ্যের মধ্যে এক প্রদেশে পরিণত হ’ল এবং এটিকে হাল্কা হলুদে দেখানো হয়েছে I এটাই হল সময় যখন যীশু বেঁচে ছিলেন I এটা ব্যাখ্যা করে কেন রোমীয় সৈন্যরা সুসমাচারের মধ্যে আছে – কারণ রোমীয়রা যীশুর জীবনকালে যিহূদিদের শাসন করত I 

রোমীয় সাম্রাজ্যের অংশ হিসাবে দেশে বসবাস 

রোমীয়দের অধীনে দ্বিতীয় যিহূদি নির্বাসন 

বাবিলোনিয়ানের সময়কাল থেকে (৫৮৬ খ্রীষ্টপূর্বাব্দ) যিহূদিরা রাজা দায়ূদের অধীনে থাকার মতন স্বতন্ত্র ছিল ছিল না I তারা অন্যান্য সাম্রাজ্য সমূহের দ্বারা শাসিত হয়েছিল, ঠিক যেভাবে ব্রিটিশ স্বাধীনতার পূর্বে ভারতবর্ষকে শাসন করেছিল I যিহূদির এতে অসন্তুষ্ট ছিল এবং তারা রোমীয় শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করল I রোমীয়রা এসে যিরূশালেমকে ধ্বংস করল (৭০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দ), দ্বিতীয় মন্দিরকে পুড়িয়ে দিল, এবং সারা রোমীয় সাম্রাজ্য জুড়ে যিহূদিদের দাস হিসাবে নির্বাসিত করল I এটি দ্বিতীয় যিহূদি নির্বাসন ছিল I যেহেতু রোমীয় সাম্রাজ্য বিশাল বড় ছিল সেইহেতু যিহূদিরা অবশেষে সমস্ত পৃথিবীর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল I

রোমীয়দের দ্বারা ৭০ খ্রীষ্টাব্দে যিরূশালেম এবং মন্দিরকে ধ্বংস করা হ’ল; যিহূদিদের বিশ্ব জুড়ে নির্বাসনে পাঠানো হ’ল 

এইভাবে যিহূদি লোকেরা প্রায় ২০০০ বছর ধরে বাস করল; বিদেশী ভুমিতে ছত্ত্রভঙ্গ হয় এবং এই দেশগুলোতে কখনও স্বীকৃত হ’ল না I এই বিভিন্ন জাতি সমূহের মধ্যে যিহূদিরা মহা অত্যাচার ভোগ করল I যিহূদিদের উপরে অত্যাচার  ইউরোপের মধ্যে বিশেষভাবে সত্য ছিল I পাশ্চাত্য ইউরোপের স্পেন থেকে নিয়ে, রাশিয়া পর্যন্ত যিহূদিরা প্রায়শই এই সমস্ত রাজ্য সমূহের মধ্যে বিপজ্জনক পরিস্থিতির মধ্যে বাস করত I যিহূদিরা এই সমস্ত অত্যাচার থেকে অব্যাহতি পেতে কোচিনে পৌঁছতে লাগল I মধ্য প্রাচ্য থেকে যিহূদিরা

ডেভিড স্যাসন এবং পুত্রগণ – ভারতবর্ষের ধনবান বাগদাদী যিহূদিরা

ভারতবর্ষের অন্যান্য অংশে সপ্তদশ এবং অষ্টাদশ শতাব্দীতে পৌঁছাল, এবং বাগদাদী যিহূদি রূপে পরিচিত হ’ল, অধিকাংশ মুম্বাই, দিল্লী এবং কলকাতায় স্থায়ীভাবে বাস করতে থাকল I 1500 খ্রীষ্টপূর্বাব্দের অতীতে মশির অভিশাপ সমূহে তাদের জীবন যাত্রা সম্বন্ধে সঠিক বর্ণনা ছিল I

৬৫ আর তুমি সেই জাতিগণের মধ্যে কিছু সুখ পাইবে না, ও তোমার পদতলের জন্য বিশ্রামস্থান থাকিবে না, কিন্তু সদাপ্রভু সেই স্থানে তোমাকে হৃৎকম্প, চক্ষুর ক্ষীণতা ও প্রাণের শুষ্কতা দিবেন।

দ্বিতীয় বিবরণ ২৮:৬৫

ইস্রায়েলীয়দের বিরুদ্ধে অভিশাপ সমূহকে দেওয়া হয়েছিল লোকেদের জিজ্ঞাসা করতে:

২৪ সকল জাতি বলিবে, সদাপ্রভু এ দেশের প্রতি কেন এমন করিলেন? এরূপ মহাক্রোধ প্রজ্বলিত হইবার কারণ কি?

দ্বিতীয় বিবরণ ২৯:২৪

এবং উত্তর দিতে:

২৫ তখন লোকে বলিবে, কারণ এই, তাহাদের পিতৃপুরুষদের ঈশ্বর সদাপ্রভু মিসর দেশ হইতে সেই পিতৃপুরুষদিগকে বাহির করিয়া আনিবার সময়ে তাহাদের সহিত যে নিয়ম স্থির করেন, সেই নিয়ম তাহারা ত্যাগ করিয়াছিল; 
২৬ আর গিয়া অন্য দেবগণের সেবা করিয়াছিল, যে দেবগণকে তাহারা জানিত না, যাহাদিগকে তিনি তাহাদের জন্য নিরূপণ করেন নাই, সেই দেবগণের কাছে প্রণিপাত করিয়াছিল; 
২৭ তাই এই পুস্তকে লিখিত সমস্ত শাপ দেশের উপর আনিতে এই দেশের বিরুদ্ধে সদাপ্রভুর ক্রোধ প্রজ্বলিত হইল, 
২৮ এবং সদাপ্রভু ক্রোধে, রোষে ও মহাকোপে তাহাদিগকে তাহাদের দেশ হইতে উৎপাটনপূর্ব্বক অন্য দেশে নিক্ষেপ করিয়াছেন, যেমন অদ্য দেখা যাইতেছে।

দ্বিতীয় বিবরণ ২৯ :২৫-২৮

নিচের কালপঞ্জি এই ১৯০০ বছরের সময়কালকে দেখায় I এই সময়কালকে এক দীর্ঘ লাল বারের মধ্যে দেখানো হয়েছে I

বৃহত্তর স্কেলের উপরে যিহূদিদের ঐতিহাসিক কালপঞ্জি – নির্বাসনের দুটি সময়কালের বৈশিষ্ট্যকে দেখায়

আপনারা দেখতে পারেন যে তাদের ইতিহাসের মধ্যে যিহূদি লোকেরা নির্বাসনের দুটি সময়কালের মধ্য দিয়ে গমন করেছিল তবে দ্বিতীয় নির্বাসনটি প্রথম নির্বাসনের চেয়ে অনেক দীর্ঘ ছিল I

বিংশ শতাব্দীর গণহত্যা 

যিহূদিদের বিরুদ্ধে অত্যাচার শীর্ষে উঠল যখন হিটলার, নাৎসী জার্মানির মাধ্যমে, ইউরোপে বসবাসকারী সমস্ত যিহূদিদের নির্মূল করার চেষ্টা করল I সে প্রায় সফল হ’ল তবে সে পরাজিত হ’ল এবং যিহূদিদের এক অবশিষ্টাংশ জীবিত রইল I 

ইস্রায়েলের আধুনিক পুনর্জনম 

ঘটনা যে সেখানে এমন লোক ছিল যাদের সহস্রাধিক বছর পরে একটি গৃহভূমি হীন ‘যিহূদি’ হিসাবে স্ব-চিহ্নিত থাকা উল্লেখযোগ্য ছিল I তবে এটি 3500 বছর পূর্বে লেখা মশির চূড়ান্ত বাক্য সমূহকে সত্যে পরিণত হতে অনুমতি দিল I 1948 সালে পৃথিবী, সংযুক্ত রাষ্ট্র সমূহের মাধ্যমে, ইস্রায়েলের আধুনিক রাষ্ট্রের অভূতপূর্ব পুনর্জন্ম দেখল, যেমন মশি বহু শতাব্দী পূর্বে লিখে গিয়েছিলেন:

৩ তবে তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমার বন্দিত্ব ফিরাইবেন, তোমার প্রতি করুণা করিবেন, ও যে সকল জাতির মধ্যে তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাকে ছিন্নভিন্ন করিয়াছিলেন, তথা হইতে আবার তোমাকে সংগ্রহ করিবেন.
৪ যদ্যপি তোমরা কেহ দূরীকৃত হইয়া আকাশমণ্ডলের প্রান্তে থাক, তথাপি তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তথা হইতে তোমাকে সংগ্রহ করিবেন, ও তথা হইতে লইয়া আসিবেন। 
৫ আর তোমার পিতৃপুরুষেরা যে দেশ অধিকার করিয়াছিল, তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু সেই দেশে তোমাকে আনিবেন, ও তুমি তাহা অধিকার করিবে, এবং তিনি তোমার মঙ্গল করিবেন, ও তোমার পিতৃপুরুষদের অপেক্ষাও তোমার বৃদ্ধি করিবেন।

দ্বিতীয় বিবরণ ৩০:৩-৫

এছাড়াও এটি আরও উল্লেখযোগ্য ছিল যেহেতু এই রাষ্ট্রটি প্রবল বিরোধিতা স্বত্তেও প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল I ১৯৪৮ … ১৯৫৬ …১৯৬৭ এবং পুনরায় ১৯৭৩ সালে চারিদিকের জাতিগুলোর অধিকাংশ ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করল I একটি অত্যন্ত ক্ষুদ্র জাতি ইস্রায়েল, মাঝে মাঝে একই সময়ে পাঁচটি জাতির সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত ছিল I তথাপি না কেবল ইস্রায়েল জীবিত থাকল, বরং তার এলাকা বৃদ্ধি পেল I ৩০০০ বছর পূর্বে দায়ূদের দ্বারা স্থাপিত তার ঐতিহাসিক রাজধানী নগর যিরূশালেমকে 1967 সালে ছয় দিনের যুদ্ধে, ইস্রায়েল পুনরায় অর্জন   করল I ইস্রায়েল রাষ্ট্র গঠনের পরিণাম, এবং এই যুদ্ধগুলোর থেকে উৎপন্ন  ফলাফলগুলো আমাদের আজকের বিশ্বে সবচেয়ে জটিল রাজনৈতিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে I 

মশির দ্বারা যেমনভাবে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল এবং আরও সম্পূর্ণরূপে এখানে অনুসন্ধান করা হল, ইস্রায়েলের পুনর্জন্ম ভারতের যিহূদিদের জন্য ইস্রায়েলে ফিরে যাওয়ার এক উদ্দীপনা সৃষ্টি করল I ইস্রায়েলে এখন ৮০,০০০ যিহূদি বাস করছে যাদের ভারতের থেকে একজন পিতা আছে এবং কেবলমাত্র ৫০০০ যিহূদি ভারতে পড়ে আছে I মুসার আশীর্বাদ অনুসারে তারা ‘দূরবর্তী দেশ সমূহ’ (যেমন মিজোরাম) থেকে ‘একত্রিত’ হচ্ছে এবং ‘ফিরিয়ে’ আনা হচ্ছে I মুসা লিখেছিলেন যে যিহূদি এবং অ-যিহূদি উভয়েরই এই তাৎপর্যগুলোকে লক্ষ্য করা উচিত I

(1) ডা: অভিগদর সাচান I হারিয়ে যাওয়া দশ উপজাতির পদক্ষেপের মধ্যে পৃষ্ঠা 261

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *