বিশেষভাবে মহাভারত নি:সন্তান রাজা পান্ডুর সংঘর্ষের বিবরণ দেয় যার কোনো উত্তরাধিকারী ছিল না I ঋষি কিন্ডামা এবং তার স্ত্রী বিচক্ষণতার সঙ্গে প্রেম করার জন্য হরিণের রূপ ধারণ করেছিলেন I দুর্ভাগ্যক্রমে রাজা পান্ডু সেই সময়ে শিকার করছিলেন এবং দুর্ঘটনাক্রমে তাদের উপরে তীর নিক্ষেপ করেছিলেন I ক্ষুব্ধ হয়ে, কিন্ডামা পরবর্তী সময়ে তার স্ত্রীদের সঙ্গে সহবাস করার সময়ে রাজা পাণ্ডুকে মারা যাওয়ার জন্য অভিশাপ দিয়েছিলেন I এইরূপে রাজা পান্ডুকে কোন সন্তান এবং উত্তরাধিকারী পাওয়ার থেকে বিরত রাখা হয়েছিল I কিভাবে তার রাজ বংশের প্রতি এই হুমকি কাটিয়ে উঠবেন?
পূর্ববর্তী প্রজন্মের সেই একই ধরণের সমস্যার সমাধানের জন্য রাজা পাণ্ডুর জন্ম স্বয়ং একটি বেপরোয়া কার্য ছিল I পূর্ববর্তী রাজা, বিচিত্রবীর্য নি:সন্তান হয়ে মারা যান আর তাই একজন উত্তরাধিকারীর প্রয়োজন ছিল I বিচিত্রবীর্যর মা সত্যবতীর বিচিত্রবীর্যর পিতা রাজা শান্তনুর সাথে বিবাহের পূর্বে এক পুত্র ছিল I এই পুত্র, ব্যাসকে বিচিত্রবীর্যর বিধবা পত্নী অম্বিকা এবং অম্বালিকার গর্ভ সঞ্চার করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল I ব্যাস এবং আম্বালিকার মিলনের মধ্য দিয়ে পান্ডু জন্মগ্রহণ করলেন I রাজা পাণ্ডু এইরূপে ব্যাসের জৈবিক পুত্র হলেন বরং পূর্ববর্তী রাজা বিচিত্রবীর্যর উত্তরাধিকারী হলেন নিয়োগের মাধ্যমে, এমন একটি অনুশীলন যেখানে একজন প্রতিনিধি পুরুষ এক সন্তানের পিতা হতে পারে যখন স্বামী মারা যায় I দুর্দান্ত প্রয়োজন বেপরোয়া পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিল I
এখন রাজা পাণ্ডু তার উপরে কিন্ডামার শ্রাপ থাকার কারণে একই সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন I কি করা যায়? আর একবার বেপরায়া পদক্ষেপের প্রয়োজন হ’ল I পান্ডুর স্ত্রীদের মধ্যে একজন, রানী কুন্তি (বা প্রার্থা), একজন দেবতার দ্বারা তার গর্ভ সঞ্চারের সম্বন্ধে একটি গুপ্ত মন্ত্র জানতেন (ব্রাহামনা দুর্বাসা দ্বারা তার শৈশবকালে প্রকাশিত হয়েছিল) I সুতরাং কুন্তি তিনজন জৈষ্ঠ্য পান্ডব ভাইদের গর্ভ ধারণ করতে এই গুপ্ত মন্ত্র ব্যবহার করলেন: যুধিষ্ঠির, ভীম এবং অর্জুন I রানী কুন্তির সহ-পত্নী রানী মাদ্রী কুন্তির থেকে এই মন্ত্রটি পেয়েছিলেন, এবং তিনি একইভাবে কনিষ্ঠ পান্ডব ভাই নকুল ও সহদেবের জন্ম দিলেন I
অবশিষ্ট সন্তান হীনতা দম্পতিদের কাছে দুর্দান্ত দুঃখ নিয়ে আসতে পারে I জাতির জন্য একজন উত্তরাধিকারী যখন বিপন্ন হয় তখন এটি এমনকি সহ্য করা আরও কঠিন হতে পারে I সারোগেট অংশীদারদের সন্ধান করা হোক বা দেবতাদের গতিশীল করতে গোপন মন্ত্রগুলো আহ্বান করা হোক না কেন, এই ধরণের পরিস্থিতিতে নিষ্ক্রিয় থাকা প্রায় কোন বিকল্প হয় I
ভাববাদী আব্রাহাম 4000 বছর পূর্বে একই পরিস্থিতির সম্মুখীন হলেন I যে উপায়ে তিনি সমস্যার সমাধান করলেন তাকে হিব্রু বেদা পুস্তকম এক আদর্শ রূপে ব্যবহার করেছে তাই এর থেকে শিখতে আমরা বুদ্ধিমান হব I
আব্রাহামের অভিযোগ
আদিপুস্তকের ১২ পদে প্রতিশ্রুতি নথিভুক্ত হওয়ার কথা বলার পর থেকে আব্রাহামের জীবনের অনেকগুলো বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেল I আব্রাহাম প্রতিশ্রুত দেশে অগ্রসর হলেন যার মধ্যে সেই প্রতিশ্রুতির বাধ্যতা অনুসারে আজকের ইস্রায়েল রয়েছে I পরে তার জীবনে অন্যান্য ঘটনা সমূহ ঘটল কেবল বিশেষ একটি ছাড়া যার জন্য তিন আশা করেছিলেন – পুত্রের জন্ম যার মাধ্যমে এই প্রতিশ্রুতিটি পূর্ণ হবে I সুতরাং আব্রাহামের অভিযোগের সাথে বিবরণটি চালিয়ে যাই:
১ ঐ ঘটনার পরে দর্শনযোগে সদাপ্রভুর বাক্য অব্রামের নিকটে উপস্থিত হইল, তিনি বলিলেন, অব্রাম, ভয় করিও না, আমিই তোমার ঢাল ও তোমার মহা পুরস্কার।
আদিপুস্তক ১৫: ১-৩
২ অব্রাম কহিলেন, হে প্রভু সদাপ্রভু, তুমি আমাকে কি দিবে? আমি ত নিঃসন্তান হইয়া প্রয়াণ করিতেছি, এবং এই দম্মেশকীয় ইলীয়েষর আমার গৃহের ধনাধিকারী।
৩ আর অব্রাম কহিলেন, দেখ, তুমি আমাকে সন্তান দিলে না, এবং আমার গৃহজাত এক জন আমার উত্তরাধিকারী হইবে।
ঈশ্বরের প্রতিশ্রুতি
আব্রাহাম জমির মধ্যে শিবির রচনা করছিলেন ‘মহান জাতির’ আরম্ভের অপেক্ষায় যার তাকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল I কিন্তু কোনো পুত্র জন্মাল না আর এই সময়ের মধ্যে তার বয়স প্রায় 86 বছর হোল, যা তার অভিযোগের ফোকাস হ’ল:
৪ তখন দেখ, তাঁহার কাছে সদাপ্রভুর বাক্য উপস্থিত হইল, যথা, ঐ ব্যক্তি তোমার উত্তরাধিকারী হইবে না, কিন্তু যে তোমার ঔরসে জন্মিবে, সেই তোমার উত্তরাধিকারী হইবে।
আদিপুস্তক ১৫:৪-৫
৫পরে তিনি তাঁহাকে বাহিরে আনিয়া কহিলেন, তুমি আকাশে দৃষ্টি করিয়া যদি তারা গণিতে পার, তবে গণিয়া বল; তিনি তাঁহাকে আরও বলিলেন, এইরূপ তোমার বংশ হইবে।
তাদের বিনিময়ের মধ্যে ঈশ্বর তাঁর প্রতিশ্রুতির নবীকরণ করলেন ঘোষণার দ্বারা যে আব্রাহাম একটি পুত্র পাবে যে আকাশের অগণিত তারার মতন এক বংশ হবে – নিশ্চিতভাবে অনেক, কিন্তু গণনা করা কঠিন I
আব্রাহামের প্রতিক্রিয়া: স্থায়ী প্রভাবের সাথে একটি পূজার মতন
বলটি এখন আব্রাহামের দায়িত্বে ছিল I কিভাবে তিনি এই নুতন প্রতিশ্রুতির প্রতি সাড়া দেবেন? অনুসৃতটি বাইবেলের দ্বারা একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাক্য বলে বিবেচিত হয় I এটি অনন্তকালীন সত্যকে বুঝতে একটি ভিত্তি স্থাপন করে I এটি বলে:
৬ তখন তিনি সদাপ্রভুতে বিশ্বাস করিলেন, আর সদাপ্রভু তাঁহার পক্ষে তাহা ধার্ম্মিকতা বলিয়া গণনা করিলেন।
আদিপুস্তক ১৫:৬
এই বাক্যটি বুঝতে সহজ হয় আমরা যদি পড়তে গিয়ে, সর্বনামটিকে নামের সাথে বদল করি:
আব্রাহাম সদাপ্রভুতে বিশ্বাস করলেন, আর সদাপ্রভু আব্রাহামের স্বপক্ষে তা ধার্মিকতা বলে গণনা করলেন
আদিপুস্তক 15:6
এটি এক ধরণের একটি ক্ষুদ্র এবং সুস্পষ্ট বাক্য I এটি খবরের কোনো শিরোনাম ছাড়া আসে এবং যায় আর তাই আমরা এটিকে হারিয়ে ফেলতে পারি I কিন্তু এটি সত্যই তাৎপর্যপূর্ণ I কেন? কারণ এই ক্ষুদ্র বাক্যে আব্রাহাম ‘ধার্মিকতা’ পায় I এটি পূজা করার একটি যোগ্যতা পাওয়ার মতন হয় যা কোনো দিন অবনতি বা বিনষ্ট হবে না I ধার্মিকতা একটি – এবং একমাত্র – যোগ্যতা যা আমাদের ঈশ্বরের সম্মুখে দাঁড়াবার জন্য প্রয়োজন হয় I
আমাদের সমস্যার পর্যালোচনা: বিকৃতি
ঈশ্বরর দৃষ্টি থেকে, যদিও আমাদেরকে ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে সৃষ্টি করা হয়েছিল কিন্তু এমন কিছু ঘটল যা সেই প্রতিমুর্তিকে বিকৃত করল I এখন রায় হল যে
২ সদাপ্রভু স্বর্গ হইতে মনুষ্য-সন্তানদের প্রতি নিরীক্ষণ করিলেন; দেখিতে চাহিলেন, বুদ্ধিপূর্ব্বক কেহ চলে কি না, ঈশ্বরের অন্বেষণকারী কেহ আছে কি না।
গীতসংহিতা ১৪:২-৩
৩ সকলে বিপথে গিয়াছে, সকলেই বিকারপ্রাপ্ত হইয়াছে; সৎকর্ম্ম করে, এমন কেহই নাই, এক জনও নাই।
সহজাতভাবে আমরা এই বিকৃতির আভাস পাই I এইজন্যই কুম্ভমেলা পর্বে, এত বিশাল উপস্থিতি হয় কারণ আমরা আমাদের পাপের আভাস এবং সুচিশুদ্ধ হওয়ার প্রয়োজন পাই I এছাড়া প্রাত: স্নান: (বা প্রাতস্নান) মন্ত্র এই মতবাদকে প্রকাশ করে যা আমাদের নিজেদের সম্বন্ধে আমাদের কাছে আছে:
আমি একজন পাপী I আমি পাপের ফল I আমার জন্ম পাপের মধ্যে I আমার প্রাণ পাপের মধ্যে I আমি পাপীদের মধ্যে সবথেকে খারাপ I হে প্রভু যার সুন্দর নয়ন যুগল আছে, আমাকে রক্ষা করুন, হে বলিদানের প্রভু I
আমাদের বিকৃতির পরিণাম হ’ল যে আমরা আমাদেরকে এক ধার্মিকতার ঈশ্বরের থেকে বিচ্ছিন্নতায় পাই I আমাদের বিকৃতি আমাদের নকারাত্মক কর্মের বৃদ্ধি – নিষ্ফলতা এবং মৃত্যু এর প্রাক্কালে আছে I আপনি যদি সন্দেহ করেন তাহলে কেবল কিছু খবরের শিরোনামে চোখ বুলিয়ে দেখুন বিগত ২৪ ঘন্টায় লোকেদের কি হয়েছে I আমরা জীবনের সৃষ্টিকতার থেকে বিচ্ছিন্ন এবং তাই বেদা পুস্তকমের (বাইবেল) ভাববাদী যিশাইয়র কথাগুলো সত্য হয় I
আমরা ত সকলে অশুচি ব্যক্তির সদৃশ হইয়াছি, আমাদের সর্ব্বপ্রকার ধার্ম্মিকতা মলিন বস্ত্রের সমান; আর আমরা সকলে পত্রের ন্যায় জীর্ণ হই, আমাদের অপরাধ সকল বায়ুর ন্যায় আমাদিগকে উড়াইয়া লইয়া যায়।
যিশাইয় ৬৪:৬
আব্রাহাম এবং ধার্মিকতা
কিন্তু এখানে আব্রাহাম এবং ঈশ্বরের মধ্যে আমরা ঘোষণাটিকে দেখি যার ফলে আব্রাহাম ‘ধার্মিকতা’ লাভ করেন, সেটি এত নিস্তব্ধভাবে পিছলে যায় যে আমরা প্রায় এটিকে হারিয়ে ফেলি, – যে ধরণটিকে ঈশ্বর স্বীকার করেন I সুতরাং আব্রাহাম এই ধার্মিকতা পেতে কি করলেন? আর একবার, তাই সতর্ক হোন যে আমরা বিষয়টিকে হারাবার বিপদের মধ্যে আছি I এটি কেবল আব্রাহামের সম্বন্ধে বলে যে তিনি ‘বিশ্বাস করেছিলেন’ I ব্যাস এটাই?! আমাদের কাছে পাপ ও বিকৃতির এই দুর্জয় সমস্যা আছে এবং তাই আমাদের স্বাভাবিক প্রবণতা যুগ যুগ ধরে সূক্ষ এবং কঠিন ধর্ম, প্রচেষ্টা, পূজা, নীতিশাস্ত্র তপস্বীর নিয়মানুবর্তিতা, শিক্ষা সমূহ ইত্যাদির খোঁজ করে – ধার্মিকতা লাভ করতে I কিন্তু এই লোকটি, আব্রাহাম শুধুমাত্র ‘বিশ্বাসের’ দ্বারা সেই পুরষ্কৃত ধার্মিকতা লাভ করলেন I এটি এত সরল যে আমরা প্রায় এটিকে হারিয়ে ফেলতে পারি I
আব্রাহাম ধার্মিকতা ‘অর্জন’ করেন নি: এটি তার উদ্দেশ্যে ‘জমা করা’ হয়েছিল I তাহলে পার্থক্য কি? ভালো কথা, যদি কোনো কিছু ‘অর্জন’ করা হয় অর্থাৎ আপনি এর জন্য কাজ করেছেন – আপনার এটি প্রাপ্য I এটি আপনার কাজের জন্য বেতন পাওয়ার মতন I কিন্তু যখন কোনো কিছু আপনার উদ্দেশ্যে জমা করা হয়, এটি আপনাকে দেওয়া হয় I যেমন কোনো উপহার বিনামূল্যে দেওয়া হয় এটি অর্জিত বা প্রাপ্য নয়, বরং শুধুমাত্র পাওয়া I
আব্রাহামের এই বিবরণ ধার্মিকতা সম্বন্ধে আমাদের সাধারণ উপলব্ধিকে পাল্টে দেয় যে হয় ঈশ্বরের অস্তিত্বের উপরে একটি বিশ্বাসের থেকে এটি আসে চিন্তাটির দ্বারা, বা প্রচুর পরিমাণে উত্তম বা ধার্মিক ক্রিয়াকলাপের দ্বারা ধার্মিকতাকে অর্জন করা যায় I এটি সেই পথ নয় যা আব্রাহাম গ্রহণ করেছিলেন I তিনি শুধুমাত্র তার প্রতি প্রসারিত প্রতিশ্রুতিটিকে বিশ্বাস করলেন, আর তখন তার উদ্দেশ্যে জমা করা হ’ল বা দেওয়া হল, ধার্মিকতা I
বাইবেলের অবশিষ্টাংশ এই সাক্ষাৎকারকে আমাদের জন্য একটি চিহ্ন রূপে বিবেচনা করে I আব্রাহামের বিশ্বাস ঈশ্বরের প্রতিশ্রুতিতে, আর পরিণামস্বরূপ ধার্মিকতার গণনা, আমাদের অনুসরণ করার একটি নমুনা I সমগ্র সুসমাচারটি প্রতিশ্রুতি সমূহের উপরে প্রতিষ্ঠিত যা ঈশ্বর আমাদের প্রত্যেককে দিয়েছেন I
কিন্তু তাহলে ধার্মিকতা কে প্রদান করে বা অর্জন করে? আমরা এটিকে পরবর্তী পর্যায়ে গ্রহণ করব I